ঢাকা, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জুন ২০২৪, ১৮ জিলহজ ১৪৪৫

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

পর্যটনের প্রধান গন্তব্য হবে বান্দরবান

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৬
পর্যটনের প্রধান গন্তব্য হবে বান্দরবান ছবি: ডিএইচ বাদল-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

জেলা প্রশাসকের (বান্দরবান) সম্মেলন কক্ষ থেকে: মেঘ, পাহাড়, নদী, হ্রদ। সবুজে মোড়ানো এমনই অপরূপ বান্দরবান হবে দেশের পর্যটনের প্রধান গন্তব্য।

তবে এজন্য প্রশাসন, গণমাধ্যম, স্থানীয় জনগণ এবং পর্যটক, সবাইকে স্ব স্ব অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল ও সচেতন ভূমিকা রাখতে হবে।
 
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি তিন পার্বত্য জেলার পর্যটন সম্ভাবনা নিয়ে শুক্রবার (২১ অক্টোবর) বান্দরবান জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বাংলানিউজ আয়োজিত বিশেষজ্ঞ আলোচনায় এমনই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বক্তারা।
 
সরকার ঘোষিত ‘পর্যটন বর্ষ-২০১৬’ এর শুরু থেকে বাংলানিউজের ‘বছরজুড়ে দেশ ঘুরে’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কক্সবাজার ও বৃহত্তর সিলেটে পর এবার ‘পাহাড়ে পর্যটন’ শীর্ষক এই আলোচনার আয়োজন করা হয়।
 
বাংলানিউজের এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেনের সভাপতিত্বে সকালে সাড়ে ৯টায় শুরু হওয়া এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক (ডিসি) দিলীপ কুমার বণিক। আলোচনা শেষ হয় পৌনে ১টায়। দু’দিনব্যাপী আলোচনার দ্বিতীয় দিনের (শনিবার ২২ অক্টোবর) অনুষ্ঠানও হবে একই মিলনায়তনে।
 
আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. শাকের আহমদ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক জহির বিন আলম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মহিবুল্লাহ ও হিয়ামুল ইসলাম, সরীসৃপ বিশেষজ্ঞ শাহরীয়ার সিজার রহমান অংশ নেন।
 
আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দিদারে আলম মো. মাকসুদ চৌধুরী, নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) হোসাইন মুহাম্মদ আল-মুজাহিদ, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুজন চৌধুরী, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুস, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার চৈতী সর্ববিদ্যা, মো. আবদুল্লাহ আল মামুন, নাহিদা আক্তার তানিয়া, পর্যটন পুলিশের পরিদর্শক সুহৃদ চাকমা, বান্দরবান প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মিনারুল হক, হলিডে ইন রিসোর্টের ব্যবস্থাপক জাকির হোসেনসহ পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।

আলোচনা সভার শুরুতেই তিন পার্বত্য জেলায় ঘুরে বাংলানিউজ টিমের করা রিপোর্ট মাল্টিমিডিয়া প্রোজেক্টরে উপস্থাপন করেন ট্যুর প্ল্যানার ও বাংলানিউজের সিনিয়র আউটপুট এডিটর জাকারিয়া মন্ডল এবং অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর আসিফ আজিজ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন লাইফস্টাইল এডিটর শারমীনা ইসলাম। সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন চিফ অব করেসপন্ডেন্টস সেরাজুল ইসলাম সিরাজ।
 
আলোচনার সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, পার্বত্য জেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুন্দর বান্দরবান। পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে অগ্রসরমান পর্যটন এলাকা এ জেলা। পর্যটন বিকাশে জেলা প্রশাসন পর্যটকবান্ধব না হলে কেউ এখানে আসতে চাইবে না
তিনি পরামর্শ দেন, দেশের পর্যটনসমৃদ্ধ জেলাগুলোতে একজন করে এডিসি (পর্যটন) থাকতে পারেন। তিনি ওইসব এলাকার পর্যটনের বিষয়টি দেখভাল করবেন। আলাদা একজন এডিসি থাকলে পর্যটন খাত আরও এগিয়ে যাবে।
 
জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক বলেন, বান্দরবানে এখন যেসব পর্যটন স্থাপনা তৈরি হয়েছে, বেশিরভাগই জেলা প্রশাসন স্থাপিত।
 
“এখন অনেক সরকারি-বেসরকারি পর্যটন স্থাপনা হচ্ছে। সবাই জেলা প্রশাসনের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই এ স্থাপনাগুলো নির্মাণ করছেন। প্রশাসন আসলে অবকাঠামোগত এবং প্রক্রিয়াগত সবরকমের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে পর্যটনের বিকাশে। ”
 
পার্বত্য ৩ জেলার মধ্যে বান্দরবান ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই জেলা দেশের সেরা পর্যটন স্পট হয়ে উঠছে। প্রশাসন এ ব্যাপারে অত্যন্ত আগ্রহ সহকারে কাজ করছে।
 
“পর্যটনের সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে কাজের বিষয়ে বাংলানিউজ যখন প্রস্তাব দিলো। আমরা আগ্রহ সহকারে এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে এগিয়ে এলাম। ”
 
জেলা প্রশাসক এ সময় কিছু পর্যটন স্থাপনা নির্মাণ এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে তাদের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।
 
পর্যটনের বিকাশে আইন-কানুনও শিথিল করা হয়েছে জানিয়ে দিলীপ কুমার বণিক বলেন, সবাই জানেন, এ জেলা নানা দিক থেকে অত্যন্ত স্পর্শকাতর। তবু পর্যটকরা যেন সহজে এখানে আসতে আগ্রহী হোন, সেজন্য আমরা সার্বিক উদ্যোগ নিয়েছি।
 
এনডিসি হোসাইন মুহাম্মদ আল-মুজাহিদ বলেন, পর্যটনের বিকাশে যোগাযোগ, আবাসন ও খাবার ব্যবস্থাপনা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
“পর্যটন আমাদের অনেক এগোচ্ছে। কিন্তু পর্যটক ধরে রাখতে ৩টি বিষয়ে আমাদের আরও ভাবতে হবে। চিন্তা করতে হবে। একটি হলো যোগাযোগ। যোগাযোগটা সাবলীল না হলে কেবল ট্রেকার দিয়ে পর্যটন বিকাশ সম্ভব নয়। থাকার ব্যবস্থাটা নিশ্চিত করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে খাবারও। সাধারণ মানুষ, সাধারণ পর্যটক এই মৌলিক সুবিধা না পেলে আসবেন না। ”
 
অধ্যাপক ড. শাকের আহমদ বলেন, পর্যটন খাতকে বিকশিত করতে চাইলে রাস্তা-ঘাট সংস্কার করতে হবে। রাস্তা সংস্কার না হলে পর্যটক বাড়বে না। পর্যটন কোনো বিশেষ এলাকা নয়, এটি একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা। এর সঙ্গে অনেক কিছু সংশ্লিষ্ট।
 
বাংলাদেশে পর্যটন ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পৃথিবীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২ শতাংশের বেশি। আর পর্যটন বৃদ্ধির হার ৯ শতাংশের বেশি।
 
আবদুল কুদ্দুস পর্যটনের সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে বাংলানিউজের সিরিজ প্রতিবেদনের প্রশংসা করে বলেন, বাংলানিউজ যদি আরও আগে আসতো, তাহলে আরও আগে এ ত্রুটি ধরা পড়তো। তবু এখন যে ত্রুটি ধরিয়ে দিয়েছে, তা অক্ষরে অক্ষরে সংশোধনের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
 
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ সময় বাংলানিউজ টিমকে দু’বছর পর আবারও বান্দরবানে এসে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের আহ্বান জানান। “এ আয়োজনটা বান্দরবানের পর্যটনের জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে। আমি বাংলানিউজকে আবারও আহ্বান জানাবো। তারা এ ধরনের কাজে যতোবার আসবেন, যতো সহযোগিতা চাইবেন, আমরা করে যাবো। ”
 
শাহরীয়ার সিজার বলেন, ট্যুরিজমের প্রধান দিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। তাই প্রকৃতিকে রক্ষা করেই ট্যুরিজমের প্রমোশন করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে সব প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার মধ্যে সমন্বয় জরুরি। বন ও পরিবেশ-প্রতিবেশকে রক্ষা করেই স্পটগুলোকে তুলে ধরতে হবে।
 
দিদারে আলম মো. মাকসুদ চৌধুরী জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আগে যে সমস্যা ছিল তা কাটিয়ে উঠেছে প্রশাসন।
 
সুহৃদ চাকমা বলেন, পর্যটনের উন্নয়নের জন্য যা করার দরকার প্রশাসন তা করছে। মিডিয়াও যা করছে, তা প্রশংসার দাবি রাখে। সবাই মিলে কাজ করলে বান্দরবান এগিয়ে যাবে।
 
পর্যটক টানতে অফ সিজনে বিশেষ অফারের সুপারিশ করেন ড. জহির বিন আলম। তিনি বলেন, পর‌্যটনের উন্নয়নে পরিকল্পনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে। ছুটির দিনে স্থানীয়ভাবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান-আচারের আয়োজন করলেও পর‌্যটকদের আকৃষ্ট করবে। ঘোষণা করা যেতে পারে বিশেষ অফার-প্যাকেজের।
 
মিনারুল হক বলেন, সারাবছরই বান্দরবানে পর্যটকদের আনাগোনা থাকে। বিশেষ করে তরুণরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন বান্দরবানে। ট্রেকিং করে পাহাড়ের দুর্গম এলাকায় নাফাকুম, আমিয়াকম ঝরনা বের করেছেন। তাদের যারা গাইড করছেন তারাও তরুণ।
 
পর্যটক টানতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও নিরাপত্তার বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দেন অধ্যাপক হিয়ামুল ইসলাম।
 
আর এ ধরনের উদ্যোগে বাংলানিউজের প্রশংসা করে অধ্যাপক মহিবুল্লাহ বলেন, পর্যটন বিকাশে বাংলানিউজ পাইওনিয়ার হিসেবে ভূমিকা পালন করছে। প্রতিষ্ঠানটির টিমওয়ার্ক পর্যটন খাত নিয়ে যেভাবে কাজ করছে, তাতে বাংলাদেশের পর্যটন দেশে-বিদেশে পৌঁছে যাচ্ছে।
 
বান্দরবান দেশের অন্যতম সেরা পর্যটন স্পট। কিন্তু এখানে পরিবহন ও আবাসন খরচ অনেক বেশি। সেজন্য বান্দরবানে সব হোটেলের ভাড়ায় ১৫ শতাংশ ভ্যাট কমানোর দাবি জানান জাকির হোসেন।
 
বান্দরবানের পর্যটন বিকাশে বাংলানিউজ এগিয়ে আসায় এ জেলা দেশের এক নম্বর পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন সুজন চৌধুরী।
 
বাংলানিউজের এ উদ্যোগে সহযোগিতায় আছে বেসরকারি এয়ারলাইন্স ইউএস-বাংলা, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড, বান্দরবান পার্বত্য জেলা প্রশাসন ও ট্রাভেল এজেন্সি ফড়িং।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৬
এজেড/এমআইএইচ/এসএম/এসআর/এআর/এমএ/এসএইচ/জেডএস/আরএইচএস/আইএ/এমজেএফ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ