ঢাকা, রবিবার, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

সবুজ লেবুতে সতেজ সিলেটের বাজার

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৬
সবুজ লেবুতে সতেজ সিলেটের বাজার ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সিলেট: পথের ধারে থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে লেবু। সবুজ সতেজ লেবু দেখলে ছুঁতে মন চায় পথিকের।

হরেক জাতের এসব লেবু উঠেছে সিলেটের বাজারে। লেবুর স্বাদের ভিন্নতা, আকার ভেদে দামের পার্থক্য, জানালেন ব্যবসায়ীরা।

বৃহত্তর সিলেটের বাজারে যেসব লেবু পাওয়া যায়, তার মধ্যে ‘জারা’ সবচেয়ে দামি। একটি জারা লেবুর দাম ৩শ’ থেকে ৪ হাজার টাকাও রয়েছে। এছাড়া ঠনা, চায়না, রস, কাগজি, পাথি লেবু, আদা, কাঁটা, মাতু (বাতাবি), সাতকরা ও কমলা লেবুও বিক্রি হচ্ছে।

এসব লেবুর গুণগান জানেন এ অঞ্চলের মানুষ। সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় লেবুকে ‘জামির’ বলা হয় এবং এখানকার গ্রামাঞ্চলের লেবু এ নামে সমাদৃত। নগরীর লালবাজারের লেবু ব্যবসায়ী রুমন আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, জারা লেবু ৩শ’ টাকা থেকে শুরু করে হাজার টাকা রয়েছে। এর চেয়ে বড় লেবু এক একটি তিন/চার হাজার টাকাও বিক্রি হয়।

জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর থেকে এসব লেবু কিনে আনেন, জানালেন ব্যবসায়ী তোরন মিয়া। তবে অনেকে শ্রীমঙ্গল থেকে বিক্রির জন্য লেবু আনেন। কোন লেবুর কেমন স্বাদ তাও জানিয়ে দেন এ অঞ্চলের বাসিন্দারা।

জারা-লেবুটি আকারে অনেক বড় হয়ে থাকে। কৃষকরা ৫০ থেকে ৫শ’ পিস বিক্রি করে থাকেন। কিন্তু বাজারে আনার পর দাম হয়ে যায় দ্বিগুণ। অনেকটা মিষ্টি স্বাদের জনপ্রিয় এই লেবুটি ছাল ও রস দুটোই ভাতের সঙ্গে খাওয়া যায়। পাহাড় টিলা অধ্যুষিত অমিয় মাটিতে এর ফলন ভালো হয়।

ঠনা-লম্বা ধরনের লেবু। লেবুটির বাহিরে উঁচু-নিচু বা গুটি গুটি। এই লেবুর ঠনা (ছাল) ভাতের সঙ্গে খাওয়া যায়। বাজারে ঠনা লেবুর হালি (চারটি) ২শ’ টাকার মধ্যেই পাওয়া যায়।

চায়না- গোলাকৃতির লেবুটি দেখতে কমলা লেবুর মতো। এর ঘ্রাণ খুবই তীব্র। এর রস ভাতের সঙ্গে বা শরবত তৈরি করে খাওয়া যায়। এই লেবু এক হালি ২০-৩০ টাকায় পাওয়া যায়।  

রস, কাগজি ও পাথি- এই তিন লেবু প্রায় একই রকম। রস লেবু অনেকটা ঠনা লেবুর মতো। রস, কাগজি ও পাথি লেবু লম্বাকৃতির। সিলেটের শ্রীমঙ্গলে এসব লেবুর ফলন ভালো হয়। আদা লেবু- ঘাড় সবুজ রংয়ের। গোলাকৃতির এ লেবুটি মাছ, মাংস কিংবা অন্যান্য তরকারিতে দিয়ে খাওয়া হয়। এর সুন্দর ঘ্রাণ থাকলেও একটু বেশি তিতা যুক্ত। তাই সবাই খেতে পারেন না।

কাঁটা: ছোট ও গোল লেবুটির গুণ শুনলে অবাক হওয়ার মতো। খাদ্য হিসেবে লেবুটি ব্যবহৃত হয় না। তবে এর রস উচ্চ রক্তচাপের রোগীর জন্য একটি ওষুধ। ব্লাড প্রেসার বেড়ে গেলে এর রস মাথায় দিলে প্রেসার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

বাতাবি: অনেকটা ছোট ফুটবলের মতো লেবুটি সিলেট অঞ্চলে মাতু জামির বলেই সমাদৃত। এই লেবুর সার জড়ো করে লবণ, শুকনা বা কা‍ঁচা মরিচ, রসুন দিয়ে চাটনি তৈরী করে খাওয়া হয়। বৃহত্তর সিলেটের উঁচু-নিচু সব জায়গায় ও বাড়িতে এই মাতু গাছ দেখা যায়।

সাতকড়া: সিলেট অঞ্চলেই নয়- দেশ ও দেশের বাইরে রয়েছে সাতকড়ার সুনাম। সাতকড়া মাছ-মাংস মধ্যে দিয়ে রান্না করলে এর স্বাদই আলাদা। এর আচারের খ্যাতি রয়েছে বেশ। সিলেট অঞ্চলের লোকজন সাতকড়াকে ‘হাতকড়া জামির’ বলে থাকেন।

আর কমলার স্বাদ সবারই জানা। তবে, এখন বাজারে যে কমলা পাওয়া যায়, তা কমলা নয়, মাল্টা। এটি ভারত থেকে আমদানি করা হয়।

ব্যবসায়ীরা বলেন, শুকনা মৌসুমে কমলা লেবুর কিছু ফলন সিলেটের জাফলং সীমান্ত এলাকার খাসিয়া পুঞ্জিতে হয়। আর সাতকড়া সিলেটে হয় না। সাতকড়া ও বেশিরভাগ কমলা লেবু পাশের দেশ ভারত থেকে আসে।

বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৬
এনইউ/আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ