বান্দরবান থেকে: আঁকা-বাঁকা উঁচু-নিচু পাহাড়ের শরীর বেয়ে প্রায় দুই কিলোমিটার পথ উঠে গেছে নীলাচল পাহাড়ের চূড়ায়। হেঁটে উঠতে দম ধরে রাখা মুশকিল।
এমনটাই জানাচ্ছিলেন বান্দরবান জেলা প্রশাসনের এনডিসি হোসাইন মুহাম্মদ আল-মুজাহিদ। পর্যটনবান্ধব এ জেলার কিছু উদ্যোগী কর্মীর একজন তিনি।
প্রায় একশো একর জায়গার উপর অবস্থিত নীলাচল পর্যটন কেন্দ্র। জেলা প্রশাসন এটি দেখভালের দায়িত্বে।
জেলার পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে মেঘলা, শৈলপ্রপাত, চিম্বুকসহ যে ক’টি স্পটকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে তাদের মধ্যে অন্যতম মেঘের আঁচলে ভাসা পাহাড় চূড়া নীলাচল।
প্রশাসনের উদ্যোগ নিয়ে বলতে গিয়ে এনডিসি বলেন, আমাদের প্রথম কাজ এখান থেকে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গাটি মূল স্পট থেকে বের করে ফেলা। গাড়ির কারণে ভেতরের জায়গা কমে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বাইরে মাটি ভরাট শুরু হয়েছে। এটা সম্পন্ন হলে পর্যটকরা ভেতরে ঘুরে ফিরে শান্তি পাবে।
প্রথমে চূড়ায় একটি সুদৃশ্য গোলঘর নিয়ে শুরু করলেও দৃষ্টিনন্দন টেরাকোটা, বসা ও আড্ডা দেওয়ার জন্য তৈরি বিভিন্ন স্থাপনার পাশাপাশি পাহাড়ের উত্তর কিনারের ঢালে নির্মিত হয়েছে তিনটি রুচিশীল আধুনিক ইন্টেরিয়রের কটেজ। ২০১৫ সাল থেকে তিন বছরের জন্য ১৭ লাখ টাকায় ইজারা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন পাহাড়ে ঝুলছে। এর ঠিক পাশ দিয়ে পুব প্রান্তে তৈরি করা হয়েছে একটি ওয়াচ পয়েন্ট। এনডিসি নিজেই পরিকল্পনা করে করেছেন এটি। সঙ্গে রয়েছে তার নেশার বিভিন্ন গাছ লাগানো।
পশ্চিম প্রান্তের শেষে তৈরি হচ্ছে একটি ডরমেটরি। এখানের ৪১টি রুমে থাকতে পারবেন প্রায় শতাধিক পর্যটক। তবে এক্ষেত্রে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ কম খরচে বেশি মানুষ থাকতে পারারা বিষয়টিতে জোর দেওয়া হচ্ছে বলে জানান মুজাহিদ। এর কিছু আগে পাহাড়ের শরীরে ঝুলছে একটি ভিভিআইপি কটেজ। দু’টি রুম এতে।
এছাড়া জেলা প্রশাসনের গেস্ট হাউজটি পরিত্যক্ত। এটা ছাড়াই ডরমেটরি তৈরি হয়ে গেলে নীলাচলে আবাসনের ব্যবস্থা হবে প্রায় ১২০ জন মানুষের। ডরমেটরিটি জেলা প্রশাসন বানাচ্ছে একেবারেই সাধারণ মানুষের জন্য। জানান এ কর্মকর্তা।
এনডিসি বলেন, আবাসনের ব্যবস্থা এখানে আগে হলেও ছিলো না কোনো খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা। মাসখানেকের মধ্যে কটেজের পাশের রেস্টুরেন্টটি চালু করা হবে। এছাড়া পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে শিগগিরই বসবে দোলনা ও আরও কিছু বেঞ্চ। চারতলা ডরমেটরিটিতে যাওয়ার সিঁড়ি তৈরির কাজও শিগরিই শুরু হবে।
নীলাচলের পাশেই উদ্বোধন হতে চলেছে নতুন পানি শোধনাগার। এতে বিশুদ্ধ পানির আর অভাব থাকবে না। নীলাচলের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছেন নাজির বাপ্পী সরকার। সব মিলিয়ে ১৪ জন আছেন বিভিন্ন দায়িত্বে। মূল কমিটি জেলা প্রশাসন ও পার্বত্য জেলা পরিষদের সমন্বয়ে।
নীলাচল থেকে পাখির চোখে দেখা যায় সবুজের ফাঁকে গলে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো বান্দরবান শহর। শরতে মেঘেরা পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে এসে গাঁড়ে আস্তানা। লুটোপুটি খায় একে অন্যের শরীরে। পূর্ণিমা রাতেও এর রূপ অপরূপ। সূর্যাস্তও দেখা যায় এখান থেকে। শহর থেকে মাত্র আড়াই কিলোমিটার দূরের এ স্পট ঘিরে নানান পরিকল্পনা অন্য আবিষ্কৃত কিংবা সবে পরিচিত হয়ে ওঠা স্পট থেকে এগিয়ে রাখছে নীলাচলকে।
সুন্দর পরিপাটি গোছানো পরিবেশ। প্রায় ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে পাহাড় দেখার সুযোগ, সহজ যাতায়াত ব্যবস্থা আর জেলা প্রশাসনের আন্তরিকতায় নীলাচলই হতে চলেছে বান্দরবানের সবচেয়ে দর্শনীয় ট্যুরিস্ট স্পট। এনডিসি কিংবা নীলাচল ব্যবস্থাপকের এ দাবির সত্যতা মেলে নীলাকাশের নীচের এ সবুজ চাদরে ঢাকা পাহাড়তলে গেলে।
**খাগড়াছড়িতে সিস্টেমে বাঁশ!
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৬
এএ/জেডএস