কক্সবাজার থেকে: বিশ্বজিৎ পাল। বয়স ৭০ বছরেরও বেশি।
দুই সন্তান আর স্ত্রীসহ মোট চার জনের সংসার তার। এপ্রিলের সময়টাতে পর্যটকের আনাগোনা বেশ কম। তাই প্রায় অলস সময়ই পার করেন এ সময়। বয়স যেমন বেড়েছে, তেমনি অভিজ্ঞতার ঝুলিও তার পূর্ণ।
ঝিনুক মার্কেটে দাঁড়িয়েই কথা হচ্ছিল জীবনে পোড় খাওয়া বিশ্বজিৎ পালের সঙ্গে। জীবনের এই পড়ন্ত বেলায় এসেও পরিবারের বোঝা হাসিমুখেই তিনি বয়ে বেড়াচ্ছেন।
দিনে এক কেজি চালের ব্যবস্থা করতে পারলেই বউ-ছেলে-মেয়ে নিয়ে খেয়ে খুশি বিশ্বজিৎ। এমন অবস্থায় অনেকের মধ্যে হতাশা দেখা গেলেও ব্যতিক্রম বোঝা গেল তাকে।
এই সংগ্রামেও তার তৃপ্তির জায়গাটা আসলে কোথায়? বিশ্বজিতের উত্তর, ‘আমরা আজ স্বাধীন। একটা সময় দেশের মানুষ ভাতের কষ্ট করতো। এখন আর সেই দিন নেই। আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক ভালো, অন্য দেশগুলো আমাদের সম্মান করে। আমরা আর কোনো দেশ থেকে ভিক্ষা আনি না, ধার আনি। একটা সময় সেটা শোধ করি। আমাদের দেশ এখন বড় হয়েছে। ’
বিশ্বজিৎ যখন তার গম্ভীর গলায় কথাগুলো বলছিলেন, দারুণ শ্রদ্ধা আর মুগ্ধতা নিয়ে শুনতে হয়েছিলো। ‘চাচা দেশ তো ধনী হয়েছে, ভালো কথা। কিন্তু তাতে আপনার কী লাভ হয়েছে?’ কথার ফাঁকে এমন প্রশ্নে বিশ্বজিৎ উত্তর দিলেন, ‘দেশ ধনী, মানে মানুষও ধনী হয়েছে। দেশের মানুষ এই যে কক্সবাজার বেড়াতে আসে, অভাব থাকলে কী বেড়ানোর সুযোগ ছিলো?’
উজ্জ্বল মুখে বয়োবৃদ্ধ বিশ্বজিৎ বলতে থাকেন, ‘তারা আসেন, আবার সৌখিন এই ঝিনুকের শোপিসগুলো ঘরে সাজানোর জন্য কিনেও নিয়ে যান। এভাবেই তো আমরা পর্যটকদের কাছে শখের এই পণ্যগুলো বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। ’
নিজেদের জীবিকা প্রসঙ্গে উপমা টেনে তিনি বলেন, ‘নদীতে যদি পানি থাকে, তাহলে খালও একটু পানি পায়। দেশ ভালো থাকলে, দেশের মানুষও ভালো থাকে। বিনা খরচে পড়ালেখার সুযোগ পায় আমাদের সন্তানরা। রাস্তাঘাট ভালো হয়, চলাফেরায় সুবিধা, বিনামূল্যে চিকিৎসা পাওয়া যায়। ’
বিশ্বজিতের এই ‘অল্পে তুষ্টি’ মুগ্ধ করে ঝিনুক মার্কেটে আসা ক্রেতাদেরও।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০১৬
এইচএ/
** মাথিনের কূপে ধীরাজ কেন একা?
** সেন্টমার্টিন যেভাবে যাবেন
** তৃতীয় ধাপে চট্টগ্রাম টিম এখন কক্সবাজারে
** কক্সবাজারে বাংলানিউজের দ্বিতীয় টিম
** বছরজুড়ে দেশ ঘুরে: কক্সবাজারে বাংলানিউজ