নাফাকুম (থানছি) থেকে ফিরে: নাফাকুম ঝরনার পানির স্রোত সাঙ্গু নদীতে মিশে যাওয়ার স্থানটির নাম স্থানীয়দের কাছে ‘নাফাকুম মুখ’। স্থানীয়রা এ নামেই চেনেন, চেনান।
সকাল সকাল থানচি থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা দিয়ে যাত্রা শুরু। স্রোতশ্বিনী নদীতে পাথর ছড়ানো (পাথর বিছানো চর), নদীর দু’পাড়ে খাড়া পাথর পাহাড়, আর সেই পাহাড়ে ঝুলে থাকা লতাপাতায় সকালের সূর্য আলো ফেলে তৈরি করছিল আনিন্দ্য সুন্দর দৃশ্য।
কখনো কখনো দুই পাহাড় থেকে নেমে আসা ছোট ছোট ঝরনা ধারায় আটকে যায় চোখ। সকাল সোয়া সাতটায় যাত্রা শুরু করে নয়টা পাঁচ মিনিটে নৌকা পৌঁছে নাফাকুম মুখে।
দূর থেকেই দেখা যাচ্ছে ঘোলা পানির প্রবল স্রোত। খরস্রোতা নদীতে মিশে হয়ে উঠেছে আরো উত্তাল। কাছাকাছি যেতে নৌকা কিছুটা গতি হারালো। মাঝি দিদারুল ইসলাম শক্ত হাতে এই স্থানটি পার করে নাও ভেড়ালেন রেমাক্রী বাজারে। উদ্দেশ্য ছোট নৌকা নিয়ে নাফাকুম পৌঁছানো। কিন্তু নৌকা আর পাওয়া গেল না। অগ্যতা বড় নৌকাটিই ভরসা।
রেমাক্রী বাজারে গাইড প্রকাশ মল্লিক আমাদের বলছিলেন নাফাকুম মুখের কথা। খানিকটা সময় বাজারে কাটিয়ে ফের যাত্রা শুরু। ভাটিতে পাঁচ মিনিটের পথে নাফাকুম মুখ। পাঁচ ধাপে অন্তত ১৫ ফুট উঁচু থেকে নদীতে মিশেছে পানির স্রোত। বিস্তৃত সেই মুখে এক ধাপ থেকে আরেক ধাপের দূরত্ব ১৫-২৫ ফুট। একজন জেলে জাল ছড়িয়ে সেখানে মাছ ধরছিলেন।
দুই পাহাড়ের মাঝে বিছানো পাথরের উপর দিয়ে বয়ে আসা স্রোতে নদীর চরে চিক চিক করে জ্বলছিল ছোট ছোট পাথরগুলো। সাদা, কালো, বেগুনী, খয়েরি- নানা রঙের ছোট পাথর। সেই চরে দাঁড়ালে দেখা যাবে সামনে থেকে নেমে আসা দুই নদীর স্রোত, ঘন সবুজে ঢাকা পাহাড় আর খানিক দূরে পাহাড়ের গায়ে পাহাড়িদের বাড়ি, জুম চাষের দৃশ্য।
সেই স্রোতের বিপরীতে সাত জন মিলে নৌকা ঠেলে তুলতে ক্লান্তিবোধ হলেও নাফাকুম মুখের পানির ঢেউ এবং স্রোত মুগ্ধ করছিল বার বার। নৌকায় চড়ে, পায়ে হেঁটে এবং সাঁতরিয়ে নাফাকুম ঝরনায় পৌঁছুলেও তার রূপের চেয়ে নাফাকুম মুখের ছবি পর্যটকদের কাছে বেশি আকর্ষণীয়। দুর্গম পথের কারণে নাফাকুম যেতে না পারলেও নাফাকুম মুখ পর্যটক টানবে সহজেই। পর্যটকদের অনেকেই এটিকে বাংলার নায়াগ্রা বলে থাকেন।
তবে এ স্থানে পর্যটকদের সহজে পৌঁছাতে প্রয়োজন নিরাপত্তা ও মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক। কারণ থানচি থেকে কিছুটা এগুনোর পর নেটওয়ার্ক আর পাওয়াই যায় না।
যাওয়ার পথ ও অন্যান্য:
চান্দের গাড়ি বা বাসে করে বান্দরবান থেকে থানচির দূরত্ব ৭৯ কিলোমিটার। বাসে জনপ্রতি ভাড়া দু’শ টাকা দলবদ্ধ হয়ে চার-পাঁচ হাজারে ভাড়া করা যাবে চান্দের গাড়ি। পথে পড়বে শৈলপ্রপাত, চিম্বুক, নীলগিরি, জীবননগর।
থানচি সদর থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া পাওয়া যাবে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকায়। থানচি থেকে হাজার টাকায় সঙ্গে নিতে হবে একজন গাইড। যাওয়ার আগে ও আসার পরে স্থানীয় থানা ও বিজিবির কাছে রিপোর্ট করতে হবে পর্যটকদের। থানচি ও রেমাক্রী বাজারে মিলবে খাবার। ফিরে এসে থানচি সদরে স্বল্পমূল্যের কিছু হোটেল আছে। রয়েছে বিজিবির ‘সীমান্ত অবকাশ’। আর রেমাক্রীতে স্বল্প মূল্যে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৬
এমআইএইচ/জেডএম