খাগড়াছড়ি ঘুরে: চট্টগ্রাম থেকে ফটিকছড়ি পার হয়ে মানিকছড়ি ঢুকতেই স্বাগত জানালো সবুজে মোড়ানো পাহাড়ি উঁচু-নিচু আঁকা-বাকা সড়ক। প্রবেশপথেই প্রকৃতির নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের সে ঝলক মোহে রেখেছে পুরো জেলায়।
চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি রোডের ঠিক মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছে মং রাজবংশের রাজবাড়ি। মহাসড়ক থেকে আধা কিলোমিটার ভেতরের দিকে মানিকছড়ি বাজারের এক কোণায় ইতিহাস আর ঐতিহ্যের স্মৃতিধন্য এই রাজবাড়ির অবস্থান। রাজবাড়ি হলেও এই বাড়ি নির্মিত হয়েছে বাঁশের বেড়া, টিনের চালা এবং কাঠের জানালা দিয়ে।
পার্বত্যাঞ্চলে আকর্ষণীয় স্থাপনাগুলোর মধ্যে রয়েছে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের ওপর তৈরি ঝুলন্ত সেতু। এর বাইরেও নানা জায়গায় রয়েছে দৃষ্টিনন্দন এমন সেতু। সেগুলোরই একটি খাগড়াছড়ির রামগড়ে। উপজেলা পরিষদ ঘেঁষা হ্রদের ওপর এ জিরাপ গলার মতো উঁচু সেতুকে ঘিরে রয়েছে গোলঘর, পদচারী সেতু এবং মুক্তিযু্দ্ধের ভাস্কর্য।
বর্তমান বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পথচলা কবে? এই শেকড়ের ইতিহাস জানা যাবে রামগড়ে। এখানে ফেনী নদীর কোলঘেঁষে দাঁড়িয়ে বিজিবি স্তম্ভ। যাতে খোদাই করে লেখা আছে, আজ থেকে ২শ’ ২১ বছর আগে অর্থাৎ ১৭৯৫ সালের ২৯ জুন ‘রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন’র জন্ম হয়। ৪শ’ ৪৮ জন সৈন্য নিয়ে গঠিত এ বাহিনী কালক্রমে ফ্রন্টিয়ার গার্ডস, স্পেশাল রিজার্ভ কোম্পানি, বেঙ্গল মিলিটারি পুলিশ, ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেলস, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস বা ইপিআর হয়ে বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) হিসেবে কার্যক্রম চালাতে থাকে। যে বিডিআর এখন বিজিবি হয়ে সীমান্ত প্রহরায় নিয়োজিত।
মাটিরাঙায় পাঁচ একর জায়গাজুড়ে দাঁড়িয়ে শতবর্ষী এক বটবৃক্ষ। জনশ্রুতি আছে, এই গাছের নিচে বসে শীতল বাতাস লাগালে নাকি আয়ু বাড়ে মানুষের।
জেলার পর্যটনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ আলুটিলার রহস্যময় গুহা। খাগড়াছড়িতে গেলে ৩ শ’ ৬৮ ফুট দীর্ঘ এ প্রাকৃতিক সুড়ঙ্গে মশাল নিয়ে একবার ঘুরে না এলেই নয়।
ছবির চেয়েও সুন্দর যেন ‘রিছাং’ ঝরনাধারা। আলুটিলা পর্যটন স্পট পেরিয়ে পশ্চিমে মূল সড়ক থেকে উত্তরের একটি ঢালু পাহাড়ের প্রায় ৪০ ফুট উঁচু থেকে আছড়ে পড়ছে এ ঝরনার জলরাশি।
খাগড়াছড়ির আরেক সুন্দরী ঝরনা হাজাছড়া। রাঙামাটির সুন্দরী উপত্যকা সাজেক যাওয়ার পথে দিঘীনালার হাজাপাড়া নামক স্থানে প্রায় একশ’ বিশ ফুট উপর থেকে আছড়ে পড়ছে এ স্বচ্ছ জলের ঝরনা।
খাগড়াছড়ি শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে চেঙ্গি নদী পেরিয়ে শান্তিপুর অরণ্য কুটির। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি তীর্থস্থানের মতো। ১৯৯৯ সালে স্থাপিত এ কুটিরের প্রধান আকর্ষণ বিশালকায় বৌদ্ধমূর্তি। কেবল বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় গৌতম বুদ্ধের মূর্তি বলা হয় এটিকে।
খাগড়াছড়ি শহর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে ব-দ্বীপ বাংলাদেশকে মডেল ধরে নির্মিত হেরিটেজ পার্ক। পাহাড়ের প্রকৃতি অক্ষত রেখে গড়ে তোলা এ পার্কে বসলে চেঙ্গী নদীর ঝিরি ঝিরি মৃদু ঠাণ্ডা বাতাস প্রাণ জুড়াবেই।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৬
এইচএ/জেডএম
আরও পড়ুন
** পাহাড় যেখানে জলপথে নত
**সাজেকের দুর্গম সড়কের এক কিশোর হেলপার
** ঘুম ভাঙালো মেঘ
** কেওক্রাডংয়ের চূড়া থেকে সূর্যোদয় দর্শন! (ভিডিও)
** কেওক্রাডংয়ের রাতের আকাশের কতো বিশালতা!
** কেওক্রাডংয়ের দুর্গম পথে প্রশান্তির চিংড়ি
** বগালেকে ফ্রি ফিশ স্পা!
** মুরংদের তুলার কম্বল, টেকে ২শ’ বছর
** আত্মশুদ্ধির আহ্বানে আকাশে শতো ফানুস
** মেঘ ফুঁড়ে পাহাড়ের গায়ে রোদ বাতি!
** জলের ওপর বসতভিটে
** হ্রদের জলে কার ছায়া গো!
** সড়ক যেন আকাশছোঁয়ার খেলায় (ভিডিও)
** সাজেকের ভাঁজে ভাঁজে প্রকৃতির সাজ
** মানিকছড়ির ফুলের ঝাড়ুতে পরিচ্ছন্ন সারাদেশ
** নট ইউজিং ‘ইউজ মি’