কক্সবাজার থেকে: সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে রয়েছে একটি পর্যটন তথ্য কেন্দ্র। এটি বিনোদন জোন হিসেবে পরিচিত।
সন্ধ্যার পর শামুক-ঝিনুক মার্কেট লাগোয়া একটি ছোট পাকা ঘরে মিটমিটে এনার্জি বাল্ব জ্বলতে দেখা গেলো। বাইরে সাইনবোর্ডে বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা পর্যটন তথ্য কেন্দ্র। কি তথ্য জানা যায়, পর্যটকরা এখান থেকে কি তথ্য পেতে পারেন, বিদেশিদের জন্য কি সুবিধা আছে- এসব জানার জন্যই সামনে এগোনো। গিয়ে দেখা গেলো রুমে কেউ নেই। ছোট একটি তালা ঝুলছে।
একটু অপেক্ষা করতেই নীল ইউনিফর্ম পরা এক ব্যক্তি এগিয়ে এলেন। গিয়েছিলেন নামাজে। তালা খুলে ভিতরে ঢুকে দেখা গেলো ভাঙাচোরা একটি টেবিল, গোটা চারেক চেয়ার আর কয়েকটি বাতিল সাইনবোর্ড। টেবিলের উপর রাখা কিছু লিফলেট। এই হলো পর্যটকদের সুবিধার জন্য পরিচালিত পর্যটন তথ্য কেন্দ্রের হাল। পর্যটন তথ্য কেন্দ্র হলেও পর্যটকদের আনাগোনা যে খুব একটা নেই তা বুঝতে কষ্ট হলো না। আর সেখানে দায়িত্বরত রশিদ আহমেদের জ্ঞান যে লিফটেটের মধ্যেই সীমবদ্ধ তা বোঝা গেলো কথা বলে। বিচ ছাড়া শহরের ভিতরে কি দেখার আছে, মহেশখালীতে কি আছে- এসব প্রশ্নে বেশ বিব্রত বলেই মনো হলো।
আর সদুত্তর যে দিতে পারলেন না তা বলাই বাহুল্য। নিজেই জানালেন দিনে দু’চারজনের বেশি আসেন না। অথচ পর্যটকরা প্রতি মুহূর্তে ঘুরতে গিয়ে নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এমনকি অনেককিছু না দেখে না জেনেই ফিরে যাচ্ছেন দেশের সবচেয়ে বড় ও সম্ভাবনাময় এ পর্যটন স্পট থেকে।
কক্সবাজারের সি বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি এটা পরিচালনা করে। জেলা প্রশাসক সভাপতি। আছেন পর্যটনের লোকও। ডিজিটাল এ যুগে সরকার পর্যটন বর্ষ ঘোষণা করলেও কোনো কম্পিউটার, ইন্টারনেট দূরে থাক কোনো পোস্টার, স্পটগুলোর ভালো কোনো ছবিও নেই এখানে। আর এ লিফলেট যেটি আছে সেটি সৈকতে কি করা যাবে কি করা যাবে না এর বেশি কোনো তথ্য নেই। পর্যটন তথ্য কেন্দ্র মানে নিশ্চয় পর্যটকরা কি করবেন আর কি করবেন না- এটা জানানো নয়! সচেতনতার জন্য কিছু সাইনবোর্ড থাকলেও সেগুলোও পড়ে আছে নষ্ট হয়ে। সেলিনা আক্তার নামে এক নারী কর্মী কাজ করেন সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত। আর রশিদ থাকেন ২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত।
পর্যটনের তথ্য মানে যেন তাদের কাছে ‘বিচ ব্যবহারের নিয়মাবলী’র একটি লিফলেট! অথচ পর্যটনের তথ্য ব্যবস্থা থাকা উচিত ছিলো ডিজিটালি। সেখানে পর্যটকরা গোটা কক্সবাজার সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নেই কোনো মাইকও। তাই প্রচারণারও প্রশ্ন নেই। এখানে তথ্য মানেই ট্যুরিস্ট পুলিশের ওপর নির্ভরতা।
এ বিষয়ে পাশের পুলিশ বুথে থাকা কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সহাকারী পুলিশ সুপার (এসএসপি) রায়হান কাজেমি বাংলানিউজকে বলেন, দেখেন সারা দিন ওখানে কোনো লোক যায় না। কোনো তথ্য সেখানে পাওয়া যায় না। অথচ এটা খুব প্রয়োজন। মানুষ আমাদের কাছে আসে তথ্যের জন্য। আমাদের সদস্যরা তথ্য দেয়।
পর্যটন সম্ভাবনার কক্সবাজারে উপযুক্ত তথ্যের অভাবে বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হন পর্যটকরা। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টিকে সবাই হেলায় ফেলে রেখেছেন। জেলা প্রশাসক কিংবা পর্যটন করপোরেশনের কোনো উদ্যোগ নেই বলেই জানালেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
কেন্দ্রে ট্যুরিস্ট পুলিশের একটি লিফলেটও পাওয়া গেলো। আর তাদের লিফলেটেও মিললো ট্যুরিস্ট পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর। বলা চলে ট্যুরিস্ট পুলিশে ভর করেই চলছে পর্যটকে তথ্য কেন্দ্রের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ অফিস। আর যারা সেখানে দায়িত্ব পালন করেন তাদের পর্যটন জ্ঞান বলতে সামান্য একটি ট্রেনিং। আর সে ট্রেনিংয়ে তারা কি শিখেছেন তা বোঝা যায় কক্সবাজারে কি আছে আর দেখার মতো- এ প্রশ্ন যখন শুধু একটি মন্দিরের নাম বলেন!
বাংলাদেশ সময়: ০৭০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৬
এএ
** ঘোড়া চলে ঘুষ দিয়ে !