বাগেরহাট থেকে: কথিত আছে, খানজাহান আলী বাগেরহাট এলাকায় ৩৬০টি মসজিদের পাশাপাশি সমসংখ্যক দীঘি কেটেছিলেন। এর একটি ঘোড়া দীঘি।
বাগেরহাট শহর থেকে ৬-৭ কিলোমিটার দূরে জেলার সবচেয়ে পরিচিত স্থাপনা ষাট গম্বুজ মসজিদ। মসজিদ, জাদুঘর, দীঘিসহ এটি এখন কমপ্লেক্স। ২০ টাকায় টিকিট কেটে (শিক্ষার্থীদের ৫ টাকা) ঢুকে উত্তর দিকে এগোলেই বাঁপাশে মসজিদ। এর পশ্চিমপাশের সীমানাপ্রাচীর টপকালেই চোখ আটকে রাখে ৪০ একরের বিশাল দীঘি। ঘোড়া দীঘি নামে এটি বেশি পরিচিত হলেও ষাটগম্বুজের দীঘি নামেও চেনে অনেকে। এটি বাংলাদেশের একমাত্র সংরক্ষিত জলাশয়।
প্রচলিত আছে, খান জাহান আলী এই দীঘিটি মেপেছিলেন ঘোড়ায় চড়ে। খান জাহান তার নিজের নেওয়া পদবি এবং তার প্রকৃত নাম উলুঘ খান বলে প্রচলিত রয়েছে। ঘোড়া যেখানে থেমে যায়, সেখানে গিয়েই তিনি মাপ বন্ধ করে দেন। সেখান থেকে এর নাম ঘোড়া দীঘি। আবার অনেকের বিশ্বাস, এখানে ঘোড়দৌড় হতো, প্রচুর সংখ্যক ঘোড়া এর পাড়ে থাকতো বলেই এর নাম ঘোড়া দীঘি। কেউ কেউ বলে, দীঘি খননের পর পানি না ওঠায় খান জাহান আলী ঘোড়া নিয়ে এর ভেতরে গিয়েছিলেন বলেই এর এ নামকরণ।
নামকরণ যেভাবেই হোক দীঘি কাটা নিয়ে খান জাহান আলীর বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল। তার মাজারের পাওয়া শিলালিপি অনুযায়ী তিনি মারা যান ১৪৫৯ খ্রিস্টাব্দে। দীঘিগুলো যেহেতু তার জীবদ্দশায় কাটা সেহেতু এর কোনোটির বয়স ৬শ বছরের কম নয়। মূলত ইসলাম প্রচারের জন্য বাগেরহাট আসা খান জাহান যখন এখানে আসেন তখন সুপেয় পানির সংকট ছিল প্রকট। নোনা অঞ্চল হওয়ায় পানির সমস্যা ছিল বেশি।
ধারণা করা হয় এজন্যই তিনি মসজিদের পাশাপাশি সুন্দরবনের লোনা অঞ্চলের কাছাকাছি এসে দীঘি কাটেন। সেসময় এ দীঘির পানিই ছিল খাবার পানির একমাত্র নির্ভরযোগ্য উৎস। দীঘিতে আবার সবসময় কুমির ছেড়ে দেওয়া হতো। এর কারণ ছিল পানির বিশুদ্ধতা যেন কেউ নষ্ট না করতে পারে।
লম্বায় পূর্ব-পশ্চিমে ১২৪৭ ফুটের এ দীঘি চওড়ায় ৭৪৯ ফুট। কুমির ছিল মূলত ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত। একসময় বাগেরহাট পৌরশহরের যাবতীয় পানি সরবরাহ করা হতো এ দীঘি থেকেই। এমনটাই জানাচ্ছিলেন বাগেরহাট জাদুঘরের কাস্টডিয়ান মো. গোলাম ফেরদৌস।
মসজিদটি অনন্য সুন্দর হলেও পর্যটকদের দেখতে দেখতে একসময় একঘেঁয়েমি চলে আসে। তাই দীঘিটাকে আরও আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে। টোটাল কমপ্লেক্সে দক্ষিণ এশীয় পর্যটন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কাজ হচ্ছে। দীঘির দক্ষিণ পাশে ১১টি দৃষ্টিনন্দন শেড তৈরি করা হয়েছে যেন পর্যটকরা ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হলে বিশ্রাম নিতে পরেন। ওয়াশরুম নির্মাণ হলেও এখনও চালু করা যায়নি। এখনও কাজ চলছে।
এসব জানিয়ে ফেরদৌস বলেন, এখন দীঘির একপাশে কিছু কাজ করা হয়েছে। বসার জন্য চেয়ার, ছাউনি করা হয়েছে। লাগানো হয়েছে সবুজ ঘাস। চেষ্টা চলছে পর্যটক ফ্রেন্ডলি পরিবেশ তৈরির। কিছু বোট যদি দীঘিতে নামানো যায় তাহলে পর্যটক আরও বাড়বে। কারণ তারা বৈচিত্র্য চায়।
ঐতিহাসিক এ দীঘির পানিতে লাল শাপলা ভরপুর। মাছ ধরা নিষেধ সেই ২০০১ সাল থেকে। এখন কেউ কেউ মানত করে কিছু মাছ ছাড়েন। এছাড়া মাছও ছাড়া হয় না। শানবাঁধানো একটি ঘাটও আছে। দুপাশ দিয়ে হাঁটার জন্য করা হয়েছে পাকা লেন। পর্যটকরা এখানে এসে এখন একঘেঁয়েমি থেকে মুক্ত হয়েছে। তারা আগের থেকে বেশি সময় কাটায় বলেই মত সংশ্লিষ্টদের।
** বাগেরহাটের মিনি কুয়েত!
** পরিযায়ী পাখি যাচ্ছে পর্যটক-ব্যবসায়ীর পেটে
** সুন্দরে এতো হিংসে কেন!
বাংলাদেশ সময়: ২৩২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৬
এএ/এইচএ