এমভি মধুমতি থেকে: বেরসিক মেঘের বাগড়া নেই আকাশে। কৃষ্ণপক্ষের দ্বিতীয়ার চাঁদটা তবু বিবর্ণ।
বুড়িগঙ্গার পুরো পথটাতেই চাঁদটা ঝুলে থাকলো পূবের আকাশে। গলা বাড়িয়ে নদীর ভেতরে চলে আসা অবৈধ স্থাপনাগুলোর পেছনে একটু পরই ডুব মারার পাঁয়তারা করছে বুঝি। কিন্তু না, শীতলক্ষ্যার মোহনা ছাড়িয়ে ধলেশ্বরী পেরুতেই রূপ বদলাতে লাগলো চাঁদ। দ্বিতীয় প্রহর কাছিয়ে আসতেই ঝাঁপি থেকে রূপের ছটা ছড়াতে শুরু করলো ধীরে ধীরে। মেঘনার এসে আর তীরের ওপরে ঝুলে রইলো না পৌষের চাঁদ মামা। একটু একটু করে উঠে এলো নদীর ওপর। চারিপাশে কুয়াশার সাদা চাদরের ব্যারিকেড নেই। আকাশে নেই মেঘ দঙ্গলের এলোমেলো লুটোপুটি। নদীর ওপরে উঠে এসে তাই শুরু হলো চাঁদের হাসি। রাত তৃতীয় প্রহর গড়ানোর আগেই ভাঙ্গলো সেই হাসির বাঁধ। শুক্লাপক্ষের মতো উজ্জ্বল নয় বটে, তবুও এবার যেনো আলো উছলে পড়ছে আকাশে। নিচে মেঘনার নিস্তরঙ্গ জলে তারই প্রতিফলন। কালচে নীল আকাশের গায়ে চাঁদটা যেনো এবার বিশাল ক্যানভাসে উজ্জ্বল সোনালি এক জ্বলজ্বলে টিপ।
বিবর্ণ চাঁদটা এবার স্বরূপে ফিরে এসেছে। আর একটু পর এমভি মধুমতির ঠিক মাথার ওপর জেঁকে বসে লুকোচুরি খেলা শুরু করলো চাঁদটা। তৃতীয় প্রহরের মাঝামাঝি এসে আকাশ ভেসে গেলো অপরূপ জ্যোৎস্নায়। সে আলোর ছটায় চিক চিক করে হেসে উঠলো মেঘনার জল। ঢেউয়ের আগায় চড়ে যেনো হাসছে চাঁদের অসংখ্য কণা। যেদিকেই চোখ যায়, চাঁদের চিকচিকে আলো। নাক বরাবর সামনে মেঘনার জলে নেমে ডুবে যাওয়া আকাশের দিগন্তও এ আলোয় স্পষ্ট ঠাহর করা যায়। বহু দূরে দুই তীরে সবুজের রেখা কিছুটা কালচে। চাঁদের আলোয় এই মাঝরাতে যেন সুবেহ সাদেকের আভাস।
নিচে মেঘনার বুক বেয়ে উজানে আসছে জোয়ারের পানি। রাতের নিস্তব্ধতা ও লঞ্চের মৃদু আওয়াজ ছাপিয়ে উঠছে জলের ছলাৎ ছলাৎ শব্দ। জাহাজের বুকে ধাক্কা মারছে জোয়ারের পানি। তারপর পরিণত হচ্ছে উত্তাল ঢেউয়ে। সেই ঢেউয়ের আগায় চাঁদের কণা নাচছে।
ভর সন্ধ্যেয় সদরঘাট ছাড়ার পরপরই পচা জলে মিইয়ে যাওয়া মনটা এবার বেশ সতেজ হয়ে গেছে। উত্তর-পশ্চিম থেকে ঘণ্টায় ১২ কিলোমিটার বেগে বয়ে আসা বাতাসে শীতের কামড় কম। তাপমাত্রা ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াতে স্থির হয়ে আছে সেই সন্ধ্যে থেকেই।
এদিকটার পানি বেশ স্বচ্ছ। চোখের ওপর চাপ ফেলতে থাকা কারখানার আলো নেই এদিকটায়। দু’পাড়ে দূরে নদীর পাড় জুড়ে কালচে সবুজাভ অন্ধকার। নদীর বুকে নিশাচর জেলে নৌকার সংখ্যা আজ অনেক কম। শীতের রাতে নদীর পানিতে জীবন সংগ্রামের গল্প পাতছে না তারা।
রাত তৃতীয় প্রহরের মাঝামাঝিতে এসে কুয়াশার কণা ভাসতে শুরু করলো নদীর বাতাসে। চাঁদের আলোয় তাই সাদাটে রূপ নিলো নদীর আকাশ। কিন্তু সেই সাদা জমাট চাদরে পরিণত হলো আর আর। কুয়াশার কবলে না পড়েই তাই শেষ রাত নাগাদ মধুমতি ভিড়লো বরিশালে। বরিশাল ছেড়ে সুগন্ধার পথে যেতে যেতে দিনের আলোর আড়ালে হারিয়ে গেলো দ্বিতীয়ার চাঁদ।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৬
জেডএম/এটি/