বাণী সুগন্ধা ঘাট, মংলা পোর্ট, গাঙচিল থেকে: খুলনা সদর এবং বাগেরহাটের সীমা নির্দেশক বৃহৎ নদী পশুর। এ নদী আবার দু’ভাগে ভাগ করেছে বাগেরহাটের মংলা শহরকে।
সুন্দরবনের পূর্বসীমা নির্ধারক বলেশ্বর নদীর জলস্রোত বিষখালি, পানগুচি, কচা, ভোলা, পাকশিয়া নামে বয়ে বঙ্গোপসাগরে হয়েছে হরিণঘাটা। মোড়েলগঞ্জ পার হয়ে ঘষিয়াখালি চ্যানেল ধরে খুলনার পথে এগুলেই পশুর নদী, মংলা পোর্ট। খুলনা থেকে এলে এর অবস্থান রূপসার মোহনায়, পশুর নদীর মুখে।
সদরঘাট থেকে ছেড়ে আসার ২২ ঘণ্টা পরে শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টায় মংলা রকেট ঘাটে ভেড়ে এম ভি মধুমতি।
খুলনা গেজেটিয়ার থেকে জানা যায়, ১৮৬৪ সালে মোড়েলগঞ্জকে সমুদ্রবন্দর ঘোষণা করা হয়। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের জন্য এই ব্যবস্থা নেওয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি। তবে এখনও মোড়েলগঞ্জ শহর একটি ব্যবসা কেন্দ্র। মংলায় সমুদ্রবন্দর হওয়ার এই চিত্র আরও ব্যস্ততর হবে এটাই ধারণা করা যায়।
তবে শিল্পাঞ্চল হয়ে ওঠার চেয়ে মংলা যেনো পর্যটন স্টেশন হতেই বেশি আগ্রহী!
শহর রক্ষা বাঁধ ধরে এগুতে থাকলে সবুজ রঙে যেকারও চোখ জুড়িয়ে যাবে। পশুর নদীর ঘোলাজল চিঁরে ভট-ভট শব্দে রকেট, লঞ্চ, স্টিমার চললেও কানে বাধে না। স্নিগ্ধ বাতাস মুহূর্তে প্রাণবন্ত করে তোলে মন।
ঘাট পেরুলে শহরের মধ্যে চলে গেছে সরু পিচঢালা পথ। তবে শৃঙ্খলিত, সাজানো-গোছানো। এই রাস্তায় পড়বে ‘শাপলা চত্বর’। সড়ক বিভাজনের মধ্যে সারি সারি গাছ। শীতের আমেজ এবং কৃষ্ণপক্ষ হওয়ায় সন্ধ্যায় নেমে এলো মাঝ রাত।
বাণী সুগন্ধা ঘাট থেকে শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) ভোরে সুন্দরবনের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে ‘গাঙচিল’। আকাশে আলো না থাকলেও পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিলো ঢেউয়ের ভাঁজে ভাঁজে খেলে যাচ্ছে পশুর নদীর দু’পাশে গড়ে ওঠা ঘর-বসতির আলো।
পিনপতন নিরবতায় প্রকৃতি যেনো এখানে মেলে ধরেছে তার সমস্ত রূপ! গাঙচিলের ছাদে বসে গরম ধোঁয়া ওঠা ভাত, আলু ভর্তা আর ঘন ডাল খাওয়ার পরে বলতেই হলো বাবুর্চি আবু তালেবের হাতযশ আছে! এরপরই উত্তরের শীতল বাতাসে বসে গরম চা পরিবেশ আরও উপভোগ্য করে তুললো।
নদীর বুকে নোঙর করা রঙিন বাতিতে সাজানো জাহাজগুলো সৌন্ র্যের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিলো। এসব দৃশ্য দেখতে দেখতে কখন মাঝ রাত হয়ে গেছে বুঝতে পারেনি কেউ।
ইতিহাস বলে, নড়াইল মহকুমার (বর্তমানে জেলা) ধোন্ধা গ্রামের রূপচাঁদ সাহা নামে এক লবণ ব্যবসায়ী নৌকা নিয়ে ভৈরব এবং কাজিবাজার যাতায়াতের জন্য একটি সংযোগ খাল খনন করেছিলেন। প্রথম দিকে এই খাল লাফ দিয়ে পার হওয়া যেতো। পরে বাঁশের সাঁকো বেয়ে লোকে যাতায়াত করতো। বর্তমানের ভয়ঙ্কর নদী রূপচাঁদের নামানুসারে ওই খালের নাম হয় রূপসা। রূপসা নদী হওয়ার পরেও আদালতের সমনজারির কর্মচারিরা নদী পারাপারের খরচ পেতেন না।
শ্রীরামপুরের রামনারায়ণ ঘোষ আরেকটি ছোট খাল খনন করে কাজিবাজারের সঙ্গে পশুর নদীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেন। যার নাম হয় নারাণখালির খাল। সেখান থেকেই পশুর বিস্তৃত হয়ে চালনার কাছে বাজুয়া, চালনা পোর্ট ও ডাংমারী ফরেস্ট অফিস হয়ে সুন্দরবনের বিখ্যাত দেউরমাদে বা ত্রিকোণ দ্বীপের উত্তরে মজ্জতের সাথে মিশেছে। ত্রিকোণ দ্বীপের উত্তর দিকে পশুরের দক্ষিণ বাহু, শিবসা এবং আরও চারটি নদী এক হয়েছে।
রাত পোহালেই শিবসা আর পশুরের মোহনার পথে যাত্রা শুরু করবে গাঙচিল।
আরও পড়ুন
**বিস্মৃতির অতলে বরিশালের উপকথা
**‘জোনাকি’ ভরা বুড়িগঙ্গা
বাংলাদেশ সময়: ০৭১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৬
এটি/জেডএম