ঢাকা, রবিবার, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

অতিথি হোন কুটুমবাড়ির

শুভ্রনীল সাগর, ফিচার এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৫ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৬
অতিথি হোন কুটুমবাড়ির ছবি: শুভ্রনীল সাগর- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শ্রীমঙ্গল থেকে: বোয়াল কারি, রুই ফ্রাই, মাটন সাতকরা, চিকেন ডাল গোস্ত, ভেজিটেবল কড়াই, তরকা ডাল, তন্দুরি চিকেন, চিকেন টিক্কা, বাটার নান, বাটার নান, চিলি নান, হরেক রকম ভর্তা। এই কয়েকটি লিখতেই জিভে জল আসে।

বাকিগুলো লিখতে বোধোহয় স্নানই হয়ে যাবে।

ঢাকা থেকে প্রথমবার শ্রীমঙ্গল এসেছেন এক স্থপতি দম্পতি। অনলাইনে খোঁজখবর করে সোজা চলে এসেছেন কুটুমবাড়ি। হ্যাঁ, একেবারে আত্মীয়বাড়ি যেনো। কুটুমবাড়ির এমনই নাম-সুনাম।

কুটুমবাড়ি একটি রেস্টুরেন্ট। তাদের ভাষায়, বাংলা ও ইন্ডিয়ান খাবারের আড্ডা। এমনটি বললেও, তাদের চাইনিজ খাবারের ডালিও রয়েছে। এতে রয়েছে ১৫টি আইটেম। এছাড়া চিকেনের রয়েছে ১৩টি, মাটন ৭টি, স্ন্যাকস ৯টি, কাবাব ৩টি, বেভারেজ ১০টিসহ লাঞ্চ-ডিনারের ২২টি লোভনীয় পদ। দায়িত্ব নিয়ে বলা যায়, একবার খেলে স্বাদ সারাজীবন জিভের ডগায় লেগে থাকবে।

ট্রেন কিংবা বাস, শ্রীমঙ্গল শহরে নেমে রিকশা-অটোরিকশা যাকেই বলুন, একবাক্যে নিয়ে যাবে কুটুমবাড়ি। বাইরে থেকে যেমন-তেমন ভেতরে ঢুকলে চমকে যেতে বাধ্য। মনে হবে, কোনো কুটিরশিল্প জাদুঘরে ঢুকলাম বুঝি। ঘরময় প্রতিটি জিনিসে শিল্পের ছোঁয়া। ঢুকতেই ডানদিকে বাঁশ-বেতের তৈজসপত্র, বামে ঘরোয়া গাছ। নাক বরাবর উঠে গেছে সিড়ি। চেয়ার-টেবিলগুলো বাঁশের। ঝুলন্ত লাইটগুলো বাঁশের শেড দিয়ে মোড়ানো। কয়েকটি জায়গায় সিলেটের ঐতিহ্যবাহী শিতলপাটির আড়াল। খোলা ইটের দেয়ালে ঝোলানো নজরকাড়া আলোকচিত্র। সবমিলিয়ে গোটা পরিবেশেই নান্দনিকতার ছাপ। সেইসঙ্গে এমন মনোলোভা খাবার। আর কী চাই?
কথাপ্রসঙ্গে কিছু জরুরি তথ্য জেনে নিলাম ম্যানেজার সুজন দেবের কাছ থেকে, কুটুমবাড়ি খোলা থাকে সকাল সাড়ে ১১টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত। তবে উৎসবের দিনগুলো খোলা থাকে দিন-রাত। জনপ্রিয় এ রেস্টুরেন্টটি যেকোনো অনুষ্ঠানের জন্য খাবারের আয়োজন করে থাকে। এজন্য আগেই কর্তৃপক্ষ। বরাবর যোগাযোগ করতে হবে। শ্রীমঙ্গলের বাইরে তাদের আর কোনো শাখা নেই। মোট ২৬ জন কর্মীর মধ্যে আটজন কাজ করেন রসুই ঘরে। স্থানীয় বাজার থেকে আসে একেবারে তাজা মাছ-মাংস-সবজি।

একটি বিষয় আলাদা করে সুজন বললেন, আমাদের নিজস্ব একটি মশলা রয়েছে যেটি ৪১টি মশলা মিশিয়ে তৈরি করা। এর মধ্যে অনেকগুলো ভারত থেকে আনা। এই বিশেষ মশলা দিয়ে রান্না হয়-মাটন কড়াই, তন্দুরি চিকেন প্রভৃতি পদগুলো। এখানেই কুটুমবাড়ি সবার থেকে আলাদা। আমাদের মতো এতো আয়োজনের বৈচিত্র্য আর কারও নেই। আর দামও খুব সাশ্রয়ী।

২০০৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর কুটুমবাড়ির যাত্রা শুরু। শুরুর গল্পটি শোনা যাক অন্যতম সত্ত্বাধিকারী রাজর্ষি ধর রাজনের মুখেই, অনেকটা শখের বশত করা। আগে থেকে আমাদের পারিবারিক হোটেল ব্যবসা ছিলো। এটিকে নতুন করে অন্য দুই অংশীদার সুব্রত ভট্টাচার্য ও শফিকুল ইসলাম জুয়েলসহ আমরা কুটুমবাড়ি শুরু করি।
কুটুমবাড়ির অধিকাংশ অতিথি বিদেশি পর্যটক। গুলশান সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার পর এতে বেশ ভাটা পড়েছে বলে জানালেন সুজন। এ ঘটনার পর থেকে নিরাপত্তার স্বার্থে কোনো বিদেশি অতিথি এলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানানো হয়। তারা অবস্থান করার পুরো সময়টা থাকে পুলিশ পাহারা। খুব শিগগিরই কুটুমবাড়িজুড়ে লাগানো হচ্ছে সিসি ক্যামেরাও।

সবই কুটুমদের ভালোর জন্যে। আদর-আপ্যায়নে সন্তুষ্ট করতে কর্মীদের বিরাম নেই। তাদের হাস্যজ্জ্বোল মিষ্ট ব্যবহারে মনেই হবে, নিজের কোনো আত্মীয়বাড়ি। যারা এখনও অতিথি হননি, তাদের সামনে আরও মজাদার সব খাবারের নামগুলো নেবো নাকি! বেশ, জলদি নিজেই ঘুরে আসুন।

** জেরিন চা বাগান থেকে উচ্চশিক্ষায়
*** হজরত শাহপরান, আশাগাছ এবং অন্যান্য​
*** মাধবকুণ্ড ঝরনাতলার কোলাহলে
*** ঝরনা! ঝরনা! সুন্দরী ঝরনা পরিকুণ্ড
*** ‘আগে সালমান শাহের মৃত্যুর বিচার, পরে মিউজিয়াম’
*** শিক্ষায় ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে হাকালুকির কন্যারা
*** ধুলো ঝেড়ে কুশিয়ারার ইস্ট-ইন্ডিয়া ঘাট​
*** অরূপরতনের সন্ধানে শ্রীচৈতন্যের বাস্তুলীলায়
*** জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে রেমা-কালেঙ্গা
*** রহস্যই থেকে গেলো যজ্ঞকুণ্ডের ধারা  
*** পিছুটান মুছে দেবে ভাড়াউড়া হ্রদ
*** লাউয়াছড়া গভীর আনন্দের মূর্তি ধরিয়া আসে
*** ‘সবাই বন্যপ্রাণী এনজয় করে কিন্তু তাদের কথা ভাবতে চায় না’
*** ওদের ট্রেন, মোদের ট্রেন

বাংলাদেশ সময়: ১০০৩ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৬
এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ