ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

মোহম্মদীয়া হোটেলে জুরাছড়ির পর্যটন বাধা দূর!

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৬
মোহম্মদীয়া হোটেলে জুরাছড়ির পর্যটন বাধা দূর! ছবি: আসাদ জামান/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

জুরাছড়ি (রাঙ্গামাটি) ঘুরে: অনিন্দ্য সুন্দর জুরাছড়ি দেখতে যাওয়ার আগে পর্যটকদের কপালে যে চিন্তার বলিরেখা অঙ্কিত হয়, তার মূলে রয়েছে খাদ্যচিন্তা।  

রাঙ্গামাটি শহর থেকে ৩৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত জুরাছড়িতে একবার ঘুরে আসতে কম করে হলেও ১০ ঘণ্টা সময় লাগে।

এর মধ্যে ৬ ঘণ্টা-ই থাকতে হয় বোটে।  
 
ইঞ্জিনচালিত এই বোটে খাবারের কোনো ব্যবস্থা নেই। জুরাছড়িতেই একবেলা খাবারের বন্দোবস্ত রাখতে হয় পর্যটকদের জন্য।  
 
কিন্তু পশ্চাদপদ অনগ্রসর হালকা জনবসতির জুরাছড়িতে বাণিজ্যিকভাবে খাবারের হোটেল চালুর কথা কারো চিন্তাতেই আসে না। আর আসবেই বা কেন?- প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪১ জন মানুষ যেখানে বাস করে সেখানে হোটেল থেকে খাবার কিনে খাওয়ার লোক কই?
 
কেবল পযর্টকদের টার্গেট করে খাবার হোটেলে বিনিয়োগ করার মত উদ্যোক্তা অন্তত জুরাছড়িতে নেই। অন্য অঞ্চল থেকে গিয়ে জুরাছড়িতে বিনিয়োগ করবে-সেটা ভাবাটাও অমূলক। কারণ, এত বেশি পর্যটকের আনা-গোনা নেই জুরাছড়িতে।  
 
তাই অ্যাডভেঞ্চার-প্রিয় যেসব পযর্টক জুরাছড়িতে যেতেন, তাদের পড়তে হতো খাদ্য সমস্যায়! সম্প্রতি এই সমস্যার অনেকটা সমাধান এনে দিয়েছে এস এম মোহম্মদ আলীর ‘হোটেল মোহম্মদীয়া’।
 
খুব জাঁকজমকপূর্ণ কিছু নয়! হোটেলের সামনেও নেই কোনো সাইনবোর্ড। মুদি দোকানের সম্প্রসারিত অংশে ৫-৬টি টেবিলে ১৫-২০টি চেয়ার পেতে দিয়ে হোটেল ব্যবসা করছেন এস এম মোহস্মদ আলী। তাকে সহযোগিতা করছেন রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজে পড়ুয়া ছেলে ফরহাদ হোসেন ও ভাতিজা বেলাল হোসেন।  


 
মোহম্মদীয়া হোটেলের বিশেষত্ব হলো এই- এখানে চাইলেই খাবার পাওয়া যাবে না। অন্তত ঘণ্টাখানেক আগে গিয়ে বলতে হবে। খাবারের মেন্যুও পছন্দ মত হবে না। নির্দিষ্ট দিনে হোটেল কর্তৃপক্ষ যে মেন্যু আয়োজন করবেন, সেটিই খেতে হবে পযর্টকদের।  
 
অর্থাৎ খাবার রান্নার অর্ডার দিতে গেলে হোটেল কর্তৃপক্ষ বলবেন, আজ মুরগি ও রুই মাছ আছে। কোনটা খাবেন, ক’জনে খাবেন? অর্ডার দিন রান্না করে দিচ্ছি। অথবা আজ ইলিশ মাছ ও গরুর মাংস আছে, কী খাবেন, ক’জনে খাবেন? অর্ডার দিন রান্না করে দিচ্ছি!
 
কেন এই ব্যবস্থা? মূলত ভোক্তাদের মুখে টাটকা জিনিস তুলে দেওয়ার জন্য এস এম মোহম্মদ আলী এই ব্যবস্থা চালু করেছেন। তার নিয়মিত ভোক্তাদের মধ্যে উপজেলা কর্মকর্তারা আছেন। খাবার যদি বাসি-পচা হয়, তাহলে ‘ইজ্জত’ থাকবে না।  
 
মোহম্মদীয়া হোটেলের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো- খাবারের সবগুলো আইটেম রান্না হয় মাটির চুলায় লাকড়ি দিয়ে। ঘরোয়া পরিবেশে রান্না করা এ খাবারের স্বাদও হয় ঘরের খাবারের মত। পরিবেশন ভঙ্গিও দারুণ! এক টেবিলে যে ক’জনই বসুক না কেন- একটা বোলে ভাত, আরেকটিতে মাছ-মাংস বা সবজি দিয়ে যাবে। যার যতটুকু প্রয়োজন তুলে খাবে। কম খাক, বেশি খাক একই রেটে বিল করা হবে।
 
মোহম্মদীয়া হোটেলের খাবারে দামও বিস্ময় জাগানিয়া। যে মাছ সাধারণ হোটেলে ১২০ টাকা, সেটি মোহম্মদীয়া হোটেলে মাত্র ৬০ টাকা। যে মুরগির মাংস সাধারণ একটা হোটেলে দেড় শ’ থেকে ১ শ’ আশি টাকা, সে মুরগির মাংস মোহম্মদীয়ায় খাওয়া যাবে মাত্র ৮৫ টাকায়।  
 
 
মাছের মাথা অথবা মুরগির গিলা-কলিজা দিয়ে রান্না করা এক বাটি সবজির দাম মাত্র ৬০ টাকা, যা দিয়ে অনায়াসে ৩ জন মানুষ ভাত খেতে পারবেন। আর ভাতের মানটাও অনেক ভাল।  
 
রান্না ঘরের অপরিচ্ছন্নতার জন্য বড় বড় হোটেলে মাঝে মধ্যেই যখন জরিমানা করা হয়, সেখানে মোহম্মদীয়া হোটেলে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে রান্না ঘরে।  
 
কেন এই ব্যবস্থা? এস এম মোহম্মদ আলীর সরল উত্তর- কোথায় রান্না হচ্ছে? কীভাবে রান্না হচ্ছে, সেটা কাস্টমারের দেখা উচিত। ঘুরতে এসে কেউ বাসি পচা খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে তার ভ্রমণ আনন্দ মাটি হয়ে যাবে- একজন মানুষ হিসেবে এটা আমি চাই না।  

**এটি কিন্তু জুরাছড়ি!
** হাজারছড়ায় পযর্টকের অপেক্ষায় আফিদা

** পাহাড়ে নিরুত্তাপ হরতাল
** সময় বশীভূত ইউএস বাংলায়!
** বিজিবির আতুরঘরে
** আলুটিলা রহস্যগুহায় গা ছমছমে অনুভূতি 

 
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৬
এজেড/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ