ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

ঘোড়া চলে ঘুষ দিয়ে !

তাসনীম হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০১৬
ঘোড়া চলে ঘুষ দিয়ে ! ছবি: বাদল- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পর্যটন মোটেল শৈবাল থেকে: বছর ৩৫ এর মোহাম্মদ মাহিম। লাল-সাদা রংয়ের একটি ঘোড়া নিয়ে ছুটছেন সমুদ্র সৈকতের একদম পাশ ঘেঁষে।

মাঝে মাঝে থমকে দাঁড়িয়ে হাঁকডাক ছাড়ছেন, ‘ঘোড়ায় চড়বেন, এক রাউন্ড মাত্র ১০০ টাকা!’

লাবনী পয়েন্টে দাঁড়িয়ে কথা হয় মহিমের সঙ্গে। আলাপে উঠে আসে তার ‘ঘোড়াকাহিনী’।

মাহিম সেই ২০০১ সাল থেকে সৈকতে নিয়মিত, সঙ্গে অবশ্যই ঘোড়া। এতদিন ধরে একটা ঘোড়ায় বেশ চলছিল জীবন। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে সেই ঘোড়া আর পারছিল না। কি আর করা, একসপ্তাহ আগে নরসিংদী থেকে কিনে এনেছেন আরেকটি ঘোড়াটা। লাল-সাদা‍ রঙের ঘোড়াটির দাম পড়েছে ৩৫ হাজার।

প্রতিদিন সৈকতে আসেন হাজার হাজার পর্যটক। সেই পর্যটকের দলে থাকে শিশু থেকে নারী। তাই সৈকতে ঘোড়া চালানো নিষিদ্ধ। ঝাউবন এলাকায় লোক সমাগম কম, সেদিকেই কেবল চালানো যাবে ঘোড়া।

বিষয়টি ধরিয়ে দিলে ম‍াহিম বলেন, ‘নিষিদ্ধ করেছেন যারা তাদের টাকা দিয়েই তো চালাচ্ছি ঘোড়া। ’ কী বলেন? এমন প্রশ্নে মাহিম বলেন, ‘পুলিশকে টাকা না দিলে নিষিদ্ধ। টাকা দিলে তারা ডিস্ট্রার্ব করে না। দিনে দুই দফায় পুলিশকে ২০০ টাকা আর বিচ ম্যানেজম্যান্ট কমিটিকে ২০০টাকা দিতে হয়। তাদের প্রতিনিধিরা এসে নিয়ে যায় টাকা। ’

একই কথা বলেন, সৈকতে ঘোড়া নিয়ে আসা দুই ভাই সাকিব এবং ইব্রাহিমও।

সূত্র জানায়, বর্তমানে সৈকতে সবমিলিয়ে ঘোড়া আছে ২১টি। সেই হিসেবে প্রতি ঘোড়া থেকে ৪০০ করে প্রতিদিন ৮ হাজার ৪০০ টাকা করে ‘ঘুষ’ নিচ্ছে পুলিশ ও বিচ ম্যানেজম্যান্ট কমিটি।

এই ঘোড়া নিয়ে কিছু পর্যটকের উৎসাহ থাকলেও অধিকাংশরই এ নিয়ে নানা অভিযোগ।

চট্টগ্রামের রাউজানের মোহাম্মদ আলমগীর স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে বেড়াতে এসেছেন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘যেভাবে জনাকীর্ণ সৈকতের উপর দিয়ে ঘোড়াগুলো ছুঁটে চলে, বেশ ভয়ংকর। একবছর আগে এরকম ঘোড়ার ধাক্কা খেয়ে আমার ছেলে বেশ আঘাত পেয়েছিল। সৈকতে এটা নিষিদ্ধ করা দরকার। ’

এ তো গেলে ঘোড়ার কথা। এবার আসা যাক বিচ বাইকের কথায়। সৈকতের আরেক যন্ত্রণা এই বিচ বাইক। এটিও একটা সময় নিষিদ্ধ ছিল। তবে এখন অনুমোদন নিয়ে সুগন্ধা থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত চলছে এই বাহন।

তবে এটি চলছে মূল সৈকতের কিছুটা দূরে। যেখানে পর্যটকদের আনাগোণা কম সেদিক।

বিচ মালিক সমবায় সমিতি লিমিটেড সূত্র জানায়, সমুদ্র সৈকতের দুটি পয়েন্টে সবমিলিয়ে ৩৫টি বিচ বাইক রয়েছে।

সমিতির লাইনম্যান মো. বেলাল উদ্দিন বলেন, ‘বিচ বাইক অবৈধ না। আমরা অনুমোদন নিয়েই চালাচ্ছি। ’

তিনি এ সময় বিচ বাইকের পেছনে লাগানো সমিতির কর্তৃক প্রদত্ত লাইসেন্সের স্বীকৃতির রেজিস্ট্রেশন কার্ড দেখান।

মোহাম্মদ আবদুল আজিজ নামের এক বিচ বাইক চালক বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রায় ৮০ হাজার টাকায় একটা বিচ বাইক রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। যখন রেজিস্ট্রেশন করা ছিল না তখন পুলিশ টাকা নিত। এখন নিতে পারে না। হয়তো আমাদের সমিতির সঙ্গে তাদের লেনদেন হয়। সারাদিনে ১০০০-১৫০০ টাকা আয় হয়। ভাড়া আর আনুষঙ্গিক খরচ বাদ দিয়ে ৩০০-৩৫০ টাকা থাকে। ’ কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার হোসাইন মো. রায়হান কাজেমি বলেন, ‘সৈকতে ঘোড়া চালানো নিষিদ্ধ। কিন্ত আমরা বারবার তাদের ধরার পরেও তারা কোনো না কোনোভাবে জরিমানা দিয়ে বের হয়ে যায়। এটি থামানো একটু সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ’

ঘোড়া চালাতে দিয়ে পুলিশ ও বিচ ম্যানেজম্যান্ট কমিটি ঘুষ নেয় এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হোসাইন মো. রায়হান কাজেমি বলেন, ‘এটা ভুয়া কথা। আমরা ওদের প্রতিদিন দৌঁড়াই বলে এমন কথা বলছে। ’

বিচ বাইক চালানো নিষিদ্ধ নয় উল্লেখ করে ট্যুরিস্ট পুলিশের এ সহকারী পুলিশ সুপার বলেন, ‘তারা অনুমোদন নিয়ে সুগন্ধা থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত বিচ বাইক চালাচ্ছে। ’

ঘোড়া চালক বলছেন পুলিশ টাকা নেয়, পুলিশ বলছে মিথ্যা। ঘটনা আসলে কী? তবে সত্যি হচ্ছে বিচে ঘোড়া চলছেই...




বাংলাদেশ সময়: ০৬৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৬
টিএইচ/এমজেএফ

** সৈকতের প্রহরী, সাগরের যোদ্ধা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ