কক্সবাজার থেকে: সৈকতের পরিবেশ বোঝা এবং সমুদ্র ব্যবহারকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে লাইফসেভিংয়ের বিষয়ে ‘প্রিভেন্টিভ অ্যাকশন’ নিয়ে কাজ করছে সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্স অব বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি), সি-সেফ প্রোগ্রাম।
সমুদ্রের পরিবেশকে বোঝার জন্য প্রতিদিনই অনুসরণ করা হচ্ছে ডেইলি লগবই।
লাইফগার্ডের কার্যক্রম প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে এমনটাই জানিয়েছেন সিআইপিআরবি’র সি-সেফ প্রোগ্রামের ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ।
তিনি বলেন, রেসকিউ টিম ও লাইফগার্ডের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। লাইফগার্ড বিপদ হওয়ার আগেই সমুদ্র ব্যবহারকারীদের সতর্ককরণের কাজ করে থাকে। যাতে সমুদ্র ব্যবহারকারীরা কোনো বিপদে না পড়েন। আর রেসকিউ টিমের কাজ হচ্ছে কেউ সমুদ্রে বিপদে পড়ে গেলে তাকে উদ্ধার করা।
বিচে একজন লাইফগার্ডের কি দায়িত্ব হতে পারে? জানতে চাইলে ইমতিয়াজ বলেন, লাইফগার্ডের দায়িত্ব হচ্ছে সৈকত ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। লাইফগার্ডরা সৈকতের একটি নির্দিষ্ট এলাকার জন্য দায়িত্ব পালন করেন। ওই এলাকাটি ব্যবহারের জন্য নিরাপদ কিনা তা নিশ্চিত করাই লাইফগার্ডের কাজ। কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে না দেওয়া, কোনো ঘটনার সাড়া দেওয়া, উদ্ধার প্রক্রিয়া এবং সেবার মাধ্যমে দ্রুত সাড়া দেওয়া।
লাইফগার্ডের ব্যক্তিগত দক্ষতাগুলো কি? সৈকত ব্যবহারকারীদের সঙ্গে সফলভাবেই যোগাযোগ রক্ষা করাই লাইফগার্ডের দক্ষতার প্রমাণ। এজন্য তাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিতে হবে এবং সৈকত এলাকায় সময়মতো উপস্থিত থাকতে হবে।
কোন সময় সৈকত ব্যবহার করা যেতে পরে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমুদ্রের বায়ু প্রবাহ অনেক শক্তিশালী। যে ঢেউগুলো সামনের দিকে এসে ভেঙে পড়ে না ওই সময় সাঁতারের জন্য সমুদ্র নিরাপদ।
সর্তক করে তিনি বলেন, তীর থেকে সাগরের দিকে যখন বায়ু প্রবাহিত হয় তখন কোনো ভাসমান বস্তু (টিউব, লাইফবোর্ড ইত্যাদি) ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। সমুদ্র যখন উত্তাল তখন ঢেউগুলো সামনে এসে ভেঙে পড়ে। এসময় সমুদ্র ব্যবহার অনেক বিপদজনক।
এছাড়া সমুদ্র যখন উত্তাল থাকে তখন শক্তিশালী ঢেউ তীরে এসে আঁছড়ে পড়ে। এসময় সাঁতারু এবং যারা সমুদ্রের কাছে থাকেন তাদের জন্যও বিপদজনক।
এ জন্যই লাইফগার্ডরা সমুদ্র ব্যবহারকারীদের দিক-নির্দেশনায় কাজ করে থাকেন। সমুদ্রের বায়ু, পানির গতি, উচ্চতা, ঢেউয়ের আকার ও কোথায় গুপ্ত খাল রয়েছে তারা চিহ্নিত করেন। এরপর লাইফগার্ড নির্ধারণ করেন কোন এলাকা সুইমিংয়ের জন্য উৎকৃষ্ট। সেখানে হলুদ-লাল পতাকা দিয়ে চিহ্নিত করা হয়।
সমুদ্রে গুপ্তখাল সৃষ্টির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঢেউয়ের পানি তীরে এসে আবার সমুদ্রে মিলিয়ে যায়। এ পানি ফিরে যাওয়ার সময় সমুদ্রের তীরে গুপ্তখাল সৃষ্টি হয়।
‘কেউ সমুদ্রে নামার আগে লাইফগার্ড সদস্যরা বলে দেন সমুদ্রের কোন জায়গায় নামলে বিপদ হবে না। কোন জায়গায় জেট-স্কি চলছে, কোন জায়গায় গুপ্তখাল তৈরি হয়েছে এগুলো বলাই লাইফগার্ডের কাজ। ’
কার্যক্রম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সিআইপিআরবি’র সি-সেফ প্রোগ্রাম হলো লাইফগার্ড ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের অধীনে একটি লাইফ সেভিং প্রজেক্ট।
আমাদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করে থাকে রয়েল ন্যাশনাল লাইফবোর্ড ইনস্টিটিউশন অর্গানাইজেশন (আরএনএলআই)। যুক্তরাজ্যের (ইউকে) এ প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের ১৮০টির বেশি সৈকতে লাইফগার্ড সেবা দিয়ে থাকে।
তিনি জানান, সি-সেফ কার্যক্রম তিন ধরনের। আমাদের একটি লাইফগার্ড সার্ভিস আছে। বর্তমানে কক্সবাজারের লাবনী পয়েন্ট এবং সুগন্ধা বিচের লাইফগার্ড সার্ভিস আছে। সকাল-বিকেল দুই শিফটে লাইফসেভিংয়ের কাজ করা হয়।
আমাদের কমিউনিটি এডুকেশন সার্ভিস রয়েছে। কোস্টাল এলাকার সব কমিউনিটি ও স্কুলের বাচ্চাদের ড্রাউনিং প্রিভেনশনের ওপর অ্যাওয়ারনেস তৈরির কাজ করছি আমরা, বলেন ইমতিয়াজ আহমেদ।
‘একটা বাচ্চা সমুদ্র বা যেকোনো পানিতে নামার আগে তার কি করনীয়, বিপদে পড়লে কি করতে হবে এগুলো যেন জানতে পারে প্রোগ্রামের মাধ্যমে এটাই আমাদের উদ্দেশ্য।
একজন সুপারভাইজারের অধীনে ৪ জন সিনিয়র লাইফগার্ড থাকেন। তাদের অধীনে ১২ লাইফগার্ড কাজ করেন। এদিকে কমিউনিটিংয়ের জন সুপারভাইজার রয়েছেন ১ জন। তার অধীনে রয়েছেন ১২ জন লাইফগার্ড। এরা লাইফসেভিং প্রিভেনশন নিয়ে কাজ করে থাকেন।
সপ্তাহে প্রতি বৃহস্পতিবার নতুন লাইফগার্ড ট্রেনিং দেওয়া হয় উল্লেখ করে ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, এ অর্গানাইজেশন থেকে ৩ মাস পরপর ট্রেনিং প্রোগ্রাম করা হয়। সেখানে যে কেউ অংশগ্রহণ করতে পারেন। এতে ট্রেনিং শেষে সার্টিফিকেটও দেওয়া হয়।
সমুদ্র ব্যবহারের জন্য লাইফগার্ড সবসময় নিয়োজিত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৬
এসজেএ/জেডএস
** কক্সবাজার বিচে রাতে জ্বলে না বাতি
** সেন্টমার্টিন যেভাবে যাবেন
** তৃতীয় ধাপে চট্টগ্রাম টিম এখন কক্সবাজারে
** কক্সবাজারে বাংলানিউজের দ্বিতীয় টিম
** বছরজুড়ে দেশ ঘুরে: কক্সবাজারে বাংলানিউজ