ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

ঝরনা নিজেই এসে মিশে গেলো শরীরে

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৬
ঝরনা নিজেই এসে মিশে গেলো শরীরে ছবি: আবু বকর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

হাজাছড়া ঝরনা খাগড়াছড়ি থেকে: দুইদিকে পাহাড়ের মাঝ দিয়ে আঁকাবাঁকা পথ। চড়া সূর্যরশ্মি গাছের পাতায় আড়াল করলেও কিছুটা ভ্যাপসা গরম অনুভব হচ্ছিল।

কিন্তু হাজাছড়া ঝরনার কাছে যেতেই শীতল অনুভূতির পরশে মন জুড়িয়ে গেলো। ঘন কুয়াশার সুক্ষ্ণকণা যেমন শরীরে অনুভূত হয়। ঠিক তেমনি পানির শীতল কনার আবেশে জুড়িয়ে যাচ্ছিল তপ্ত শরীর।

এসব জলকণা খালি চোখে দেখার সুযোগ নেই, অনুভব করা ছাড়া। প্রায় একশ’ বিশ ফুট উপর থেকে ঝরনার পানি নিচে পড়ার সময় সিঁড়ির মতো সতেরটি খাঁজে ধাক্কা খাচ্ছে। আর তাতেই তৈরি হচ্ছে হরদম শীতল কণা। যা প্রবেশ পথের উষ্ণতাকে শান্তির পরশে ছাপিয়ে দিয়ে যায়।

বেশিক্ষণ সেখানে থাকার কথা ছিল না। কিন্তু শান্তির এই পরশ কে ছাড়তে চায়! আমারা পারলাম না সাড়া না দিয়ে। মিনিট ত্রিশেক সময় পার হতেই হালকা শীত অনুভূত হতে থাকে। যা কৃত্রিম এয়ারকুলারের মাত্রায় বিশ-বাইশের মতো মনে হচ্ছিল।

মাধবকুণ্ড যারা দেখেছেন হাজাছড়া কিন্তু একেবারে ভিন্ন প্রকৃতির  ঝরনা। মাধবকুণ্ডের উৎস মুখে যাওয়া যায় না ধসের আশঙ্কায়। সতর্ক করা হয় নিরাপদ দূরত্বে থাকার জন্য। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও রয়েছে কঠোর নজরদারি। সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে ‘বিপদজনক’ সাইনবোর্ডও।

কিন্তু এখানে তার কোনো বালাই নেই। লোকজন ঝরনার ঠিক নিচে পাহাড়ে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আসে। আর পানি এসে আছড়ে পড়ছে তাদের মাথা ও পিঠে।

পতিত মুখও খুব বেশি গভীর নয়। সে কারণে পানিতে নামারও কোনো ভীতি নেই। তিনদিকে পাথুরে পাহাড় হওয়ায় ঝরনার পানি এতই স্বচ্ছ ঢোক গিলেই স্বাদ পরখ করা লোভ সংবরণ করা কষ্টকর।
 
পতিত মুখটি অনেকটা গুহার মতো। তিনদিকে শক্ত পাহাড়, তাই ধসের কোনো শঙ্কা নেই বললেই চলে। আর পাহাড়গুলো সেগুনসহ বাহারি বৃক্ষে আচ্ছাদিত।
খাগড়াছড়ি থেকে বাংলার দার্জিলিং খ্যাত সাজেক যাওয়ার পথে হাজাপাড়া নামক স্থানে অবস্থিত এই ঝরনাটি। যে কারণে স্থানীয়দের কাছে হাজাছড়া ঝরনা নামে পরিচিত।
 
পাকা রাস্তা থেকে মিনিট পনের হাঁটা পথ। দুই পাহাড়ের কোল ঘেঁষে একটি ট্রেইল পৌঁছে গেছে ঝরনার পতিতমুখে। এঁটেল মাটি হওয়ায় বৃষ্টির পর চলতে গেলে কাঁদা মাড়াতে হয়। খানিকটা পিচ্ছিল হওয়ায় অসাবধান হলেই পা পিছলে গড়াগড়ি খাওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট। সে কারণে এখানে হাতে মুলি বাঁশের লাঠি দিয়ে যাওয়ার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে।

তবে হাঁটু পানির ঝিরি ধরে ঝরনার উৎসমুখে যাওয়ার মজাও অসাধারণ। স্বচ্ছ পানির তলদেশে কাঁকর-বালির মিশ্রণ দারুণ উপভোগ্য। ট্রেইলের চাইতে ঝিরি ধরে হাঁটলে কয়েক মিনিট আগেই পৌঁছে যাবেন গন্তব্যে। অনেকেই ঝিরি ধরেই পৌঁছে যাচ্ছেন পতিত মুখে।

যাদের ঘুরে বেড়ানো ও ঝরনার পানিতে গোসল করার সখ। তারা চোখ বুজে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন হাজাছড়া ঝরনার নাম। খাগড়াছড়ি থেকে সিএনজি ও চান্দেরগাড়ি যোগে যাতায়াত করা যায়। সারা বছরেই পানির প্রবাহ থাকে। তবে বর্ষা মৌসুমে থাকে যৌবনা।

এখানে ঝরনা উপভোগের পাশাপাশি রয়েছে ভোগেরও দারুণ বন্দোবস্ত। প্রধান সড়কের উপর মিলবে তাজা ও টসটসে পাকা কমলা, মাল্টা, জাম্বুরা, পেপে, কলা, শষাসহ পাহাড়ি ফলমূল।

পাশেই গাছের ছায়ায় পাতানো রয়েছে মুলি বাঁশের টং। সেখানে বসে স্বল্পমূল্যে নির্ভেজাল-বিষমুক্ত এসব খাবারে উদরপূর্তি করতে পারবেন অনায়াসে। দারুণ এক সময় কাটবে। যা সারাজীবনের জন্য রেখা টেনে দিয়ে যাবে। বারবার ফিরে আসতে মন চাইবে এখানে।
 
তাইতো ঢাকার খিলগাঁও থেকে ফারুক হোসেন শুক্রবার তৃতীয়বারের মতো এসেছেন হাজাছড়া ঝরনা দেখতে। তার মতে বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উপভোগ্য এই ঝরনা। কেন পছন্দের তালিকায় এক নম্বরে রেখেছেন তার ব্যাখ্যাও করলেন ফারুক হোসেন।

তিনি বাংলানিউজকে জানান, এই ঝরনাটি অনেক খাড়া। আর কোথাও এমনটি নেই। আর পাথুরে পাহাড় হওয়ায় কোল ঘেঁষে দাঁড়াতেও ভয় শঙ্কা কাজ করে না। তাইতো বারবার ফিরে আসি।

এই ঝরনায় যাওয়ার পথেই পড়বে তৈদূছড়া ঝরনা। তবে তৈদূছড়া ঝরনা পরখ করতে হলে হাঁটতে হতে প্রায় আড়াই কিলোমিটার পথ।

** 'জিরাফ গলার' ঝুলন্ত সেতুর আকর্ষণও কম নয়
** রেল স্টেশনে বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানি

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৬
এসআই/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ