কক্সবাজার থেকে: টিউব লাইটের শুভ্র আলোয় আলোকিত গোটা ঘর। ফ্যানও ঘুরছে।
সবে সন্ধ্যা সাতটা। কিন্তু জানালায় চোখ রেখেই নিশ্চিত হওয়া গেলো কেউই নেই ঘরের ভেতরে। বেশ কিছু সময় অপেক্ষার পর চলে আসতে গিয়েই দেখা গেলো-কেউ একজন আসছেন।
যিনি এলেন তার নাম দুলাল দাস। কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র অবজারভার তিনি। জানালেন, সহকারী আবহাওয়াবিদ প্রধান ব্যক্তি এই অফিসের। বর্তমানে আবহাওয়াবিদের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
টেবিলের ওপরে প্রতি ঘণ্টায় নেওয়া রেকর্ড চার্ট বিছিয়ে আবহাওয়া বিষয়ে কথা বলতে থাকলেন দুলাল। বায়ুচাপ, হাওয়া, আর্দ্রতা, তাপ ইত্যাদির সমন্বয়ে আবহাওয়ার তথ্য-উপাত্ত কিছুসময় বোঝালেন তিনি। তার পেছনে বাতাসের গতিবেগ মাপার যন্ত্র ব্যারোমিটার ও বাতাসের গতি-প্রকৃতি মাপার যন্ত্র অ্যানিমোমিটার। তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র থার্মোমিটার আছে অফিস কক্ষের বাইরে। আলোচনা চলাকালেই এলেন টেলিপ্রিন্টার সুপারভাইজার আব্দুল হামিদ। এই টেলিপ্রিন্টারের একসময় অনেক কদর থাকলেও বর্তমানে কোনো অফিস আর এই যন্ত্র ব্যবহার করে না। কিন্তু কক্সবাজারে আবহাওয়া অফিসে এমন যন্ত্রই দেখা গেলো।
এখনো দিনে ৪ বার বেলুন উড়ায় এই আবহাওয়া অফিসের কর্মীরা। তাও রেডিও ট্রান্সমিটার ছাড়া। আকাশ পরিষ্কার থাকলে সেটাও উড়ানো সম্ভব হয় না। বেরিয়ে আসার সময়ে দেখা গেলা-অফিসের সামনের মাঠে স্থাপিত ডিশ এন্টেনাটি দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।
আবহাওয়া অফিস থেকে বের হতেই অবিশ্বাস্য মূল্যে রেডি ফ্লাট বিক্রির ট্রাক শোভাযাত্রা সামনে পড়লো। সঙ্গে ব্যান্ডপার্টির উত্তাল বাজনা। ফ্লাট বিক্রির এমন অভিনব বিজ্ঞাপন দেখতে দেখতে আর একটু সামনে এগুতেই রাস্তা খারাপ হতে শুরু করলো। থানা মোড় পেরিয়ে বাজারঘাটা আসতেই খানাখন্দে ভরা রাস্তায় জ্যাম বেঁধে গেলো বেশ।
বিডিআর ক্যাম্পের উত্তর দিকে মূল রাস্তা থেকে ধানের ক্ষেতের ভেতরে নেমে যাওয়া রাস্তাটা পাকা নয়। ঘাসের বুক চিরে অনেকটা মেঠোপথের শেপ নিয়ে এগিয়ে গেছে।
রাস্তার মাথায় কচুরিপানা ভর্তি বিশাল এক পুকুরপাড়ে ছোট্ট এক প্রাচীন মসজিদ। ছাদজুড়ে একটাই গম্বুজ। চারকোণায় চারটি মিনার। এছাড়া আরো দু’টি কলসাকৃতির ছোট গম্বুজ উত্তর ও দক্ষিণ বাহুর উপরে। পূর্ব ও পশ্চিম বাহুর উপরেও আরো ছোট দুই অর্ধগম্বুজ। দেওয়ালের ঊর্ধ্বভাগে পদ্মফুলের নকশা।
ভেতরে ইমাম সাহেব ছাড়া তিন কাতারে ১৫ জন করে ৪৫ জন মুসুল্লি এক সঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন এ মসজিদে।
গম্বুজের নিচের অংশটি আর সব মুঘল মসজিদের মতোই ফাঁকা, গায়ে নকশাখচিত। এখানকার নকশাগুলো অনেকটা পদ্মকলির। তবে এর নিচ থেকে মেঝে পর্যন্ত সাদা টাইলস চকচক করছে।
মধ্য ঝিলংজা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গিয়াসউদ্দিন মোতোয়াল্লি এই মসজিদের। জানালেন, মাত্র সপ্তাহখানেক হয়েছে বসানো হয়েছে এসব টাইলস। এজন্য কিছু নকশাও ঢেকে ফেলতে হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্যমতে, আরাকানে অভিযান পরিচালনার সময় মুঘল শাসক শাহ সুজার সময়ে মসজিদটি নির্মিত। এ দাবি সত্যি হলে ১৭ শতকের মাঝামাঝি সময়ের মসজিদ এটি।
স্থানীয়ভাবে মসজিদটির নাম আজগবি মসজিদ। চৌধুরীপাড়া মসজিদ নামেও কেউ কেউ ডাকেন এই মসজিদটিকে।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৩৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৬
জেডএম/
** লাবনী-সুগন্ধা নয়, পুরো সৈকতে উপযোগী পরিবেশ দরকার