রাস্তার পাশের বিলজলার উপর কাঠের পাটাতনে ঝুলে থাকা হোটেলটি। হাসান কি খাবার আছে দাও- বলে ডাক দিতেই পেছন থেকে বের হয়ে এলো ১৬-১৭ বছরের বিনয়ী এক কিশোর।
একটু আঁতকে উঠলাম সবাই। পাখির মাংস! বললো হ্যাঁ, আমাদের এখানে পাখির মাংস পাওয়া যায়। তবে খুব গোপনে বিক্রি করতে হয়। র্যাব খবর পেলেই সমস্যা। তবু কেন বিক্রি করো, পাখি জবাই করে খেতে খারাপ লাগে না?
একটু করুণ সুরে উত্তর, খারাপ লাগে। কিন্তু কি করবো। আমি না কিনলে কেউ না কেউ তো কিনে খাবে।
হাসান জানালো, এখানে সব টাকাওয়ালা ব্যবসায়ীরা থাকে। আশপাশের বিভিন্ন বিল-জলাশয়ে শীতের পরিযায়ী পাখিরা আসে। মাস তিনেক এক শ্রেণীর মানুষ সেসব পাখি জাল পেতে, টোপ দিয়ে ধরে চড়া দামে বিক্রি করে।
বিক্রি হওয়া পাখির মধ্যে রয়েছে চ্যাগা, বিভিন্ন প্রজাতির হাঁসজাতীয় পাখি, বক, দুমকো প্রভৃতি। আমাদের সামনে যেটা আনা হলো সেটি চ্যাগা বা কাদাখোঁচা পাখি। রান্না পাখির দাম ৭০-৯০ টাকা। ছোট পাখি হওয়ায় এটি বেশি বিক্রি হয় বলে সরল স্বীকারোক্তি হাসানের।
হাঁস পাখিগুলোর দাম ৪০০-৫০০ টাকা। মাংস হয় ১ কেজি। এসব পাখি গোপনে এনে আড়তের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয় বেশি। বিক্রেতারা ব্যাগে করে নিরাপদ দূরত্ব পর্যন্ত নিয়ে আসেন। ফলে কেউ বুঝতে পারে না বেশিরভাগ সময়।
রান্না পাখির মাংসের ক্রেতা কারা জানতে চাইলে হাসান বলে, এখানে মূলত পরিচিত লোকেরাই এসে চায়। অপরিচিতদের কাছে বিক্রি করা হয় না। আপনাদের একজনকে চিনি বলে দিলাম। পর্যটকরাও আসে অনেক সময় খোঁজ পেয়ে। তবে তারা স্থানীয় কাউকে নিয়ে আসে। আবার খুলনা থেকেও কেউ কেউ পাখির মাংস খেতে এখানে আসে।
মসজিদ, মন্দির, প্রাচীন স্থাপত্য আর সুন্দরবন ঘেরা বাগেরহাটে শীত মৌসুমে প্রচুর সংখ্যক পর্যটক আসেন। পর্যটকদের মতো পরিযায়ী পাখিরাও ঐতিহ্যবাহী এ জেলার অতিথি। কিন্তু এক শ্রেণীর অসৎ মানুষের কারণে বেঘোরে মারা পড়ছে প্রকৃতির অনিন্দ সুন্দর এ সৃষ্টি।
পর্যটক আর স্থানীয় ব্যবসায়ীরা যদি একটু সচেতন হন তাহলে অমানবিকতা থেকে বেঁচে যাবে এসব মায়াবি পাখিরা।
** সুন্দরে এতো হিংসে কেন!
বাংলাদেশ সময়: ২০৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৬
এএ/এইচএ/এটি