ড্রাইভার ভয় দেখালেন- ওপারে দৌলতদিয়া ঘাটে যাওয়ার লাইন পেতে এখানে সারারাতও কাটাতে হতে পারে, তার চেয়ে দুই কাঠি সরেস হয়ে আরেক যাত্রীই গল্প ফাঁদলেন, তিনি ওপার থেকে আসার সময় একবার দু’দিন বসে ছিলেন। বলে কী? তবে ‘ভয়-ডর’ উড়ে গেলো ভাগ্যের জোরে, ‘মাত্র’ আড়াই ঘণ্টায় ‘পুলসিরাত’ পার! সারারাত অথবা দু’দিন অপেক্ষার তুলনায় আড়াই ঘণ্টা তো ‘মাত্রই’ বটে।
এই আড়াইটা ঘণ্টায় কিছুক্ষণ সিটে বসে, কিছুক্ষণ বাইরে ঘুরে, কিছুক্ষণ শীতের হাওয়া খেয়ে, আবার কিছুক্ষণ ক্ষুধা নেভানো খাবার খেয়ে কাটাতে হয়েছে যাত্রীদের। এদিকের এই পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া আর ওদিকের শিমুলিয়া-কাওড়াাকান্দি ফেরিঘাটে প্রায়ই এভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার-বিরতি কাটাতে হয় যাত্রীদের। এই ‘নির্ধারিত’ বিরতিটাই যেনো খাবার-দাবার আর অন্য সব কাজকর্ম সেরে নেওয়ার জন্য।
তা, কি খাবার আছে, যাত্রীরাই বা খানিক পরপর নেমে কি খাচ্ছেন তা বুঝতে ঢুঁ মারতে হলো ফেরিঘাট সংলগ্ন সড়কের দু’ধারে গড়ে ওঠা খাবারের দোকান ও হোটেলগুলোতে।
ঢাকা থেকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে যোগাযোগের অন্যতম এ ফেরিঘাটে দিনেরাতে হাজার হাজার গাড়ি চলাচল করলেও এখানে সে তুলনায় কোনো উন্নত মানের হোটেল চোখে পড়লো না। যে ক’টি বাইরে থেকে কিছুটা গোছানো দেখাচ্ছিলো- তাদের ভেতরের অবস্থা যে খুব সুবিধের তাও মনে হলো না। এর মধ্যে খাবার-দাবারের দামও দেখা গেলো আয়োজনের তুলনায় চড়া।
কয়েকটি হোটেলে ঢুঁ মেরে চোখে পড়লো প্লেট, গ্লাসগুলো অপরিষ্কার। ভাত-তরকারি রাখার পাতিলগুলোতে কোনো ঢাকনা নেই। ফলে রাস্তার ধুলা-বালি সব গিয়ে পড়ছে এই খাবারে। এই অবস্থা দেখে কোনো স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ ঢুকতে চাইবেন খাবার খেতে? তেমন দেখাও গেলো না। সেজন্য বোধ হয় বন্ধ হতে শুরু করছিলো কিছু হোটেল। যদিও হোটেলের মালিক-কর্মচারীরা বললেন, ‘দিনভর অনেক ব্যবসা হয়েছে, এখন রাত গড়িয়েছে। ’
প্রায় বেশিরভাগ হোটেলেই রাতের বেলার খাবার মেন্যুতে দেখা গেলো, ভাত ও তার সঙ্গে ইলিশ, রুই, বোয়াল, কাজলী ইত্যাদি মাছ, রুটি-সবজি-ডিম ভাজা, খিচুড়ি-ডিম, বিরিয়ানি ও তেহারি।
বিআইডব্লিউটিএ’র টোল কাউন্টার সংলগ্ন মোহনা হোটেলে ইলিশ ভাজি প্রতি পিস রাখা হচ্ছিলো ১০০ টাকা। পাঁচ মিশালি ছোট মাছ ৪০ টাকা, ছোট কাজলী মাছের তরকারি ৬০ টাকা, রুই ও বোয়াল মাছ ৮০ টাকা দামে বিক্রি করছিলো তারা।
এর পাশেই বাবুল হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, বিশ্ব ওলি খাজা বাবা হোটেলেও ঠিক একই দরে একই মেন্যুর খাবার মিলছে। তবে এখানে বাড়তি হিসেবে পাওয়া যাচ্ছিলো বিরিয়ানি ও তেহারি। বিরিয়ানি ১০০ টাকা প্যাকেট। আর তেহারি ১৫০ টাকা।
মান আর দামের হিসাবে না মেলায় অনেক যাত্রীকে তাই ডিম-পরোটা অথবা পরোটা-সবজিই খেতে দেখা গেলো। যার জন্য দিতে হচ্ছে ২০-৩০ টাকা।
হোটেল-রেস্টুরেন্টের পাশাপাশি ফেরিঘাট সড়কের পাশে ব্যস্ত দেখা গেলো ডিম, কমলা, আপেল, চিপস, পপকর্ন, বিস্কুট, ঝাল মুড়ি, বিড়ি-চা-পান বিক্রেতাদেরও। এই ভাসমান হকারদের কেউ কেউ জানালেন, তারা রাত ১১টার দিকে বেচাকেনা গুটিয়ে নিলেও আজ লাইন লম্বা হওয়ায় এখনও থেকে গেছেন।
বরিশালগামী একটি বাসের যাত্রী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফ ওয়াহিদ বললেন, ঢাকা থেকে রাত ৮টায় ছেড়ে আসায় রাতের খাবার খাওয়া হয়নি। তাই রাতের খাবার খাচ্ছি। এখানে পরিবেশ ভালো নেই। তারপরও ক্ষুধা মেটাতে কোনো রকম খাচ্ছি।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৬
এমএফআই/এইচএ/এটি