ঢাকা, শনিবার, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জুন ২০২৪, ২১ জিলহজ ১৪৪৫

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

বগালেকে রাতে অ্যাডভেঞ্চারাস ট্রেকিং

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৬
বগালেকে রাতে অ্যাডভেঞ্চারাস ট্রেকিং ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বগালেক (বান্দরবান) থেকে: এগারো মাইল (জায়গার নাম) এলাকায় ল্যান্ড ক্রজার যখন নামিয়ে দিলো তখনই তেজ হারিয়ে পাহাড়ের কোলে সূর্য্যিমামা। হাঁটা পথে সামনে এগিয়ে স্বৈরপাড়া এলাকায় যেতে যেতে চাঁদের প্রহর গণনা শুরু।

আর কমলাপাড়া এসে পাহাড়ি পেয়ারা ও কলায় শক্তি সঞ্চার করতে করতে অন্ধকারে গা ছমছম অবস্থা।

খানিক আগে ঝড়ে যাওয়া বৃষ্টির পানিতে সৃষ্টি কাদায় পা আঁকড়ে ধরছে, ঠেলে দিচ্ছে পেছনে। পাহাড় ঘেরা অন্ধকার পথে ট্রেকিং করে উঠতে হবে ১২শ’ ফুট উপরে। গায়ের লোমে কিছু একটা অনুভূতি বয়ে গেলো। দলের ছয়জনের (গাইডসহ) অনেকেরই ট্রেকিংয়ের অভিজ্ঞতা না থাকায় দূরত্বটা মনের ওপর ভর করলো।

রাতের ট্রেকিং, চারদিকে অন্ধকার, পাহাড়ের পথে দু’পাশের গাছপালায় এগিয়ে যাওয়ার পথটা অস্পষ্ট। উপায় নেই, পৌঁছাতে হবে গন্তব্যে। তবে বগালেকের পথে মূল ট্রেকিংটা যখন শুরু তখন মাথার উপর বৃষ্টির ‘হুমকি’। গাইড বললেন, আত্মবিশ্বাস হারালে চলবে না।

সবাই একসঙ্গে, এই নীতিতে রাতের গহীন অন্ধকারে ট্রেকিং শুরু। গাইডকে পেছনে দিয়ে শুরু পাহাড় ভাঙা। সরু পথে বনের মধ্য থেকে ঝিঁঝিঁপোকা রাতের নীরবতা ভেঙে আপন ছন্দে গান গেয়ে যাচ্ছিলো। আঁকা-বাঁকা রাস্তায় অন্ধকারে কলা আর দু’একটি জবা ফুলের গাছ ছাড়া আর কাউকে ঠাওর করা যাচ্ছিলো না।

মিনিটে ৭০ থেকে ৭৫ স্টেপে পিচ্ছিল পথে একটু এগোতেই উপরে থাকা দলের সদস্যের আওয়াজ, ডানে খাদ। প্রতিধ্বনি হয়ে তা পৌঁছে দেওয়া হলো নিচের সদস্যদের কাছে। ততক্ষণে এক হাজার পাঁচশ’ ফুট উঁচুতে আমরা।

অন্ধকার আর পিচ্ছিল পথে সহযোগী হিসেবে নেওয়া বাঁশের লাঠিও টিকতে পারছিলো না। আবারও সামনে থেকে আওয়াজ খাঁড়া ও উঁচু পথ। যথারীতি পৌঁছে দেওয়া হলো অন্য সদস্যদের কানে। টর্চের আলোই একমাত্র ভরসা। একটু হিসাবে গরমিল হলেই ধপাস পতন কয়েকশ’ ফুট নিচে। রোমাঞ্চের সঙ্গে ভয় যে একটু ঢুকলো না তা বলা কঠিন।

পেছনে আরেকটি অভিযাত্রিক দল। ওই দলে সদস্য বেশি, কানে ভেসে আসা আওয়াজ সে রকম কিছুরই জানান দিলো। আর তা পাহাড়ের অন্ধকারের গভীরতায় ব্যাঘাত ঘটালো।  

খানিক হাঁপিয়ে ওঠা সবাই এবার একটু জিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত। গা বেয়ে তখন সারাদিনের ক্লান্তির নোনা ঘাম। তবে এবার যখন নিজেদের বারোশ’ ফুট উপরে আবিষ্কার করলাম তখন সময় লেগেছে আগের চেয়ে কম। এভাবে হাঁটলে আর ৫-৭ মিনিটে বগালেক পৌঁছানো সম্ভব, গাইডের এমন আশ্বাসে মনের আকাশে তখন বগালেকের ফ্রেমবন্দি ছবি।

সন্ধ্যা পৌনে ৭টা নাগাদ রাতের অ্যাডভেঞ্চারাস ট্রেকিংয় জয় করে দিনের আলোর সমান সময়ে মাত্র ২৫ মিনিটে পৌঁছে গেলাম পাহাড়ের উপরে সবচেয়ে বড় লেক, বগালেকে।

আরও পড়ুন-

** শিক্ষক থেকে পর্যটনের অগ্রদূত একজন সিয়াম দিদি
** পাহাড়িদের পছন্দ ‘হাঙর ‍শুটকি’
** ঠোঁট লাল করা পাহাড়ি ‘ছোট পান’
** ব্রিজের সঙ্গে পর্যটন ডুবেছে কাপ্তাই লেকে
** ‘রিছাংবান্ধব’ নন পর্যটকরা!
** রিছাং রোমাঞ্চ!
** মেঘের ভেলায় ভেসে মেঘ-পাহাড়ের দেশে
** ঝালেই পাহাড়িদের পছন্দ ‘সুমরিচ’

বাংলাদেশ সময়: ২২১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭,  ২০১৬
জেডএস/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ