বান্দরবানে থেকে: পাহাড়ের খাদের অন্ধকার ঝোপে তখন ঝিঁ ঝিঁ পোকার গান। মনাবেশী আধো আলোয় চেয়ার পেতে বসতেই একটি তক্ষক জানান দিলো সেও আছে প্রকৃতির কোলে।
প্রকৃতির গন্ধমাখা এমন আকুল করা পরিবেশে রাতের ভোজ সম্পন্ন হলো বান্দরবান জেলা প্রশাসন ও এনডিসি হোসাইন মুহাম্মদ আল-মুজাহিদের আতিথেয়তায়।
সবে উদ্বোধন হয়েছে। এখনও গোছানো বাকি অনেককিছুই। বাঁকে বাঁকে লুকিয়ে থাকা সৌন্দর্যের চট্টগ্রাম বান্দরবান মহাসড়কের মেঘলা রেস্টুরেন্টটির সামনের লনটিও সাজছে কেবল। কৃষ্ণচূড়াগুলো চোখ মেলে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। লাগানো হবে নতুন ঘাস। হাত ধোয়ার বেসিনটি বাইরে খোলা আকাশের নিচে। পাশে পাহাড়ের ঢালে বাঁশ দিয়ে গেঁথে তোলা হচ্ছে গোলঘর। উপরে বসবে ওম পাতার ছাতা। বাকি আরও হরেক পরিকল্পনা।
বান্দরবান শহরে ঢোকার চার কিলোমিটার আগের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র মেঘলা। সব থাকলেও ওই এলাকায় ছিলো না কোনো ভালো মানের রেস্টুরেন্ট। খাবার খেতে গেলে যেতে হতো সেই বান্দরবানে শহরে। পর্যটকদের সে কষ্ট লাঘবে অন্যতম উদ্যোক্তা যুবক সাইদুল ইসলাম আর সদা তৎপর এনডিসি মুজাহিদের পরিকল্পনায় বাস্তবায়ন হয়েছে জেলা প্রশাসনের এ রেস্টুরেন্টটি।
মুজাহিদ বলেন, পর্যটকদের আমরা সবসময় সেবা দিতে চাই। এটা তারই অংশ। এখানে খাবার না পেয়ে তাদের অনেক কষ্ট হতো। এখন সেটা আর হবে না। এখানে খাবারের দামও তুলনামূলক কম থাকবে। সবাই যেন খেতে পারেন। পাহাড়ের একেবারে অরক্ষিত একটি জায়গা সংস্কার করে এটি করা হয়েছে। আমরা এটাকে ইকো রেস্টুরেন্ট হিসেবে গড়তে চাই।
রেস্টুরেন্টের খাবারে সাধারণ খাবার থাকলেও পাহাড়ের স্থানীয় খাবারের প্রতি বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে বলে জানালেন সাইদুল। সকালের নাস্তায় জুমের চালের মুন্ডি, কলাপাতা পিঠা, পাটিসাপটাসহ নানা ধরনের পিঠা, ব্যাম্বো পিঠার পাশাপাশি থাকবে নিয়মিত পরোটা, সবজি প্রভৃতি। তবে পাহাড়ের ঐহিত্যবাহী বিভিন্ন খাবার খেতে গেলে আগে থেকে অর্ডার করতে হবে। দুপুর ও রাতে খাবারে চায়নিজ আইটেম, বাঙালি খাবার, বিভিন্ন পদের বিরিয়ানির পাশাপাশি থাকবে স্থানীয় বিভিন্ন পদ।
সাইদুলসহ তাদের ওয়েটাররা অত্যন্ত আন্তরিকতা নিয়ে খাওয়ালেন বিভিন্ন পদের সবজি, ভর্তা, মাংসের পদ। এই আন্তরিকতা দিয়েই সবার মন জয় করতে চান তারা।
পাতে তখন কলমি শাক আর টমেটোর চাটনি। ঝিঁ ঝিঁ পোকার সঙ্গে ততক্ষণে যোগ দিয়েছে তক্ষকটি। এনডিসি বললেন, আমরা আসলে প্রকৃতির সঙ্গে বসবাস করতে চাই। তাই আমাদের এ আয়োজন। কক্সবাজারের অন্যতম সেরা ইকো রিসোর্ট মারমেইডের নান্দনিক ডিজাইনার শাহীন সানী কাজ করেছেন ইন্টেরিয়রের। তবে পরিকল্পনার ১৫ শতাংশ আমরা এখনও করতে পারিনি।
সঙ্গে যোগ দিলেন সানী নিজেও। তিনি বলেন, যা করতে চাই তার জন্য আসলে অনেক টাকা দরকার। রেস্টুরেন্টটি চালু করে আস্তে আস্তে সব করতে চাই। পুরো রেস্টুরেন্ট কমপ্লেক্সটি চালু হলে বান্দরবানের রেস্টুরেন্টের ধারণা বদলে দেবে মেঘলা ক্যাফে।
আপাতত বাঁশ, শন, হোগলা পাটি, কাঠ, আদিবাসী টুকরি প্রভৃতি ব্যবহার করেই ইন্টেরিয়রের কাজ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এনডিসি মুজাহিদ জানান, পরিকল্পনা রয়েছে সামনে বাচ্চাদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা রাখার। খেতে বসে তারা যেন বিরক্ত না হয়। সামনে নানা ধরনের পাতাবাহার ও ফুলের গাছ থাকবে। পাহাড়ের খাদে ঝুলে থাকা কয়েকটি গোলঘর হবে চারপাঁচজন বসে একান্তে খাওয়ার জন্য। সামনে ওম পাতার বড় ছাতাও বসবে। একপাশে থাকবে একটি মঞ্চ। বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থীরা এসে যেন খাবারের পাশাপাশি গান বাজনা কিংবা বিভিন্ন অনুষ্ঠানও করতে পারে। রেস্টুরেন্টটির ঠিক নিচের খাদে লাগানো হবে কামিনী আর হাস্না হেনা। খাওয়ার সময় যেন একটি মিষ্টি গন্ধও নাকে আসে।
সব মিলিয়ে বান্দরবানের পর্যটকদের কাছে লোকাল খাবার ও পরিবেশনার ধারণা মেঘলা ক্যাফের পুরোপুরি কাজ সম্পন্ন হলে বদলে দেবে বলেই ধারণা এনডিসি মুজাহিদেরও।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৬
এএ