খুলনা (রূপসার ঘাট): দুপুর গড়িয়ে সবে বিকেল। ব্যাটারি চালিত অটোতে খুলনা সদর হয়ে রূপসা ঘাট।
কারো হাতে ব্যাগ, মাথায় ভারি বস্তা, কারো হাতে হাঁস-মুরগী ও ব্যাগ ভর্তি বাজার নিয়ে ঘাটের পল্টুনে দাড়িয়ে নৌকার অপেক্ষায় বিভিন্ন পেশার শতশত মানুষ। ইঞ্জিনের ভট ভট আওয়াজ শেষে যেই নৌকা ঘাটে ভিড়ছে, সঙ্গে সঙ্গে ব্যস্ত মানুষগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ছে নৌকায় উঠতে। চলাচলে অভ্যস্ত হওয়ায়,নৌকার দুলনীকে তোয়াক্কা করছে না তারা। লাফ দিয়েই নৌকায় উঠছেন। অবশ্য যাত্রীদের অভয় দিতে ভেড়ানো নৌকায় দড়ি লাগিয়ে প্রাণপণে আঁকড়ে ধরে থাকেন হেলপার।
কয়েক মিনিটের ব্যবধানে গোটা পঞ্চাশেক যাত্রী নিয়ে আবার ভট ভট আওয়াজ তুলে রূপসা নদী পাড়ি দিচ্ছে ইঞ্জিন চালিত নৌকা বা ট্রলারগুলো। ওপারের ঘাটে নেমেই দাড়িয়ে থাকা বাসগুলোতে করে যে যার গন্তব্যে রওনা হচ্ছে। রূপসা ঘাট ঘিরে মানুষের প্রতিদিনকার এই ব্যস্ততা, খুলনা শহরের প্রাণের স্পন্দনেই যেন জানান দেয়।
সোমবার (১৯) রুপসা ঘাটে গেলে এভাবে কর্মব্যস্ত মানুষের প্রাণচঞ্চল মুখগুলো নানা ভঙ্গিমায় ধরা পরে। নৌকার মাঝিদেরও পারাপার নিয়ে দম ফেলার ফুরসত নেই্।
রুপসা ঘাট দিয়ে পূর্ব থেকে ঢুকলে পড়ে খুলনা সদর। পশ্চিম দিক দিয়ে ঘাট পার হলে রুপসা উপজেলার গ্রামসহ বাগেরহাট,বরিশাল অঞ্চলের জেলাগুলো যাওয়া যায়। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই ঘাট দিয়ে চলাচল করেন। ভ্রমণ পিপাসুরাও নৌকা ভাড়া করে এই ঘাট দিয়ে সর্পিল আকৃতির রুপসা নদীর রুপ উপভোগ করেন। সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের বীর সন্তান বীরশ্রেষ্ট রুহুল আমীনের মাজারটাও ঘুরে যান।
খুলনা সদর উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে রূপসা নদীটি। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে,বৃটিশ শাসনামলে নির্মিত হয় রুপসা ঘাট। রূপসা সেতু নির্মাণের পূর্বে খুলনা শহরে প্রবেশের একমাত্র দ্বার ছিলো রূপসার ঘাট। বাগেরহাট, পিরোজপুরসহ বরিশাল অঞ্চলের মানুষজনকে খুলনা আসতে হলে রূপসা ঘাটেই ব্যবহার করতে হত।
সেতু নির্মাণের পর থেকে ঘাট দিয়ে নদী পারাপর কমেছে। কিন্তু সময় বাচাঁনো ও যাতায়ত সস্তা হওয়ায় লোকজনের নদী পার হতে রুপসা ঘাটিই এখনও প্রিয়।
রুপসা ঘাটকে কেন্দ্র করে চলছে বিকিকিনি। ঘাটের দুই পাশেই বসেছে ফল,পোশাক,চা-বিস্কুট ও পান সুপারির দোকান। নদী পার হওয়া মানুষগুলো নিজের প্রয়োজন মতো জিনিসপত্র কিনে নিচ্ছেন।
গোলাম মোস্তফা নামে এক ট্রলারের মালিক বাংলানিউজ জানান, রূপসা ঘাটে ১৬০টি ইঞ্জিন চালিত নৌকা চলাচল করে। ঘাট ছোট হওয়ায় প্রতিদিন এক সঙ্গে সব নৌকা নামানো হয় না। তাই দিনে ৬০ থেকে ৭০ টি নৌকা যাত্রীদের নদী পারাপার করে। নৌকাগুলো ওপর নির্ভর করে ১৭২ টি পরিবার।
নদীকে ঘিরে পযর্টনের সম্ভাবনা থাকায় খুলনা সিটি করপোরেশন রূপসা ঘাটের সৌন্দর্য বাড়ানোর উদ্যোগে নিয়েছে। ঘাটের পশ্চিম দিকে ৫৪০ মিটার ও পূর্বে দিকে ২১১ মিটার ঘাট সংস্কার করা হবে। ঘাটের পশ্চিম পাশে বাসটার্মিনাল ও যাত্রী ছাউনী নির্মাণ করাও হচ্ছে। ঘাটকে সজ্জ্বিত করা হবে নানা ধরনের ফুল ও গাছ দিয়ে। নতুন বছরের ফেব্রুয়ারীতে ঘাটের কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হবে।
রুপসা ঘাট সংস্কার হলে ঘাটের সৌন্দর্য বহুগুণে বেড়ে যাবে। রূপসা নদীতে বেড়াতে আসা পযর্টকরা আরও আকৃষ্ট হবে বলে মনে করেন প্রকল্পটির তত্ত্বাবধায়ক আবুল কালাম আজাদ।
রূপসা ঘাট দিয়ে একসময় ফেরি চলাচল করত, এতে আরো জমজমাট ছিলো রুপসা ঘাট।
বাবুল শেখ নামে ঘাটের এক চা বিক্রেতা বাসিন্দা জানালেন, খুলনা সদর থেকে রুপসা ঘাট পার হয়ে বাগেরহাট যাতি চাইলে, ত্রিশ মিনিট লাগে। রূপসা সেতু হয়ে যাতি ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট লাগে। মানুষের ব্যস্ততা বাড়ি(বেড়ে) গেছে তাই,ঘাট দিয়ে যাতি চায়। জন প্রতি এক টাকা ও মালের ধরনের ওপর টোল দিয়ে নদী পার হয় মানুষ।
ঘাটে কাজে সেরে আসার সময় দিনের আলো নিভতে শুরু করছে। রূপসা ঘাটের ব্যস্ততা বেড়েছে বহুগুণে সঙ্গে মানুষের কোলাহল ও মাঝি-মাল্লার হাক-ডাক।
** হিম শীতে ডাকাতিয়া বিলে
** বাগেরহাটের পালপাড়ার বাসনকোসন সারাদেশে
** সপ্তদশ শতকের বিস্ময় ‘অযোধ্যা মঠ’
** ‘এখানে বড়-ছোট নাই, যাই করেন দশ টাকা’!
** বিমানবন্দর রেলস্টেশনে অকেজো মাইক!
বাংলাদেশ সময়: ১০০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৬
এমসি/এসআইএস /জিপি