রাঙামাটি থেকে ফিরে: রাঙামাটি শহরের তবলছড়ি ঘাট থেকে আড়াই ঘণ্টার লঞ্চযাত্রা। তারপর বিলাইছড়ি বাজার।
থানা, উপজেলা পরিষদ, ডাকঘর, প্রেসক্লাব সবই আছে এখানে। বাহারি সব ঝরনা দেখতে আসা পর্যটকদের ল্যান্ডমার্ক এটি।
রাঙামাটি ও কাপ্তাই সদর থেকে লঞ্চে আসা যাত্রীরা নামেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের ঘাটে।
লঞ্চ আসা-যাওয়ার সময় দারুণ ব্যস্ত থাকে ঘাট সংলগ্ন অরুণা দেবী চাকমার (৪৩) খাবার দোকান।
বললেন, দিনে ৩০০ করে মাসে ৯ হাজার টাকা ভাড়া দোকানটির। বিদ্যুৎ বিল আসে আরও এক হাজার টাকা। যত বেশি পর্যটক আসছে ততই বেচাকেনা বাড়ছে।
পর্যটকরা সকালে এসে বিকেলেই আবার ফিরতি লঞ্চ ধরতে পারেন। তারপরও রাতযাপনের জন্য বাজারে 'নিরিবিলি' নামে একটি আবাসিক হোটেল আছে। এ ছাড়া কয়েকটি গেস্ট হাউসও আছে।
বিলাইছড়ি বাজারে দেশের বিভিন্ন জায়গার মানুষের দোকান আছে। তবে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার বাসিন্দা বেশি।
কুলকুরমাই গ্রামের রুমা বড়ুয়া বাজারে শুঁটকির দোকান করেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ৪৪ বছর আগে তার শ্বশুর এখানে এসেছিলেন।
মঙ্গলবার বাজার বসে। দূরদূরান্ত থেকে জুমচাষিরা রকমারি সবজি, কলাসহ বিচিত্র ফলমূল, পাহাড়ি পান বেচতে নিয়ে আসেন। তারা লবণ, শুঁটকি, তামাক, নাপ্পি, ভোজ্য ও জ্বালানি তেলসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে নিয়ে যান।
তিনি জানান, লটিয়া, ছুরি, ইচা, হাঙর শুঁটকি বেশি বিক্রি হয়। এক কেজি হাঙর শুঁটকি ৪৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বোয়ালখালীর আহলা দরবার শরিফ এলাকার বাসিন্দা উপজাতীয়দের প্রিয় রাবগুড় মেশানো তামাকের গুঁড়ো। রাঙ্গুনিয়া থেকে আনা এ তামাক ২৫০ গ্রাম ২০ টাকা।
রাঙ্গুনিয়া সৈয়দবাড়ি এলাকার বকুল বড়ুয়া বড় একটি খাবার দোকান পরিচালনা করেন। তিনি বলেন, সিঙ্গাড়া-সমুচা প্রতিটি ৫ টাকা, পেঁয়াজু ২ টাকা, জিলাপি ৫ টাকা, পরোটা ৫ টাকা বিক্রি করছি।
তিনি জানান, পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে, বেচাবিক্রিও বাড়ছে। কাপ্তাই হ্রদের তাজা মাছ, দেশি মুরগি, বিভিন্ন ধরনের সবজি, ভর্তার চাহিদা বেশি পর্যটকদের কাছে।
বাজারে কথা হয় চট্টগ্রাম কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র রিকেল চাকমার সঙ্গে।
তিনি বলেন, বিলাইছড়ির মানুষ চায় পর্যটকরা এখানে আসুক। পর্যটকরা এলে নৌকাভাড়া দিয়ে, ঝরনা পথের গাইড হয়ে, খাবার-পানীয় বিক্রি করে বাড়তি আয় হয় স্থানীয়দের। তাই সবাই পর্যটকদের সার্বিক সহযোগিতা করেন।
কৃষি অফিসের কর্মী উত্তম বিশ্বাস বলেন, বাজারের দিন সস্তায় জুমে উৎপাদিত কৃষিপণ্য পাওয়া যায়। এরপর অনেকটা রাঙামাটি শহরের দামেই সবজি কিনতে হয়।
নলছড়ি ঘাটে ছোট্ট দোকান করছেন চন্দ্র বিশ্বাস চাকমা।
বাংলানিউজকে তিনি জানান, পাহাড়ে ছোট্ট আকারের এক ধরনের পান হয়। মঙ্গলবার বাজার মেলার দিন প্রতি কেজি পান ১০০ টাকা বিক্রি হয়। ওই পান কিনে রেখে ৪-৫টি একত্রে দিয়ে খিলি বিক্রি করি।
রোববার জুমের কিছু সবজি নিয়ে বসেছিলেন আলো চাকমা। তিনি জানান, প্রতি কেজি নারকেল কচু ৪০ টাকা, নাপ্পি ২০০ টাকা, আদা ৫০ টাকা, পুঁইগোটা ৯০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ২৫ টাকা, পাকা বেগুন ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৬,
এআর/জেডএম