ঢাকা, রবিবার, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

ঘুরে আসুন রেমা-কালেঙ্গা-১

মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৬
ঘুরে আসুন রেমা-কালেঙ্গা-১

রেমা-কালেঙ্গা, হবিগঞ্জ থেকে: অফিসের অ্যাসাইনমেন্টে মৌলভীবাজার শ্রীমঙ্গল থেকে রিজার্ভ মাইক্রোবাসে ভোর ছ’টায় বের হয়ে পড়লাম। দলে ছিলাম আমরা ছয়জন।

দু’টি দলে বিভক্ত হয়ে একটি দলকে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে নামিয়ে দিয়ে আমরা বাকি তিনজন রেমা-কালেঙ্গার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। প্রত্যেক দলে রয়েছেন একজন করে ফটো করেসপন্ডেন্ট।

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় অবস্থিত রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য। অভয়ারণ্যটির আয়তন ১ হাজার ৭৯৫ দশমিক ৫৪ হেক্টর। বন বিভাগের কালেঙ্গা রেঞ্জের চারটি বিট- কালেঙ্গা, রেমা, ছনবাড়ি আর রশিদপুর নিয়ে এই অভয়ারণ্য গঠিত। ঢাকা থেকে ১৩০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে এবং সিলেট থেকে ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অবস্থিত এটি। এর দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে রেমা চা-বাগান, পূর্ব-দক্ষিণ দিকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য এবং পূর্বদিকে ভারতেরই হিল রিজার্ভ ফরেস্টের অংশ।
শনিবার ১৬ জুলাই, বাংলা শ্রাবণ মাসের প্রথম দিন। ভোর সাড়ে ৫টা থেকেই মুষলধারে বৃষ্টি। মনে মনে প্রমাদ গুনছিলাম। রেমা-কালেঙ্গায় এমনিতেই জোঁকের ভয়। আর বৃষ্টি হলে তা আরও বহুগুণ বেড়ে যায়।

চুনারুঘাট থেকে সরু আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে ছুটে চললাম। রাস্তার দু’পাশে বিস্তৃর্ণ ধানখেত। দূরে ধানখেতের আইলে বসে আছে সাদা বক। ফিঙ্গে, বুলবুলি আর জোড়ায় জোড়ায় ঘুঘুসহ নানান প্রজাতির পাখির দেখা মেলে রাস্তায়ই।

ভরজুষ বাজার পার হয়ে খোয়াই নদী। খোয়াই নদীর ব্রিজ পার হয়ে জংকুড়া যেতেই গাড়ি ব্রেক কষলো। পাকা রাস্তা শেষ। এরপর কাঁচা রাস্তা। তখনও অল্প অল্প বৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয় একজন জানালেন, কালেঙ্গা যেতে এখনও প্রায় ৪-৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়া লাগবে। এঁটেল মাটি। বৃষ্টির কারণে ওপরের স্তরের মাটি নরম হয়ে গেছে। কিন্তু নিচের মাটি শক্ত থাকায় পা পিছলে যাবার ভয় আছে।
এলাকাটি প্রত্যন্ত, দুর্গম ও খানাখন্দকে ভরা বলে কোনো যানবাহনই তেমন চলে না। মাঝে মাঝে দু’একটা রিজার্ভ সিএনজিচালিত অটোরিকশা চোখে পড়ে। এলাকার মানুষকে এ ৪-৫ কিলোমিটার পথ হেঁটেই যাতায়াত করতে হয়।

বৃষ্টি, কাদা, পিচ্ছিল আর দুর্গম এ পথ পাড়ি দিয়ে রেমা-কালেঙ্গা যাবো, নাকি ফেরার পথ ধরবো- এমন দোটানায় পড়ে গেলাম। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম, এতোদূর এসে ফিরে যাওয়া যাবে না।

পিচ্ছিল পথ পাড়ি দিয়ে চুনারুঘাট থেকে আসা একটি খালি সিএনজি চোখে পড়লো। প্রথমে যেতে রাজি হচ্ছিল না। বাড়তি কিছু টাকা দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে তাকে রাজি করালাম।

একটু সামনে গিয়ে দেখি রাস্তার অবস্থা মারাত্মক খারাপ। সিএনজির চাকা দেবে যাচ্ছে। বৃষ্টিতে রাস্তার হাল এমন হয়েছে যে, রাস্তায় ধান চাষ করা যাবে। নিয়মিত দূরত্বে প্রায় ১৫-১৬টি খানাখন্দক। কাদায় সিএনজির চাকা দেবে যায়। আর প্রতিবারই সিএনজি থেকে নেমে ধাক্কা দিতে হয়। সিএনজি গর্ত থেকে ওঠার পর অপেক্ষাকৃত খারাপ রাস্তা পার হয়ে বেশ কিছুদূর গিয়ে থামে। এরপর একটু চড়ে এগোলে ২ মিনিট পর ফের ধাক্কা দেওয়ার জন্য নামতে হয়।

এভাবে ধাক্কা দিতে দিতে ‘সিএনজি চড়িয়া আমরা হাটিয়া হাটিয়া’ এক সময় রেমা-কালেঙ্গার গেইটে পৌঁছে গেলাম।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১০ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৬
এমআই/

** শ্রীমঙ্গল কৃষি কর্মকর্তার ‘ডিজিটাল বালাইনাশক নির্দেশিকা’
** শ্রীমঙ্গলের অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র বধ্যভূমি’৭১ পার্ক
**  লক্কর-ঝক্কর মার্কা ট্রেন সিলেট-শ্রীমঙ্গল পর্যটনের অন্তরায়
** সিলেটের ট্রেনে হকার, হিজড়া, ভিক্ষুকের উৎপাত

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ