ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

যেন স্বয়ং বুদ্ধ শুয়ে আছেন!

আবু খালিদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০১৬
যেন স্বয়ং বুদ্ধ শুয়ে আছেন! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রামু, কক্সবাজার থেকে: ডান হাতের ওপর মাথা রেখে পা টান করে শুয়ে আছেন গৌতম বুদ্ধ! খোলা চোখে পৃথিবীর সব প্রাণীর প্রতি সুদৃষ্টি রাখছেন তিনি। চোখের দিকে তাকালে মনে হবে যেন আশীর্বাদ দিচ্ছেন।


 
বুদ্ধের এই মূর্তিটি কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার উত্তর মিঠাছড়ি গ্রামের বৌদ্ধবিহারে ‍অবস্থিত। পাহাড়ের ওপর তৈরি করা বুদ্ধ মূর্তিটি দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন স্বয়ং বুদ্ধ শুয়ে আছেন। দেশের সবচেয়ে বড় এ বুদ্ধ মূর্তির দৈর্ঘ্য ১০০ ফুট।
 
শুক্রবার (০৮ এপ্রিল) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘ এ মূর্তিটি দেখতে পর্যটকেরা ভিড় জমাচ্ছেন।
 
২০০৬ সালে সোনালি রঙের মূর্তিটি একেবারেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরির কাজ শুরু করেন শ্রীমৎ করুণাশ্রী ভিক্ষু। ২০০৯ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হয়। মায়ানমার থেকে আসা দক্ষ একজন শিল্পীর সঙ্গে নিজেই স্থপতি হিসেবে কাজ করেন তিনি।  
 
করুণাশ্রী ভিক্ষু জানান, প্রায় দুই একর জায়গায় ২০০২ সালে বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র বৌদ্ধবিহারটি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এরপর মূর্তিটি তৈরির পরিকল্পনা মাথায় আসে তার।
 
বৌদ্ধবিহারের মূল দরজা দিয়ে প্রবেশ করে সামনের দিকে ৮৮ ধাপ সিঁড়ি বেয়ে উঠলেই দেখা মিলবে ‘ভুবন শান্তি ১০০ সিংহ শয্যা গৌতম বুদ্ধ মূর্তি’।
 
প্রায় কোটি টাকা খরচে নির্মিত মূর্তিটি দেখতে শ্রীলঙ্কা, বার্মা, চীন, জাপান, থাইল্যান্ড, নেপাল, ভুটান, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়াসহ বৌদ্ধ ধর্ম‍াবলম্বী দেশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সাধারণ পর্যটকেরা নিয়মিত আসেন এখানে। জাতিসংঘের পর্যটন বিষয়ক মহাসচিবও পরিদর্শন করে গেছেন বুদ্ধ মূর্তিটি। এছাড়াও রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও এসেছেন এখানে।
 
বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে বিশালাকৃতির এই মূর্তি স্থাপন প্রসঙ্গে শ্রীমৎ করুণাশ্রী ভিক্ষু বলেন, বুদ্ধ মূর্তি নির্মাণে মূল লক্ষ্য- বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার ও পর্যটনের বিকাশ। কক্সবাজার পর্যটন প্রসিদ্ধ এলাকা। এখানে পর্যটকেরা যেন সমুদ্র ও সৈকত দেখার পাশাপাশি আরও নতুন কিছু দেখতে পান। এতে কিন্তু দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের একটা সংযোগ তৈরি হচ্ছে। ফলে আমরা নানাভাবে উপকৃত হচ্ছি। এসব উদ্দেশ্য থেকেই এই মূর্তিটি তৈরি করা।
 
সোনালি রঙে মূর্তিটি তৈরির কারণ জানাতে করুণাশ্রী ভিক্ষু বলেন, সোনা আমাদের কাছে সবচেয়ে বেশি দামি। আর বৌদ্ধ যেহেতু সবচেয়ে মহান তাই এই সোনার রঙেই বুদ্ধের মূর্তিটি তৈরি হয়েছে।  
 
বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মূর্তিটির সঙ্গে ছবি তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন এক দম্পত্তি। বেসরকারি চাকরিজীবী তৌহিদ বাংলানিউজকে জানান, দেশে বুদ্ধের সবচেয়ে বড় মূর্তিটি দেখার অনেক শখ ছিল। কক্সবাজারে আমরা হানিমুনে এসেছি। এই সুযোগে মূর্তিটির সঙ্গে কিছু স্মৃতি রাখতে ছবি তুলছি।
 
তবে দেশের বৃহৎ এই মূর্তি প্রাঙ্গণটি তুলে ধরতে সরকারের আরও সুদৃষ্টি প্রয়োজন বলে মনে করেন পর্যটকরা। বিশেষত পর্যটকদের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা ও বুদ্ধমূর্তিটি রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি।

আর্থিক অসঙ্গতির কারণে সবকিছু সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। এছাড়া কিছু অসামাপ্ত কাজও রয়েছে। সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আবশ্যিক হয়ে পড়েছে।

করুণাশ্রী ভিক্ষু বলেন, নিজ উদ্যোগে এই মহৎ কাজটি শুরু করলেও একটা সময়ে এসে আত্মীয়-স্বজন, ভক্ত ও কাছের মানুষের কাছ থেকে কিছুটা আর্থিক সহযোগিতা নিতে হয়েছে। ২০১২ সালে রামু সহিংসতার পর প্রধানমন্ত্রীর সহায়তায় বৌদ্ধ বিহারটি পুনঃনির্মাণ করা হয়।

সবশেষে এই বৌদ্ধ ভিক্ষু চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়ক থেকে বৌদ্ধ বিহার পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা প্রশস্তকরণ, গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা বরাদ্ধ, বিদ্যুৎ বিল মওকুফ, সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা, নিরাপত্তার জন্য সীমানা প্রাচীর এবং পর্যটন খাত বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করে নিয়মিত বার্ষিক বরাদ্দের দাবি জানান।

কক্সবাজার জেলা সদর থেকে সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও মিনিবাস যোগে রামু থানার উত্তর মিঠাছড়িতে এলেই পাওয়া যাবে বৌদ্ধবিহারটি। রাবার বাগান স্টেশন থেকে সোজা পশ্চিমে (চা বাগান) এই বৌদ্ধবিহারটি অবস্থিত।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১৬
একে/এমজেএফ/

** সেন্টমার্টিন যেভাবে যাবেন
** তৃতীয় ধাপে চট্টগ্রাম টিম এখন কক্সবাজারে
** কক্সবাজারে বাংলানিউজের দ্বিতীয় টিম
** বছরজুড়ে দেশ ঘুরে: কক্সবাজারে বাংলানিউজ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ