বাগেরহাট থেকে: ফকিরহাটে কোনোকালে খুব বেশি ফকির ছিল কিনা তা কয়েকজনের কাছে জিজ্ঞেস করেও জানা গেলো না। তবে কথিত আছে, উপজেলার একটি জায়গায় একসময় ফকিররা ছোট একটি বাজার মতো গড়ে তোলে।
সে সময়ের অবস্থা যাই থাক এ উপজেলার সুদিন শুরু হয় আশির দশকে। ওইসময়ও মানুষের অভাব ছিল অনেক বেশি। ঠিকমতো খাওয়া হতো না। কিন্তু ফলতিতায় গড়ে ওঠা মৎস্য আড়তের হাত ধরেই পরিবর্তনের সূচনা। নব্বইয়ের দশকে এসে এ আড়তের নাম ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে। এখানকার মানুষের সততা, নিষ্ঠাই ঘুরিয়েছে তাদের উন্নতির চাকা।
শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) শেষ বিকেলে মিনি কুয়েতের খোঁজে যাওয়া ফকিরহাটের মৎস্য আড়তে। দেশের সবচেয়ে বড় চিংড়ি বিপণন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ফকিরহাটের ফলতিতা। বাগেরহাটসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে শত শত টন মাছ আসে এখানে। প্রতিদিন এখানে লেনদেন হয় দুই থেকে ১০ কোটি টাকা। মাছের ঘের মালিক, আড়তদার, ব্যবসায়ীদের জমায়েতে প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠে এ এলাকা।
‘সাদা সোনা’ খ্যাত চিংড়ি এখানকার আড়তের প্রধান মাছ। তবে রুই, কাতলা, মৃগেল, কার্প, ট্যাংরা, পারসে, ভেটকি প্রভৃতি মাছও বিকিকিনি হয়। প্রতিদিন লক্ষ কোটি টাকার হাতবদলে ফকিরহাট হয়ে উঠেছে কুয়েতের মতো অর্থ-বিত্তশালী। তাই চারদিকে ফকিরহাটের পরিচিতি এখন মিনি কুয়েত নামে। অবশ্য সেটা সেই নব্বই দশক থেকেই।
বিশাল সাইজের গলদা, বাগদা, বিভিন্ন প্রজাতির ঘেরের মাছ একসঙ্গে যারা দেখতে চান তাদের জন্য আদর্শ একটি জায়গা ফলতিতা। বাগেরহাট বেড়াতে আসা পর্যটকরা প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে ৩টার মধ্যে এখানে এলে দেখতে পারবেন পাইকারি মাছের বিখ্যাত এ বাজার।
মূল বিকিকিনি, হাঁকডাক ৩টা পর্যন্ত চললেও এরপরও চলে মাছ বাছাই, প্যাকেটিং, টুকটাক বেচাকেনা। বিকেল ৫টার দিকে তাই মোকামের সিংহভাগ আড়তে কাজ বন্ধ থাকলেও খোলা পাওয়া গেলো একটি। এসআর মৎস্য আড়ত। সেখানে কথা হয় ইম্পোর্টারকে ফ্রেশ মাছ সরবরাহকারী শেখ নাসিমুল ইসলামের সঙ্গে। তিনিই জানাচ্ছিলেন নানান তথ্য।
নাসিমের সঙ্গে আড়তদার সঞ্জয় যোগ দিয়ে জানান, মাছে পুশ ঠেকানোর জন্য তারা সংগ্রাম করছেন। কারণ একবার পুশ প্রমাণিত হলে বিদেশি সব অর্ডার বাতিল হয়ে যায়। এ আড়তের সুনামই টাটকা ফেশ মাছ সরবরাহ করার জন্য।
ভালো গ্রেডের মাছ পেতে সরাসরি ঘের মালিকদের সাহায্য নেওয়া হয়। জুন, জুলাই ও অক্টোবর মাসে সবচেয়ে বেশি চিংড়ি মেলে। এসময় এখানকার প্রায় ৯০টির মতো আড়তে মোট ৮-১০ কোটি টাকার লেনদেন হয় প্রতিদিন।
বিকেলে যে গলদাগুলো ককশিটে ভরে প্যাকেজিং করতে দেখা গেলো সেগুলো যাবে ঢাকা। সেখানে ফের প্যাকিং হয়ে তবেই থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করা হবে।
এ উপজেলায় কয়েকশ আড়তদার থাকলেও ঘের ব্যবসায়ী রয়েছেন হাজার পাঁচেক। এমনটিই জানাচ্ছিলেন তারা।
মাছ সংগ্রহ করা হয় মূলত মোড়েলঞ্জ, শরণখোলা, কচুয়া, রামপাল, মংলা, রূপসা, গোপালগঞ্জ, পিরোজপুর প্রভৃতি অঞ্চল থেকে। এ বছর বন্যা হওয়ায় ব্যবসা একটু খারাপ বলে জানাচ্ছিলেন আড়তদাররা।
মিনি কুয়েত নিয়ে কথা বলতে গেলে ব্যবসায়ীরা হেসে বলেন, মিনি কুয়েত তো অনেক আগে থেকেই বলে। এখন কেউ কেউ মিনি সিঙ্গাপুরও বলতে শুরু করেছে।
যে যাই বলুক আমাদের দেশের ‘সাদা সোনার’ অন্যতম এ আড়তটি সত্যি আকর্ষণীয়, চোখ জুড়ানো। যারা মাছ কিনতে, খেতে ভালোবাসেন তাদের জন্য নিঃসন্দেহে বাজারটি লোভনীয়। সুতরাং বাগেরহাট বেড়োতে এলে একবার কিন্তু ঢুঁ মারতেই পারেন।
** পরিযায়ী পাখি যাচ্ছে পর্যটক-ব্যবসায়ীর পেটে
** সুন্দরে এতো হিংসে কেন!
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৬
এএ/এইচএ