বান্দরবান থেকে: পাহাড়িরা আর পর্যটন বিমুখ নন। অনেকেই এখন পর্যটনে বিনিয়োগ করছেন বলে মন্তব্য করেছেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বনিক।
পর্যটনে বিনিয়োগের ফলে পাহাড়িরাও অনেক উপকৃত হয়েছেন। বদলে গেছে তাদের জীবনমান। অনেকে দোতলা বাড়িও করেছেন বলে জানান জেলার সর্বোচ্চ এ প্রশাসনিক কর্মকর্তা।
রোববার (২১ আগস্ট) সন্ধ্যায় তার বাংলোতে বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, পাহাড়িদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হচ্ছে। একসময় তারা এখানে পর্যটন বিকাশে আগ্রহী ছিলেন না। কিন্তু এখন আর আগের অবস্থানে নেই।
‘মেঘলা, নীলাচল, প্রান্তিক লেক ও চিম্বুকে গেলে অনেক পাহাড়ির দোতলা বাড়ি দেখতে পাবেন। উপরতলায় তারা নিজেরা থাকছেন, নিচতলায় দোকান আর রেস্টহাউজ করে ভাড়া দিচ্ছেন। এতে তাদের অনেক ভালো আয় হচ্ছে। বদলে গেছে তাদের জীবনযাত্রা। ছেলেরা অনেক দামী ব্র্যান্ডের মোবাইল ব্যবহার করছে। মেয়েদের পোশাকে-আশাক ও প্রসাধনীতে অনেক চেঞ্জ এসেছে। তাদের দিকে লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবেন, তারা আগের চেয়ে অনেক ভালো আছেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, তাদের এই উন্নতি দেখে অন্য পাহাড়িরা এগিয়ে আসছেন। আর এই এগিয়ে আসাতে দ্রুতই বদলে যাচ্ছে পার্বত্য এলাকার দৃশ্যপট। তারা বুঝে গেছেন, পর্যটন ছাড়া তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই তারা এখন পর্যটনে সহায়তা করছেন। আমার বিশ্বাস, এতে পর্যটন অনেক এগিয়ে যাবে।
বান্দরবান খুব দ্রুতই বদলে যাচ্ছে উল্লেখ করে বলেন, এখানে সমুদ্র আর পাহাড়ের গলাগলি। এখান থেকে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম অনেক কাছে তাই অন্য দু’টি পার্বত্য জেলার চেয়ে বান্দরবান সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। এখানে মানুষ আসবেই। এখানে যতো বেশি দেখার আছে আর কোথাও নেই। বান্দরবান আরেক দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে। তা হচ্ছে বান্দরবান একটি শান্তিপ্রিয় এলাকা। অন্য দুই জেলার মতো কখনই খুব একটা অশান্ত ছিলো না।
বান্দরবানে যোগদান করা বেশিদিন হয়নি। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে যোগদান করেছেন। মাত্র কয়েক মাস হলেও এরই মধ্যে স্থানীয়দের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছেন দিলীপ কুমার বনিক।
ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পর্যটনে উন্নয়নে ব্যস্ত সময় পার করেন। রোববার রাত ৮টায় তার বাংলোতে দেখা করতে গেলে দেখা যায়, তিনি গভীর মনোযোগ দিয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে ফাইল দেখছেন।
অনেক অফিসার যখন সহকারীদের কাঁধে ভর করে কাজ সারতে চান, দিলীপ কুমার বনিক তখন পুরোপুরি ব্যতিক্রম। ফাইলের সবকিছু খুটিয়ে দেখে এরপর সই করেন। এজন্য অফিস শেষে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বাসায় বসে ফাইল দেখতে হয়।
যতো রাতই হোক দিলীপ কুমার দিনের কাজ শেষ করে তবেই ঘুমাতে যান বলে জানালেন এনডিসি হোসাইন মুহাম্মদ আল-মুজাহিদ।
দিলীপ কুমার বনিকের হাত ধরে বদলে যেতে শুরু করেছে বান্দরবানের পর্যটন। এরই মধ্যে প্রান্তিক লেক ও চিম্বুক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এগুলো এখন অনেক বেশি পর্যটক উপযোগী করে তোলা হয়েছে।
আরও বেশ কয়েকটি স্পট আত্মপ্রকাশে পথে রয়েছে বলে জানান তিনি।
এ ছাড়া নীলাচলকে নতুন করে সাজানো হচ্ছে। মেঘলা পর্যটন স্পটে পর্যটকদের খাবারের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রেস্টুরেন্ট স্থাপন করা হয়েছে। এতে এই স্পটের প্রতি দর্শানার্থীদের আগ্রহ বেড়ে গেছে।
জেলা প্রশাসক জানান, পর্যটন স্পটের উন্নয়নের পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের আরও সচেতন করে তোলা হচ্ছে। গাইড তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য ট্রেনিং দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ডাটাবেজ।
সবুজে ঢাকা বান্দরবানকে আরও সবুজ করে তুলতে চান এই জেলা প্রশাসক। তাই বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম জোরদার করেছেন। শুরু করেছেন তার নিজের বাংলো থেকেই। লাগিয়েছেন পাঁচশো টব। আর চিম্বুকে রোপন করেছেন সাতশো গাছ।
বান্দরবানে দেখার যেমন অনেক কিছু রয়েছে। তেমনি অনেক সতেজ ফল ও টাটকা-সুস্বাদু খাবার অনেক কম দামে পাওয়া যায়। ট্যুরিস্টরা যেনো প্রতারিত না হন সেজন্য জেলা প্রশাসন কঠোর মনিটরিং অব্যহত রেখেছে বলে জানান তিনি।
বান্দরবানকে শাস্তিমূলক পোস্টিংয়ের জায়গা মনে করা হয়। আপনি কি এর সঙ্গে একমত? জবাবে বলেন, আগের সেই অবস্থা আর নেই। এখন পরিস্থিতি অনেক বদলে গেছে। অনেকে এলে আর যেতেই চান না।
বাংলাদেশ সময়: বাংলাদেশ সময়: ১০২১ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৬
এসআই/এসএনএস
** খাগড়াছড়িতে বিদ্যুৎ যায় না আসে-১
** খাগড়াছড়িতে বিদ্যুৎ যায় না আসে (শেষ পর্ব)