ঢাকা, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জুন ২০২৪, ১৮ জিলহজ ১৪৪৫

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

মারিয়ানটং পাহাড়ে ঝুলন্ত বাগান

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৬
মারিয়ানটং পাহাড়ে ঝুলন্ত বাগান ছবি: সোহেল সরোয়ার

মারিয়ানটং পাহাড় (আলীকদম-বান্দরবান) ঘুরে: প্রায় দেড় কিলোমিটার হেঁটে উঠতে হবে দুই হাজার ফুট উঁচু পাহাড় মারিয়ানটংয়ের চূড়ায়। তাই রোদের তেজ বাড়ার আগেই পৌঁছাতে হবে পাহাড়ের পাদদেশে।

সুতরাং সকাল সাড়ে ৬টার মধ্যে আলীকদম থেকে রওনা দিলাম মারিয়ানটং পাহাড়ের উদ্দেশে।

প্রায় ৬ কিলোমিটার অটোবাইকে ভ্রমণের পর সকাল ৭টা নাগাদ পৌঁছালাম মারিয়ানটং পাহাড়ের পাদদেশে। এখান থেকে অর্ধচক্রারে হাঁটতে হবে প্রায় দেড় কিলোমিটার। সঙ্গে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার দুই ফিল্ড অফিসার সাধন দাস ও সাইফ উদ্দিন।

হেলানো পাহাড়ের পথে ঘণ্টাখানেক হাঁটার পর সাইফ উদ্দিনকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। জিজ্ঞেস করতেই সাদন দাস বললেন- উনি ওপরে উঠে গেছেন। আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। চলতে থাকুন। আরও কিচ্ছুক্ষণ হাঁটার পর দেখি হারিয়ে যাওয়া কারিতাসের সাইফ উদ্দিন প্রমাণ সাইজের দুই ছড়া পাকা কলা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। সঙ্গে আরও দুই  পাহাড়ি যুবক।

মূলত, আমাদের আপ্যায়নের জন্য মারিয়ানটং পাহাড়ের মাংহাই ম্রো পাড়ার দুই সহোদর মাংপু ম্রো ও পাওয়াই ম্রো নিজেদের বাগান থেকে পেড়ে আনা দুই ছড়া পাকা কলা সাইফুদ্দিনের হাতে তুলে দিয়েছেন। ম্রো সম্প্রদায় সাধারণত বাগানের ফল দিয়েই অতিথি আপ্যায়নে অভ্যস্ত।
 


মাংহাই ম্রো পাড়ার অবস্থান মারিয়ানটং পাহাড়ের মাঝা-মাঝি জায়গা। এ পাহাড়ের সর্বচ্চো চূড়ায় যেতে আরো প্রায় ১ হাজার ফুট উপরে উঠতে হবে। তাই পাহাড়ে ওঠার ধকল কাটাতে সাইফুদ্দিন দ্রুত মাংহাই ম্রো পাড়ায় পৌঁছে কারিতাসের খাদ্য নিরাপত্তা প্রকল্পের আওতায় করা মিশ্র ফলের বাগানে ফল খুঁজতে থাকেন। অতঃপর বাগানের উপকারভোগী (এক অর্থে মালিক) মাংপু ম্রো ও তার ছোট ভাই পাওয়াই ম্রো দুই ছড়া পাকা কলা তুলে দেন সাইফুদ্দিনের হাতে।

প্রায় ২ হাজার ফুট উঁচু মারিয়ানটং পাহাড়ের এই মাংহাই ম্রো পাড়ার পুরোটা জুড়েই মিশ্র ফলের বাগান। কারিতাসের খাদ্য নিরাপত্তা প্রকল্পের আওতায় করা এ বাগানে আম, জাম, কলা, কাঠাল, লিচু, পেয়ারা, তেতুঁল, আতা, কদবেল, বেল, জাম্বুরা, মাল্টা, জলপাই, পেপে, চায়না কমলা, কাগজি লেবু প্রভৃতি ফলের গাছ রয়েছে।

মারিয়ানটং পাহাড় চূড়ায় পৌঁছানোর আগে মাংহাই ম্রো পাড়ায় করা কারিতাসের এই মিশ্র ফলের বাগান কেবল পাংপু ম্রো বা তার ভাই পাওয়াই ম্রো’র সাংসারে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা ও পুষ্টির যোগান দিচ্ছে না। বরং পাহাড় চূড়াই বুদ্ধজাদী স্বর্ণমন্দিরে আসা দেশি-বিদেশি ভক্ত ও পযর্টকদের মনের ক্ষুধাও মেটাচ্ছে।

পাহাড়ের খাঁজে ৫ একর জমিতে করা এ মিশ্র ফলের বাগানে সব মৌসুমে ফল পাওয়া যায়। এই হেমন্ত ঋতুতে এখন মারিয়ানটং পাহাড়ের ঝুলন্ত বাগানে গেলে পেয়ারা, জাম্বুরা, চায়না কমলা, কমলা, মাল্টা, আতা, বেলাসহ বিভিন্ন ফলের নৈসর্গিক বিন্যাস দেখা যাবে। ম্রো সম্প্রদায়ের যুবকদের সঙ্গে খাতির জমাতে পারলে টাটকা ফলেল স্বাদ গ্রহণের মাধ্যমে ক্লান্তি দূর করে মারিয়ানটং পাহাড় চূড়ায় উঠে যাওয়া যাবে অনায়াসে।

শুধু খেয়াল রাখতে হবে আপনার আচরণে পাহাাড়ি এ জনগোষ্ঠী কোনোভাবে যেন ক্ষুব্ধ না হয়। বিনা অনুমতিতে বাগানে হাত দিলে ক্ষেপে যেতে পারেন ম্রো যুবকরা। আর যদি ভালো ব্যাবহার দিয়ে পঠাতে পারেন, তাহলে অনায়াসে বাগান থেকে ফল পেড়ে খাওয়াবে।

দুর্গম এই পাহাড়ে ম্রো সম্প্রদায়ের জন্য মিশ্র ফলের বাগান করার কারণ উল্লেখ করে কারিতাসের দুই ফিল্ড অফিসার সাদন দাস ও সাইফ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন- পাহাড়ে জুম চাষ করলে এর জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়। জুম থেকে পাহাড়িদের মনোযোগ অন্যদিকে ফেরাতে এবং পুষ্টি ও অর্থের যোগান দিতে কারিতাস এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বান্দরবান থেকে মারিয়ানটং পাহাড়ে যাওয়ার একটি পথ। সেটি হলো-চকরিয়া-লামা সড়ক দিয়ে আলীকদম যাওয়ার ৬ কিলোমিটার আগেই আপনাকে থামতে হবে। এখান থেকে দুই কিলোমিটার পায়ে হেঁটে পৌঁছাতে হবে মারিয়ানটং পাহাড় চূড়ায়। তার আগেই মিলবে মাংহাই ম্রো পাড়ার ঝুলন্ত ফলের বাগান।

বান্দরবান থেকে বিকল্প আরেকটি পথ আছে। সেটি হলো- থানচি আলীকদম সড়ক। তবে এ সড়কে আসতে হলে সময় লাগবে ৭ ঘণ্টা।

আরও পড়ুন..

** আলীকদম পযর্টনে প্রধান সমস্যা পানি

** মাতামুহুরীর বাঁকে স্বর্গ দর্শন

** চুম্বকের মতো পযর্টক টানবে চিম্বুক
** নীলাচলে পায়ের নিচে মেঘবালিকা
** মোহম্মদীয়া হোটেলে জুরাছড়ির পযর্টন বাধা দূর!
** এটি কিন্তু জুরাছড়ি!
** হাজারছড়ায় পযর্টকের অপেক্ষায় আফিদা
** বিজিবির আতুরঘরে
** আলুটিলা রহস্যগুহায় গা ছমছমে অনুভূতি
** পাহাড়ে নিরুত্তাপ হরতাল
** সময় বশীভূত ইউএস বাংলায়!

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৬
এজেড/

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ