ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

আকাশছোঁয়া পাহাড়ি পথে রুমা

শামীম হোসেন, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৬
আকাশছোঁয়া পাহাড়ি পথে রুমা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বগালেক, বান্দরবান থেকে: পাহাড়ি পথে চলতে হলে চান্দের গাড়িই ভরসা। পাহাড়ের সরু-উঁচু নিচু পথে চান্দের গাড়ির কোনো বিকল্প নেই।

আমরাও বান্দরবান টু রুমা যাওয়ার উদ্দেশে চান্দের গাড়িতে উঠলাম সকাল সোয়া ৯টায়।  

গাড়িতে উঠে মনের মধ্যে উদ্দীপনা কাজ করছিল। গন্তব্য যখন বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচুতে থাকা সাধু পানির হ্রদ বগালেক এবং একসময়ের সর্বোচ্চ পাহাড়ের চূড়া  কেওক্রাডং, তখন উদ্দীপনা না থেকে উপায় আছে?

চান্দের  গাড়ির খোলা জিপে করে চিম্বুক রোড ধরে রুমার পথে গাড়ি ছুটছে। আঁকা-বাকা সরু পাহাড়ি পথের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে থাকা সৌন্দর্য দেখে গলা ছেড়ে গান গাইতে থাকলো কেওক্রাডং অভিযাত্রী দলের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হুসাইন আজাদ।

বান্দরবার থেকে রুমা বাজারের উপজেলার দূরত্ব প্রায় ৪৫ কিলোমিটার। তবে আমাদের নামতে হবে রুমা সদরঘাটে। সদরঘাট নামটা শুনে ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের কথা মনে পড়লো। এ রুটের একমাত্র অভিজ্ঞ সহযাত্রী রিয়াসাদ সানভী বললেন, এটা সেই সদরঘাট না। তবে পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে যাওয়া একমাত্র বাঙালি নদী সাঙ্গু (কেউ কেউ আবার একে শঙ্খ বলে চেনে) নদীতে নৌকা/স্টিমার চলে।

চিম্বুক-থানছি রোডের দু’ধারে মাথা উঁচু করে থাকা সেগুন আর কলাবাগান দেখতে দেখতে গাড়ি লাইমি পাড়া পৌঁছালো। এ পথে অসংখ্য ছোট ছোট রিসোর্ট রয়েছে। বিশেষ করে নীলগিরি পর্যন্ত বিভিন্ন কোম্পানির এসব রিসোর্টের সাইনবোর্ড চোখে পড়বে।

চলতি পথে প্রথমবারের মতো শঙ্খ নদীর দেখা মিললো। পাহাড়ের ওপর থেকে আঁকা-বাকা শঙ্খকে সর্পিল ‍সুন্দর লাগছিল। জানা মতে, এটাই একমাত্র নদী যার উৎপত্তি ও শেষ বাংলাদেশেই।  

আগেই শুনেছিলাম রুমা-বগালেক যাওয়ার পথে অসংখ্য শৈলপ্রপাত এবং ঝিরি দেখতে পাবো। প্রথমেই দেখা মিললো শৈলপ্রপাতের। যদিও এখন এ প্রপাতে পানি কম, তবুও পর্যটকের কমতি মনে হয়নি। প্রপাতের পাশের রোডে পর্যটকবাহী গাড়ির সারির কারণে আমাদের খানিকক্ষণ থামতেও হলো।  

শৈলপ্রপাত পার হয়ে কিছুদূর যেতেই আবার থামতে হলো। পাহাড়ি সরু পথে দু’টি গাছবাহী ট্রাক সাইড দিতে গিয়ে আটকে গেছে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কিছুক্ষণ বাহাসের পর আবার পাহাড়ি পথে ছুটে চললো চান্দের গাড়ি।  

বর্ষায় এমনিতেই চলা দুঃসাধ্য। এরপর যদি হয় পাহাড়ি পথ, তাহলে কি আর কথা থাকে? বৃষ্টির কারণে রাস্তার অনেক জায়গায় ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য সব গাড়িকে সাবধানে চলতে হয়। একঘণ্টার মধ্যে আমরা বিথানি পাড়া পৌঁছালাম। এখানে যাত্রীছাউনিতে দেখা গেল পাহাড়ি বিভিন্ন ধরনের ফল (পেপে, আনারস, কমলা) স্তূপ করে রাখা। দেখে খাওয়ার লোভ লাগলো, কিন্তু ততক্ষণে গাড়ি অনেকদূর চলে গেল।  

পাহাড়ের ওপর থেকে ডান পাশে যতদূর চোখ যায় শুধু মেঘ আর মেঘ চোখে পড়ে। আবার দেখা যায় কোনো পাহাড়ে রোদ আর অন্যটাতে ছায়া। নোয়াপাড়া যাত্রী ছাউনির কাছাকাছি এসে কানে ভেসে এলো গানের আওয়াজ।  

একটু পরেই দেখা মিললো একদল অভিযাত্রী সাতটি জিপে করে করে বান্দরবানের দিকেই যাচ্ছে। আমাদের অভিযাত্রী দলের আরেক সদস্য জনি সাহা হাত নেড়ে তাদের উচ্ছ্বাসের জবাব দিলেন।

পাহাড়ি এ রাস্তায় যেতে যেতে চোখে পড়বে অসংখ্য ছোট-বড় বেইলি ব্রিজ। চলতে চলতে ওয়াই (Y) জংশনের কাছে এসে পৌঁছলাম। এখানে বাম পাশের রুমা আর ডান দিকের রোড গেছে নীলগিরির দিকে।

গন্তব্য যেহেতু রুমা-বগালেক-কেওক্রাডং সেহেতু বামেই যেতে হলো আমাদের। ওয়াই জংশনের পাশে সেনাবাহিনীর একটি ক্যাম্প রয়েছে। এখানে পর্যটকদের নাম-ঠিকানা এন্ট্রি করে যেতে হয়। আমাদের টিম লিডার আসিফ আজিজ গিয়ে প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ফিরলেন। এসেই জানালেন, ওখানে একটি ময়নাপাখি দেখেছে। বিক্রির জন্য রাখা। সঙ্গে সঙ্গে আমি ওটা কেনার আগ্রহ দেখালাম। আমাকে থামিয়ে দিয়ে প্রকৃতিপ্রেমী আসিফ ভাই পাখি পুষতে নিরুৎসাহিত করলেন।

রুমা রুটে চোখে পড়লো যাত্রীবাহী বাসের। পূর্বালী পরিবহন নামে এ বাস যাত্রী নিয়ে বান্দবানের দিকেই যাচ্ছে। জানা গেল, এ রুটে কয়েকটি বাস চলাচল করে। তবে এ বাসের জন্য যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়।

রুমার পথে কিছুদূর যেতেই চোখ পড়লো পাহাড় ধসের চিত্র। কয়েকমাস আগে এখানে পাহাড় ধসে রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সামনে কিছুদূর চলতেই চোখে পড়লো মুরং বাজার। তবে নামে মুরং বাজার হলেও এখানে বেশির ভাগ বাঙালি বলে জানা গেছে।

পাহাড়ের ওপর থেকে আশপাশের পাহাড়গুলোতে জুমচাষের চিত্র দারুণভাবে দেখা যাচ্ছিল। জুমের ভেতর কয়েকটি ছোট ছোট ঘরও চোখে পড়লো। জানা গেল, এগুলোতে জুমিয়ারা বিশ্রাম নেন এবং কখনো কখনো রাতে পাহারা দেন। চলতে চলতে আমরা প্রায় রুমা বাজারের কাছে এসে পৌঁছালাম।  

একটু পর গাড়ি চালক জিপ থামিয়ে দিয়ে জানালো এখানেই নামতে হবে। ১ নং সদরঘাট রুমা বাজার, আমাদের চান্দের গাড়ির যাত্রার সমাপ্তি হলো। সদরঘাট থেকে রুমা বাজারের দূরত্ব ২-৩ কিলোমিটার হবে। গাড়ি না পেয়ে আমরা হেঁটেই রওয়ানা দিলাম।  

একটু পথ যাওয়ার পার একটা পিকআপ ভ্যান মিললো। ইশারা দিতেই নিতে রাজি হলো, ব্যস উঠে পড়লাম। তবে কিছুদূর যেতেই আবার নেমে পড়তে হলো। তিনি আর যাবেন না। আবারও ১৫ কেজি ওজনের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে হাঁটা শুরু। তবে আমাদের ভাগ্য ভালো হওয়ায় আবারও একটি ফোর হুইলার গাড়ি পেলাম। সেই গাড়িতে চেপে একেবারে রুমা বাজার। আসল যাত্রা তো এই রুমা বাজার থেকেই…।
 

** ঝুলন্ত ব্রিজ পার্কের অব্যবস্থাপনায় বিরক্ত পর্যটক
** মেঘ-পাহাড়ের অকৃপণ সৌন্দর্যের আধার খাগড়াছড়ি
** পর্যটকদের কাছে খাগড়াছড়ির ফল-সবজির কদর
**অনাবিল শান্তি শান্তিপুর অরণ্য কুটিরে

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৬ 
এসএইচ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ