ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

ঝরনা! ঝরনা! সুন্দরী ঝরনা পরিকুণ্ড

শুভ্রনীল সাগর, ফিচার এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৬
ঝরনা! ঝরনা! সুন্দরী ঝরনা পরিকুণ্ড ছবি: শুভ্রনীল সাগর- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সিলেট থেকে:

‘ঝরনা! ঝরনা! সুন্দরী ঝরনা!
তরলিত চন্দ্রিকা! চন্দন-বর্ণা!
অঞ্চল সিঞ্চিত গৈরিকে স্বর্ণে,
গিরি-মল্লিকা দোলে কুন্তলে কর্ণে,
তনু ভরি’ যৌবন, তাপসী অপর্ণা!
ঝরনা!’

জানি না সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত কোন ঝরনা দেখে কবিতাটি লিখেছিলেন। তিনি কখনও বঙ্গের এদিকটায় এসেছিলেন বলেও মনে হয় না! এরপরও কি অদ্ভুত মিল! পরিকুণ্ড ঝরনার অপার সৌন্দর্য দেখে মনে যে কাব্যিক ভাবধারা আসে তা না লিখলেও চলে।

অধিকাংশ ভ্রমণপ্রিয় মানুষ ঝরনাটি সর্ম্পকে জানে না বললেই চলে। সবার কাছে দেশের সর্ববৃহৎ জলপ্রপাত মাধবকুণ্ডের জয়জয়কার। যারা পরিকুণ্ড দেখেছেন তারা দায়িত্ব নিয়েই বলেছেন, মাধবকুণ্ডের তুলনায় পরিকুণ্ড অনেক বেশি সুন্দর। কোথায় এটি? মজার ব্যাপার হলো, পরিকুণ্ড মাধবকুণ্ডের ঠিক আগে। একই পথেই পড়ে।

মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত বড়লেখা উপজেলার মাধবকুণ্ড ইকোপার্কে। এ ঝরনায় যাওয়ার পথে মাধবেশ্বর মহাদেবের মন্দিরের ডানদিক দিয়ে মাধবকুণ্ড ছড়ার বুকে ঢালু পথ নেমে গেছে।

সম্প্রতি এখানে একটি মিনি সুইমিংপুলের উদ্বোধন হয়েছে। সুইমিংপুল ছাড়িয়ে নেমে যেতে হবে ছড়ার জলে। এটি মাধবকুণ্ডের জলধারা। বলা ভালো, পাথুরে জলধারা। এটি পার হতে হবে খুব সাবধানে। এটুকু ট্রেইলর হলে সামনে অপেক্ষা করছে পুরো সিনেমা!

ছড়া পার হয়ে সোজা বনের মধ্যে সরু একটি পাথুরে ঝিরিপথ। এখান থেকেই দৃশ্যপট সম্পূর্ণ আলাদা! এ ঝিরিপথই নিয়ে যাবে ঝরনাতলে।

সূর্যের আলো ঠিকঠাক ঢোকে না এখানে। ঢুকলেও সেটি ক্যানভাসের পরিমিতি অনুপাতে। শ্রাবণের মেঘলা আকাশ। মুখে জল ছিটানোর মতো বৃষ্টি। ছড়ানো-ছিটানো পাথরের শরীর সব। কলকল জলধারা পাথরে বাধা পেয়ে নিস্তব্ধতা কাটিয়ে হেসে ওঠে। কেবলি হাসি নাকি মহান কোনো যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পীর বহতা ধুন? 

সা নি ধা মা পা, গা রে গা রে সা…ধরে এক পাথর থেকে অন্যপাথরে পদতাল পৌঁছে দেবে সুরলোকের চড়াই খেয়ালে। আঁকাবাঁকা সে পথ হৃদয়ের রাস্তা ধরে ঠিক ঝরনাতলে পৌঁছেছে। আনুমানিক দেড়শো ফুট উপর থেকে আছড়ে পড়া জলধারা যাবতীয় বিষাদ ধুয়ে দিয়ে প্রশান্তির জলাশয়ে নিয়ে ফেলে।
জল-মূর্ছনায় বিভোর হতে মানা নেই তবে সবুজ আলপনা আঁকা মসৃণ পাথরের বুকে পা দেওয়া মানা। পাথর তো, মায়া-দয়া নেই বলে বদনাম রয়েছে। তবে জাগতিক স্তরের ওপর থেকে দেখতে পারলে, আজ যাক না সব হারিয়ে, সব ভেসে…।

কীভাবে যাবেন? নির্ভর করছে কোথা থেকে যাবেন তার উপর। দু’টি পথ দেখানো যেতে পারে। ঢাকা থেকে সিলেট, এরপর সিলেট শহর থেকে এটি প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরের মাধবকুণ্ড যাওয়া যাবে বাস, ট্রেন বা ব্যক্তিগত যানবাহনে।

ট্রেনে গেলে নামতে হবে কুলাউড়া স্টেশনে। সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা ব্যক্তিগত গাড়িতে মাধবকুণ্ড। যেতে পারেন মৌলভীবাজার হয়েও। ঢাকা থেকে সরাসরি একমাত্র বাসেই যাওয়া যাবে মৌলভীবাজারে। ট্রেনে গেলে নামতে হবে শ্রীমঙ্গল স্টেশন, সেখান থেকে বাসে করে মৌলভীবাজার হয়ে বাস, অটোরিকশা বা ব্যক্তিগত গাড়িতে। সঙ্গে এটিও লিখে রাখুন, আষাঢ়-শ্রাবণ ছাড়া পরিকুণ্ড দেখতে গিয়ে লাভ নেই। এ দুই মাস ছাড়া বাকি সময় পরিকুণ্ড গুটিয়ে নেয় নিজেকে।

এছাড়া মাধবকুণ্ড ইকোপার্কে দায়িত্বরত ট্যুরিস্ট পুলিশ আলমগীর হোসেন জানান, পরিকুণ্ডের পথটি পাথুরে ও দুর্গম- এজন্য দর্শনার্থাদের যেতে উৎসাহ দেওয়া হয় না বরং নিষেধ করা হয়। কখন কী দুর্ঘটনা ঘটে!

এজন্য যেতে হবে নিজ দায়িত্বে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই, তীব্র সুন্দর একটু ভয়ঙ্করই হয়। যেদিক দিয়েই যান, দু’টি পাতা-একটি কুঁড়ির দেশ আপনাকে খালি হাতে ছাড়বে না। রাস্তার দু’ধারে নয়নাভিরাম চায়ের রাজ্য, উঁচু-নিচু, আঁকা-বাঁকা পথ আপনাকে কখন যে মাধবকুণ্ড নিয়ে যাবে-টেরই পাবেন না! এরপর পরিকুণ্ডের পথ। সেই পথে যা রয়েছে তা কেবল একান্ত অনুভবের!

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৬
এসএনএস/এসআর

*** ‘আগে সালমান শাহের মৃত্যুর বিচার, পরে মিউজিয়াম’

*** শিক্ষায় ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে হাকালুকির কন্যারা
*** ধুলো ঝেড়ে কুশিয়ারার ইস্ট-ইন্ডিয়া ঘাট​
*** অরূপরতনের সন্ধানে শ্রীচৈতন্যের বাস্তুলীলায়
*** জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে রেমা-কালেঙ্গা
*** রহস্যই থেকে গেলো যজ্ঞকুণ্ডের ধারা  
*** পিছুটান মুছে দেবে ভাড়াউড়া হ্রদ
*** লাউয়াছড়া গভীর আনন্দের মূর্তি ধরিয়া আসে
*** ‘সবাই বন্যপ্রাণী এনজয় করে কিন্তু তাদের কথা ভাবতে চায় না’
*** ওদের ট্রেন, মোদের ট্রেন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ