বগালেক (রুমা, বান্দরবান) ঘুরে: ফিশ স্পা। ব্যয়বহুল ম্যাসাজ।
কিন্তু যদি বলা হয়, এই ফিশ স্পা একেবারেই ফ্রি পাবেন! তা-ও আবার দেশে! কী, নেবেন তো? তবে চলে যান পাহাড়কন্যা বান্দরবানের রুমা উপজেলার বগালেকে। দেশের অন্যতম শীর্ষ চূড়া কেওক্রাডং পর্বতের কোলঘেঁষে দেশের সবচেয়ে উঁচু সাধু পানির এ হ্রদ বা লেকে আপনি পাবেন দেশীয় ছোট ছোট মাছেরই ম্যাসাজ।
এই ম্যাসাজের গল্পটা অনেক আগেই শোনা। সেজন্য রুমা থেকে ঘাম ঝরানো যাত্রায় বগালেকে আসার পরই ছুটে যেতে মন চাইলো লেকের ঘাটে। কিন্তু নিয়ম-নীতিতে রাতের বেলায় আগ্রহটা দমিয়ে রাতে খেয়েই ঘুমিয়ে পড়তে হলো।
লেকের পাড়ে গড়ে ওঠা কটেজে ক্লান্তি দূর করা ঘুমের পর সকাল হতেই মন ছটফট করছিলো, কখন যাবো স্পা নিতে। নাস্তা শেষে চায়ের কাপ হাতেই লেকের ঘাটে ছুট।
সেখানে দেখা গেল, আগে থেকেই জনা তিনেক অভিযাত্রী ঘাটে বসে হাঁটু পর্যন্ত লেকের পানিতে ভিজিয়ে রেখেছেন। স্বচ্ছ পানিতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, তাদের পা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঠোঁটে কামড়ে কামড়ে যাচ্ছে ছোট ছোট মাছগুলো। বিশেষত কামড় যাচ্ছে ক্ষতস্থান ও মরা চামড়ায়।
কেওক্রাডং অভিমুখী ওই তিন অভিযাত্রী একসঙ্গে ঘাট থেকে উঠে গেলে অনুভূতি বুঝতে পা ফেলি পানিতে। সেকেন্ড পাঁচেকের মধ্যেই দল বেঁধে আসতে থাকলো ছোট ছোট মাছ। এরমধ্যে বেশি ছিল পুঁটি।
এই ছোট ছোট মাছগুলো যখন পায়ে কামড় দিতে শুরু করলো, প্রথম দিকে সুড়সুড়ি লাগলেও পরক্ষণেই একপ্রকারের আরাম অনুভূত হতে থাকলো। বিশেষত যখন আঙুলের ফাঁকে কামড় দিচ্ছিলো। দু’ পা পানিতে ডুবিয়ে রাখা সত্ত্বেও খানিকক্ষণের মধ্যেই পুরো ঘাটে ছোট ছোট মাছের দল ঘোরাঘুরি শুরু করলো। একদল পায়ে কামড় দিয়ে যাচ্ছে তো, আরেক দল পানির গভীরে চলে যাচ্ছে। আবার সেই দল ফিরে আসছে তো, কামড় দিয়ে চলে যাচ্ছে আরেক দল। কিছুক্ষণ পরপর আবার পায়ের নিচে ঠাণ্ডা পানির প্রবাহ অনুভূত হলো। যেন, স্পার সঙ্গে শীতল পরশও।
তবে, একটু পা নড়া-চড়া করতেই চলে গেলো স্পা করা কিছু মাছ। পা জোড়া স্থির হলে আবার চলতে থাকলো স্পা।
অদ্ভূত এক ভালোলাগায় ঘাটেই বসে থাকতে ইচ্ছে করছিলো। কিন্তু শীর্ষ পর্বত কেওক্রাডং আরোহনের জন্য রওয়ানা দেওয়ার তাগাদা দিলেন সহযাত্রী। তাই ফ্রি স্পা’র লোভ সেখানেই শেষ করে ফিরতে হলো।
তিন দিকে পাহাড় আর একদিকে উঁচু ভূমিতে জনপদ বেষ্টিত বগালেকে আপাতত গোসল করা বন্ধ। সেজন্য কেউ ফ্রি ফিশ স্পা নিতে গেলেও যেন ভুলেও গোসলে না নামেন।
তবে সবচেয়ে বেশি সতর্কতা দেখানো জরুরি, যেন সুন্দরী এ হ্রদে কোনোভাবেই সাবান-শ্যাম্পুর প্যাকেট এবং অপচনশীল কোনো বস্তু না ফেলা হয়। এটা নিশ্চিত করা গেলেই যে নির্বিঘ্নে চলতে থাকবে ফ্রি ফিশ স্পা, রূপ অটুট থাকবে বগালেকের।
আরও পড়ুন-
** কেওক্রাডংয়ের দুর্গম পথে প্রশান্তির চিংড়ি
** মুরংদের তুলার কম্বল, টেকে ২শ’ বছর
** আত্মশুদ্ধির আহ্বানে আকাশে শতো ফানুস
** মেঘ ফুঁড়ে পাহাড়ের গায়ে রোদ বাতি!
** জলের ওপর বসতভিটে
** হ্রদের জলে কার ছায়া গো!
** সড়ক যেন আকাশছোঁয়ার খেলায় (ভিডিও)
** সাজেকের ভাঁজে ভাঁজে প্রকৃতির সাজ
** মানিকছড়ির ফুলের ঝাড়ুতে পরিচ্ছন্ন সারাদেশ
** নট ইউজিং ‘ইউজ মি’
বাংলাদেশ সময়: ২১১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৬
এইচএ/এএ/