ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

লেকের ধারে পাহাড়পাড়া, মেঘের কোলে স্বর্গীয় লীলাভূমি!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৬
লেকের ধারে পাহাড়পাড়া, মেঘের কোলে স্বর্গীয় লীলাভূমি! ছবি: আবু বকর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কাপ্তাই লেক ঘুরে: সবুজ, শ্যামল, নীলাভ এখানকার প্রকৃতি। প্রতি ক্ষণে ক্ষণে বদলায় সেই প্রকৃতির রঙ ও রূপ।

হয়ে উঠে আরও মোহনীয়-মায়াময়।

সুউচ্চ পাহাড়-টিলার চূড়া থেকে হঠাৎ নেমে গেছে বাঁকা পথ। ভং-আতঙ্কে ছমছমে শরীরে এগিয়ে গেলে সবুজে ঘেরা সুড়ঙ্গের মতো পথ, পাড়ি দিতেই হঠাৎ দেখা মিলছে দূর পাহাড়ের ওপর সাদা মেঘের ভেলা।

আর কখনও কখনও লেকের স্বচ্ছ জলে ভেসে উঠছে পাহাড়সুদ্ধ সেই মেঘের ছবি। এখানে পাহাড়-লেক আর মেঘের খেলা, সেই খেলায় রঙের মেলায় মন হারিয়ে যাওয়ার স্থানটির নাম কাপ্তাই লেক।
উঁচু-নিচু পাহাড়ি পথের ধারে কয়েকশ’ ফুট নিচে তাকালে ছমছম করে উঠবে শরীর। এই ভয়ঙ্কর দৃশ্যের মধ্যে ছোট বড় অসংখ্য পাহাড়, টিলা আর গিরিপথ নিয়ে গড়ে ওঠা প্রকৃতির এক অপরূপ সৃষ্টি কাপ্তাই লেক। যার সৌন্দর্য লিখে বা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। এখানে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের চোখে-মুখে উচ্ছ্বাস, থাকছে উল্লাসের ছাপ।
 
খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের পাহাড়ি পর্যটনের উপাদানগুলোর মধ্যে রাঙ্গামাটির কিছুটা পার্থক্য রয়েছে; এখানে মেঘ, পাহাড় আর জলাভূমি দেখা যাবে একই সঙ্গে। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে ঘন সবুজের মাঝ দিয়ে চলা ঢালু পথগুলোই অন্য পাহাড়ি পর্যটন থেকে একে করে তুলেছে অনন্য।     রাঙ্গামাটি শহর থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশা নিয়ে বেরিয়ে প্রথমেই পড়বে আইভরি পার্ক, তবলছড়ি এবং আসাম বস্তি ব্রিজ। এই আঁকাবাঁকা ব্রিজটিই প্রথমে কাড়বে পর্যটকের আকর্ষণ। এই ব্রিজ থেকেই জলের ওপর দিয়ে দেখা যাবে দূর পাহাড়ের সারি। সবুজের ‍ওপর কুয়াশাচ্ছন্ন পাহাড়ের মনোরম দৃশ্য পর্যটককে করবে বিমোহিত।

উঁচু পথে একটু এগুতেই মানিকছড়ি পাহাড়। আঁকাবাঁকা উঁচু পথ ধরে এগুতে এগুতে দু’ধারে চোখে পড়বে ঘন সবুজ বৃক্ষরাজি। আবার হঠাৎ করেই নিচে নেমে গেছে সড়ক, সুউচ্চ টিলা থেকে দেখা যায় পাহাড়ি সৌন্দর্য।    
আর একটু গেলেই মানিকছড়ি ব্রিজ, যা যুক্ত করেছে দুই পাশের দুই লেককে। এই ব্রিজের কাছে তাজা আস্ত বড় বড় ডাব বিক্রি করছেন স্থানীয় একজন। ব্রিজের ওপর থেকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে সেখানে সস্তায় তৃষ্ণা মেটাচ্ছেন পর্যটকেরা।
 
রঞ্জন তনচঙ্গা নামে ওই ডাব বিক্রেতা বললেন, সামনে আরও সুন্দর পরিবেশ। ব্রিজের ওপর থেকে দেখা যায় পাহাড়িদের নৌকা দিয়ে লেকে মাছ ধরার দৃশ্য। ব্রিজের নিচে মাছ ধরছিলেন কয়েকজন জেলে। তাদের একজন ইমরান। তিনি বলেন, চাপিলা, কৈ, কাতল, রুইসহ নানা জাতের বড় বড় মাছ পাওয়া যায় এই লেকে।

সর্পিল পথ ধরে আর একটু এগুলে বড়াদাম এলাকার চাকমা বাজার। সেখানে পাহাড়িরা নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। এখান থেকে চোখ ভরেই দেখা যায় লেক, পাহাড় এবং মেঘের সারি।
 
পাহাড়ি ঢালু পথ বেয়ে এরপর আসবে আরসিসি গার্ডার ব্রিজ। ঝাগড়াবিল ও বড়াদামকে যুক্ত করা ব্রিজ থেকেও সৌন্দর্যের তৃষ্ণা মেটান পর্যটকরা। আর চোখে পড়বে মোরঘোনায় লেকের পানির ওপর মাথা তুলে থাকা বনভান্তের স্মৃতিস্তম্ভ। ষাটের দশকে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ নির্মাণের ফলে লেক তৈরির সময় অন্য গ্রামের মতো বনভান্তের জন্মভিটা বারোঘোনাও ডুবে যায়। এখানে চাকমাদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।

সৌন্দর্যের লীলাভূমি পেরোতে পেরোতে নির্জন পথে মাঝে মধ্যে চোখে পড়বে দু’একজন পাহাড়ির চলাফেরা। আর মূল পথ থেকে হঠাৎ করে সুড়ঙ্গের মতো পথ নেমে গেছে কোনো টিলার ওপর ছোট ছোট গ্রামের মধ্যে। আরও চোখে পড়বে বৌদ্ধ বিহার, চাকমাদের টঙ দোকান।

পথের মোড় ঘুরিয়ে একটু এগিয়ে গেলেই চোখে পড়বে উড়াল সেতু। সেখানে কার্গোর মাধ্যমে এপার থেকে রাস্তার ওপর দিয়ে লাখ লাখ বাঁশ নেওয়া হচ্ছে কর্ণফুলী নদীতে। আর সেখান থেকে যাচ্ছে কর্ণফুলী পেপার মিলে। নৌপথে বয়ে নিয়ে যাওয়া সারি সারি বাঁশ দেখেও মুগ্ধ হবেন পর্যটক।
আরও এগুলে মিলবে কালের সাক্ষী ঐতিহাসিক কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র। অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করলে লেকের পানিকে আটকে রেখে বিদ্যুৎ তৈরির প্রক্রিয়া দেখতে পাবেন পর্যটকরা। লেকের পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহার হয়ে তার স্রোত গিয়ে পড়ছে কর্ণফুলীতে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রের সামনে কাপ্তাই বাজারের জেটিঘাটে পাশের বিলাইছড়ি থেকে আসছে নানা পণ্য, জেলেরা ধরছেন মাছ। এখান থেকেও পর্যটকদের জন্য রয়েছে নৌকায় ভ্রমণের সুযোগ।

এই বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়াও পর্যটকদের জন্য আরও আকর্ষণীয় স্থান নৌবাহিনীর লেক প্যারাডাইস। জনপ্রতি ২০ টাকার টিকিটে ভেতরে গেলে সত্যিই তা স্বর্গীয় অনুভূতি! সেখানে রয়েছে পিকনিক স্পট, সুইমিং পুল, বরশি দিয়ে মাছ ধরাসহ নানা ব্যবস্থা। এখানে পর্যটকদের জন্য আবাসনেরও ব্যবস্থা রয়েছে।
 
এরপর সেনাবাহিনীর আরেকটি বিনোদন স্পট। এখানেও ২০ টাকায় প্রবেশ করে পাহাড়, লেকের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন পর্যটকরা। সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে রাত্রিযাপনেরও সুব্যবস্থা। দিন ফুরালে কাপ্তাই লেক, জোছনা আর আকাশের সৌন্দর্য যেন একাকার হয়ে যায়। অপরূপ এই সৌন্দর্য উপভোগের জন্য ঢাকা থেকে সরাসরি কাপ্তাই বা ঢাকা থেকে রাঙ্গামাটি হয়ে সরাসরি বাসে যাওয়া যায় কাপ্তাই বাজার। পাহাড়, লেক এবং একই সঙ্গে মেঘের ভেলা দেখতে শীতকালেই পর্যটকদের ঢল নামে কাপ্তাই লেকে।

পুরো কাপ্তাই লেক এলাকা ঘুরে সন্ধ্যার মধ্যে সেখান থেকে যাত্রা শুরু করলে নিরাপদেই পৌঁছানো যাবে রাঙ্গামাটি শহরে। সেখানে পর্যটন মোটেল ছাড়াও কিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে।

তবে একটি বিষয় মনে রাখা ভালো, বেশ কয়েকটি পয়েন্টে ডাকাতি ছাড়াও বন্যহাতির উপদ্রব রাতের সড়ককে করে তুলতে পারে বিপজ্জনক।

** ঝরনায় ফেলছে বোতল-প্লাস্টিক, দেখার নেই কেউ?
** টাকার গাছ!
**পাহাড়ি ঝরনায় পর্যটকের সঙ্গী যখন মুলি বাঁশ
** পাহাড়িদের প্রিয় খাবার নাপ্পি’র সাতকাহন

** সাদা রঙের হলুদ আর আদা ফুল অনন্য, পর্যটকের কাছেও আকর্ষণীয়
**  ভরা মৌসুমে পর্যটক টানছে পাহাড় ঘেরা খাগড়াছড়ি
** পাহাড়ে উদ্ভাবিত ফলের জাত ছড়াচ্ছে সারাদেশে

বাংলাদেশ সময়: ১০১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৬
এমআইএইচ/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ