ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

ওয়ার্ল্ড হেরিটেজে যেতে পারে এমসি কলেজ ছাত্রাবাস

সাব্বির আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪২ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৬
ওয়ার্ল্ড হেরিটেজে যেতে পারে এমসি কলেজ ছাত্রাবাস ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সিলেট থেকে: আসাম সেমি পাক্কা টাইপ। তার ওপরে টিন।

টিনগুলো দু’দিকে নিচের দিকে ধাবিত করা। লম্বা সারির মধ্যে মাঝারি আকারের কক্ষ। সেগুন কাঠের দরজা। সারির মধ্যে টিন থেকে নামানো অংশে হালকা কারুকার্যকময়- এমন স্থাপত্য সিলেটের শত বছরের অহংকার।

ব্রিটিশ এই স্থাপত্যের নিচে জ্ঞান অর্জন করেছেন আজকের বাংলাদেশের অনেক গুণীজন। আরও অনেকেই দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন প্রবাসে। স্মৃতির ঝুলিভরা অনেক প্রবীণের। আজও স্মৃতি আওড়ান তারা এই কলেজ ও ছাত্রাবাসকে ঘিরে। এখন এটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আলোচনাও চলছে।

সুবিশাল আয়তনের সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের নান্দনিক স্থাপত্যের সঙ্গে জড়িয়ে এই কলেজের সাবেক ও বর্তমান হাজার হাজার ছাত্রের আবেগানুভূতি। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সিলেট সফরে এসে ১৩২৬ বঙ্গাব্দের ২১ কার্তিক একটি দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেন এমসি কলেজ হোস্টেলে।

৬টি ব্লকে ভাগ করা হোস্টেলের প্রতিটি ব্লকের দৈর্ঘ্য কয়েকশ’ বর্গফুট। এক ব্লক থেকে অন্য ব্লকের দূরত্বও অনেক। ৪র্থ ও ৫ম ব্লকের মাঝে রয়েছে ছাত্রদের গোসলের জন্য পুকুর। ছায়াঘেরা মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের এমন হোস্টেল এদেশে তো নেই-ই, এই উপমহাদেশেও বিরল।

হোস্টেল ভবনের ভিন্নধর্মী স্থাপত্যশৈলির কারণে এটি ছিলো বিরল। স্থাপত্যকলায় সংশ্লিষ্টদের মতে, ‘সেমি পাক্কা আসাম টাইপ’-এর এতো বিশাল ভবন বিশ্বের কোথাও হয়তো এখন আর অবশিষ্ট নেই। উপযুক্তভাবে বহির্বিশ্বে উপস্থাপিত হলে অনেক আগেই এই হোস্টেলকে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ হিসেবে ঘোষণা করতো ইউনেস্ক।

ইতিহাস অনুসারে, সিলেটের স্বনামখ্যাত শিক্ষানুরাগী রাজা গিরিশ চন্দ্র রায় তার পিতামহ মুরারি চাঁদের নামানুসারে ১৮৯২ সালে স্থাপন করেন মুরারি চাঁদ কলেজ। ১৯২১ সালে স্থানান্তরিত হয় টিলাগড়ে অবস্থিত থ্যাকারে টিলায়। একই সময়ে কলেজের অদূরে নির্মিত হয় সুবিশাল এই হোস্টেল।  

প্রায় ২০ কেদার ভূমির ওপর নির্মিত হোস্টেলের ভবন, এর অঙ্গসজ্জা ও স্থাপত্যশৈলী যেকোনো দর্শনার্থীর দৃষ্টি কাড়তো। স্থাপত্যকলা বা আর্কিটেকচারের ভাষায় এ ভবনগুলোর নাম ‘সেমি পাক্কা আসাম টাইপ’। ভবনগুলো নির্মিত হতো টিনশেডে। কড়ি-বর্গা সব কিছু কাঠের। টিনশেডের নিচে থাকে কাঠের বার্লিন। ভবনগুলোর সিমেন্টিং বা দেয়ালের পলেস্তরাও হয় ব্যতিক্রম।

শত বছর আগের পুরনো নির্মাণশৈলী এখনও অটুট। মাঝখানে ক্ষতটা কেবল আগুনে পুড়ে যাওয়া। তবে সেই পুড়ে যাওয়া থেকে আগের অবস্থায় আবার ফিরিয়ে আনা হয়েছে। অবিকল রাখা হয়েছে তার স্থাপত্যশৈলী। দরজাগুলোও আছে সেই আগের।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ নিজেই বলেছেন, ছাত্রবাসটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ঘোষণার বিষয়ে আলোচনা চলছিলো।

তিনি নিজে এই ছাত্রবাসে থেকেই জড়িত হয়েছিলেন ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতেরও স্মৃতি ছিলো ছাত্রাবাস ঘিরে।
স্মৃতির আয়নায় তারা ছাত্রাবাসকে এখনও খোঁজেন। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে বসতি গেড়েছেন এমন অনেক ব্রিটিশ বাংলাদেশি ছাত্রাবাসের জন্য স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর সিলেটের সহকারী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম জানান, ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর ছাত্রাবাস পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার কাজের উদ্বোধন করেছিলেন অর্থমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী। ছয়মাসে সম্পূর্ণ ভস্মীভূত তিনটি ব্লক পুনর্নির্মাণ, আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত তিনটি ব্লক এবং ছয়টি ব্লকের তত্ত্বাবধায়কের ভবন সংস্কারের কাজ করা হয়েছে।

ছাত্রাবাস ঘুরে দেখা গেছে, এখনও নীরব সেটি। আগুনের ঘটনার পর থেকে আর কোনো ছাত্র উঠতে পারেননি ছাত্রাবাসে।

কলেজ অধ্যক্ষ কার্যালয় জানান, এ বছর ছাত্রাবাসে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা আবেদন ফরম সংগ্রহ ও জমা দিতে শুরু করেছেন।   ছাত্রবাসের ছয়টি ব্লকে মোট ২শ’ ৪৪ জন শিক্ষার্থীকে আবাসনের সুযোগ দেওয়া হবে। তখনই আবার প্রাণ সঞ্চারিত হবে সিলেটের বহু পুরনো এই ঐতিহ্যে।


বাংলাদেশ সময়: ২১২১ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৬
এসএ/এএসআর

** শ্রীমঙ্গলের প্রথম পছন্দ শ্রীমঙ্গল ইন
** সিলেটের হেরিটেজ নিয়ে যত উদ্যোগ
** শীতল পাটির কারুশিল্পী অরুণের করুণ কথা
** যেভাবে তৈরি হয় শীতল পাটি​
** সিলেটে রেলের সেই সুদিন ফিরবে কি!​
** উপমহাদেশের প্রথম চা বাগানে
** ঢাকা-সিলেট: চারলেনের অপেক্ষায় সিলেটবাসী ও পর্যটক
** দুই কারণে সাতছড়িতে ঝুঁকিতে বন্যপ্রাণী
** ট্রেইলে নয় ওয়াচ টাওয়ারে সাতছড়ি দর্শন
** বাসে বিমানের ছোঁয়া!
** এসি বাস নেই সিলেট রুটে!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ