সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, আসিফ আজিজ ও মানসুরা চামেলীসহ আমরা চিত্রার যাত্রী, ঢাকা-খুলনার হাজারো যাত্রীকে প্রতিদিন গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছে। পুরো নাম চিত্রা এক্সপ্রেস।
যেহেতু প্রথম খুলনা অঞ্চলে যাচ্ছি তাও আবার প্রিয় বাহন ট্রেনে, উচ্ছ্বাসটা স্বাভাবিকভাবেই বেশি। ট্রেনে উঠেই মনটা আরও ভালো হয়ে গেলো। পরিষ্কার ঝকঝকে মেঝে, সিটগুলোও পরিচ্ছন্ন, নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রা। হকারের উৎপাত নেই। বেশ আরাম করে বসে সবাই মাত্র সেলফি তোলা শেষ করে ফেসবুক, টেলিগ্রামে বন্ধু আর সহকর্মীদের সঙ্গে শেয়ার করছি, এরই মাঝে চা-নাস্তা নিয়ে হাজির বিল্লাল হোসেন।
তাকে দেখে নাস্তা কি আছে জানতে চাইলাম। তিনি জানালেন, কাটলেট আর জেলি রুটি আছে, দাম ৮০ টাকা। এবার রাতের খাবারে কি কি থাকবে? প্রশ্ন করায় উনি বেশ অবাক হয়ে উত্তর দিলেন, রাতের খাবারে আলাদা কি থাকবে (!) এগুলোই তো।
এবার আমার মতো নতুন যাত্রীদের অবাক হওয়ার পালা। তার মানে কি? সন্ধ্যার আগে সবাই বাসা থেকে বেরিয়েছে, কেউ কেউ তো অফিস থেকে সরাসরি ট্রেনে, কারওই তো রাতের খাবারের চিন্তা ট্রেন ছাড়ার আগে হয়নি। এখন…উপায়, সারারাত না খেয়ে থাকতে হবে?
এ ভাবনায় অনেকেরই মুখ শুকিয়ে গেলো, যাত্রার আনন্দও যেনো ধীরে ধীরে কমে এলো, যখন অনেকেই বাধ্য হয়ে সেই কাটলেট আর জেলি রুটি অর্ডার করলেন, দেখা গেলো কেউই পুরো খাবারটি তৃপ্তি নিয়ে শেষ করতে পারলেন না।
একজনতো বলেই দিলেন, কাটলেট তো কাঠের মতো শক্ত! এটা খাওয়ার জন্য যে কসরত করতে হচ্ছে তাতে আরও অ্যানার্জি খরচ হয়ে যাচ্ছে, পেট ভরার বদলে আরও ক্ষুধা বেড়ে যাবে। এই খাবারও রাত ১১টার পর আর পাওয়া গেলো না। শীতের দীর্ঘ রাত খাবার না খেয়ে অনেকেই বিরক্তি প্রকাশ করলেন, এই সিস্টেমের ওপর।
বেশি অসহায় দেখালো, যারা পরিবারের শিশু সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। অনেক বাচ্চাই রাতে খাবার না পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেলো। এমন পরিস্থিতিতে বাবা-মায়েরা বার বার করে বলছিলেন, এটা কেমন কথা সারারাত সবাই জার্নি করবে- মানুষের ক্ষুধা লাগবে এটা কর্তৃপক্ষের মাথায় থাকে না কেন? ট্রেনের ভাড়া তো কম না। ঢাকা থেকে খুলনার এসি সিটের ভাড়া প্রায় এক হাজার টাকা।
যদি নিজেরা খাবারের ব্যবস্থা করতে না পারে, তবে বাসের মতো সিস্টেম করতে পারে। যেমন কোনো রেস্টুরেন্টের সঙ্গে চুক্তি করে, যাত্রী সংখ্যা জানিয়ে দিলে খাবার নিয়ে নিতে পারে। আবার একটি রেস্টুরেন্টে ১৫ থেকে ২০ মিনিট যাত্রা বিরতিও দিতে পারে, এতে করে দীর্ঘ যাত্রায় এক জায়গায় বসে থাকার থেকেও কিছুটা মুক্তি মেলে। পছন্দের খাবার খেয়ে নিতে পারে সবাই। তাতে পুরো যাত্রাটি আরও উপভোগ্য হতে পারে, বললেন তারা।
রাতের খাবারের বিষয়ে কথা বলি ট্রেনের খাবারের দায়িত্বে থাকা আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে, তিনি অবশ্য এই বিষয়ে ঠিক করে দেওয়া সেই কাটলেট, রুটি আর চিকেন ফ্রাই-সেট খাবারের বাইরে কোনো কিছু যাত্রীদের জন্য ব্যবস্থা করা হবে এমন কোনো সুখবর দিতে পারলেন না।
সোমবার ছাড়া প্রতিদিন চিত্রা সকাল সাড়ে ৮টায় খুলনা থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। আবার সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকা থেকে ফিরতি যাত্রা করে খুলনার পথে।
শুধুমাত্র যাত্রীদের রাতের খাবারের দিকে যদি নজর দিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তবে সব মিলিয়ে চমৎকার একটি সার্ভিস হতে পারে চিত্রা এক্সপ্রেস। এ রুটে চিত্রা ছাড়াও সুন্দরবন এক্সপ্রেস নামে অরেকটি ট্রেন নিয়মিত যাওয়া-আসা করছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৬
জেডএস/এটি