ট্রেন চলছে কিন্তু কু-ঝিক-ঝিক শব্দ কানে ভেসে আসছে না- বিষয়টি বেশ অবাক ঠেকলো। বাংলাদেশের প্রায় সব ট্রেনেই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
বগির দু’দিকের দরজার দিকে তাকাতেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে গেলো। দু’দিকেই দরজাই স্বয়ংক্রিয়। জয়েন্টে মোটা রাবার মোড়ানো। যা ভেদ করে শব্দ কোনোভাবেই যাত্রীদের কান পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না।
চিত্রা এক্সপ্রেস প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টায় খুলনা থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। আবার সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকা থেকে ফিরতি যাত্রা করে খুলনার পথে। বিমানবন্দর, জয়দেবপুর, মির্জাপুর, টাঙ্গাইল, যমুনাসেতুর পূর্ব, সিরাজগঞ্জ (এম মনসুর আলী স্টেশন), উল্লাপাড়া, চাটমোহর, ঈশ্বরদী, ভেড়ামারা, পোড়াদহ, আলমডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গা, কোর্টচাঁদপুর, যশোর ও নোয়াপাড়া নিয়ে মোট ১৬টি স্টেশনে যাত্রী ওঠানামার জন্য বিরতি দেয়।
ট্রেনটিতে রয়েছে দশটি বগি। এর মধ্যে ২টি স্লিপার ক্লাসে ৪৮ জন, দু’টি এসি চেয়ার বগিতে ১৮৮ জন, ৬টি শোভন চেয়ার বগিতে ৬২৪ জন বসতে পারেন। তবে আসন সংখ্যার চেয়ে যাত্রী সবসময়ই থাকে বেশি। শুক্রবারও (১৬ ডিসেম্বর) তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
ট্রেনের পরিচালক আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, পুরো ট্রেনটি এয়ারটাইট (বায়ু প্রতিরোধী)। নন এসি কামরায়ও জানালা আটকে দিলে বাইরের কোনো শব্দ ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না।
ট্রেনের সিটগুলোও বেশ আরামদায়ক। ইচ্ছামতো ভেঙে নিয়ে গা এলিয়ে দেওয়া যায়। আবার ব্রডগেজ হওয়ায় ভেতরের স্পেসও বেশ চওড়া। এক সারিতে তিনটি ও অন্যটিতে দু’টি সিট থাকার পরও করিডোর প্রশস্তই বলতে হবে। একসঙ্গে দু’জন চলতে খুব একটা বেগ পেতে হয় না।
আরামদায়ক এই ট্রেনটির একটাই দুর্ভোগ রয়েছে তা হচ্ছে খাবার নিয়ে। সন্ধ্যায় রওয়ানা দিয়ে সারারাত ট্রেনেই থাকতে হয়। কিন্তু ট্রেনটিতে নেই কোনো খাবারের গাড়ি! যে কারণে আগে থেকে প্রস্তুতি না থাকলে অভুক্ত থাকতে হতে পারে যাত্রার সময়। বিশেষ করে ডিনারে যারা ভাত ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারেন না, কারণ এই ট্রেনটিতে কোনো ভাতের ব্যবস্থা নেই।
কামরার ভেতরের ডেকোরেশনও অনেকটাই প্লেনের মতো। লাইটিং সিস্টেম দারুন। সেন্ট্রাল লাইটিং ছাড়াও স্পট লাইট রয়েছে প্রত্যেক সিটের জন্য আলাদা আলাদা। যাত্রীরা কেউ চাইলে অন্যের বিরক্তির উদ্রেক ছাড়াই আলো জ্বালিয়ে রাখতে পারেন অনায়াসে।
ব্যবস্থাপনা অনেকটাই ভালো বলতে হয়। বেসিনে সাবানের পাশাপাশি রয়েছে লিকুইড হ্যান্ডওয়াশ। পাবলিক টয়লেটে যেতে যারা নাক সিটকান তারাও ব্যবহার করছেন নির্দ্বিধায়।
১৯৯৮ সালের ২৩ জুন বঙ্গবন্ধু সেতুর উদ্বোধনের পর ২০০৩ সালে প্রথম রেলপথে ঢাকার সঙ্গে খুলনার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হয়। ২০০৩ সালের ৮ আগস্ট চালু হয় সুন্দরবন এক্সপ্রেস নামে ঢাকা-খুলনা আন্তঃনগর ট্রেন। আর ২০০৭ সালের ৭ অক্টোবর চালু হয় চিত্রা এক্সপ্রেস। সময়ের ব্যবধানে আগের বগিগুলো পুরাতন হয়ে গেলে, ভারত থেকে আমদানি করে নতুন বগি সংযোজন করা হয় চলতি বছরের ২৩ আগস্ট।
যারা বাসের ঝক্কি এড়িয়ে আরামে ও নিরাপদে যাতায়াত করতে চান তাদের পছন্দের তালিকায় প্রথম জায়গাটিই দখল করে নিচ্ছে চিত্রা। যাত্রীদের সহযোগিতা পেলে সেবার মান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে দাবি করেন রেলকর্মীরা।
বাংলাদেশ সময়: ০৪০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৭
এসআই/জেডএস/এটি