ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

ঝড়ের চেয়েও বেশি ভয় দস্যুতে

মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৬
ঝড়ের চেয়েও বেশি ভয় দস্যুতে অবসরে জাল বুনছে জেলে, ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে মাছ সংগ্রহ করতে হয় জেলেদের। এছাড়াও খাদ্য আর চিকিৎসার অভাব জেলেদের নিত্য সঙ্গী। জলে ভিজে, রোদে পুড়ে সংগ্রহ করা মাছ যে সঠিক দামে বিক্রি করতে পারবে তার নিশ্চয়তা নেই।

দুবলার চর (সুন্দরবন) থেকে: প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে মাছ সংগ্রহ করতে হয় জেলেদের। এছাড়াও খাদ্য আর চিকিৎসার অভাব জেলেদের নিত্য সঙ্গী।

জলে ভিজে, রোদে পুড়ে সংগ্রহ করা মাছ যে সঠিক দামে বিক্রি করতে পারবে তার নিশ্চয়তা নেই। এত ভয় আর অনিশ্চয়তার মাঝেও দস্যুর ভয়ে মরার আগেও শতবার মরে দুবলার চরের জেলেরা।

অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় বার থেকে পনের হাজার জেলে দুবলার চরে থেকে সাগরে মাছ ধরে। এছাড়াও আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে গভীর সমুদ্রে ইলিশ ধরতে যায় আরও সহস্রাধিক জেলে। সিডর আইলাসহ বিভিন্ন সময়ে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণ হারায় শতশত জেলে।
সাগর থেকে মাছ এভাবেই নিয়ে যাওয়া হয় আড়তে: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
দুবলার চরের জেলেরা বাংলানিউজকে জানান, গত নভেম্বরের বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘুর্ণিঝড়ে কয়েকজন জেলে প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া এখনও কয়েকজন জেলে নিখোঁজ রয়েছেন। এমনিভাবে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে সময় সময় প্রাণ হারিয়েছেন সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা।
কিন্তু ঝড়ে মরার ভয়ের চেয়ে দস্যুর হাতে পড়ার ভয়েই মরার আগে শতবার মরেন সুন্দরবনে মাছ ধরতে আসা জেলেরা।

দুবলার চরের একাধিক জেলে বাংলানিউজকে বলেন, চলতি মাসের ৩ তারিখে পঁচিশ থেকে ত্রিশ জেলেকে অপহরণ করে সু্ন্দরবনের ডাকাত আলিফ বাহিনী। অবশ্য নামটি নিয়েও তারা সংশয় প্রকাশ করেন, কেননা ডাকাত বাহিনী ক্ষণে ক্ষণে নাম বদলায়। তারা জেলেদের অপহরণ করে দেড় লাখ টাকা করে মুক্তিপণ দাবি করেন।

দুবলার চরের ‘নিউমার্কেট’খ্যাত বাজারে ফার্মেসির মালিক আনোয়ার ও তার ফার্মেসিতে বসা একাধিক জেলে জানান, পরবর্তীতে এক লাখ পঁচিশ হাজার টাকা করে মুক্তিপণ দিয়ে তাদের ছাড়িয়ে আনেন ওইসব ট্রলারের মালিক। ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য।  ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
তারা আরও জানান, মুক্তিপণ আদায়ের কৌশল হিসাবে জেলেদের উপর নির্যাতন করে মোবাইলের মাধ্যমে তাদের পরিবারকে জেলেদের আর্তনাদ শোনায় ও টাকা দিতে বাধ্য করে তারা।

দুবলার চরের একটি জেলে ঘরের মালিক (বদ্দা) টোপাল বিশ্বাস বাংলানিউজকে জানান, টাকা দিয়ে না ছাড়িয়ে আনলে তারা তাদের মেরে ফেলতে পারে। সেক্ষেত্রে ওইসব জেলের মা-বাবা কিংবা পরিবারের কাছ থেকে আমরা মামলার শিকার হতে হয়।
রোদে শুকানো হচ্ছে ছোট মাছের শুটকি।  ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
তিনি বলেন, ‘আগেতো দস্যুরা চরেও হানা দিতো- জেলেদের ধরে নিয়ে যেতো। বর্তমানে তারা চরে হানা না দিলেও সাগরে মাছ ধরতে গেলে অপহরণ করে নিয়ে যায়। আমরা ঝড়ের চেয়েও আমরা বেশি ভয় পাই দস্যুদের। সারাক্ষণ আতঙ্কে থাকি কখন না জানি দস্যুদের দ্বারা অপহরণ হয়।

অপর জেলে মনিকান্ত বিশ্বাস বলেন, ‘প্রকৃতিক দুর্যোগ সবসময় হয় না। আমরা এটা নিয়ে ভয়ও পায় না। কিন্তু দস্যুর ভয় আমাদের সবসময় তাড়া করে বেড়ায়। ভয়তো আর লুকানো যায় না। ’

জেলেদের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহবান জানান চরের জেলেরা।

আরও পড়ুন...
** জেলেদের প্রাণ দুবলার চরের ‘নিউমার্কেট’
** বনরক্ষীদের জীবনই অরক্ষিত
** মংলা হতে পারে সুন্দরবন ভ্রমণের প্রবেশদ্বার (ভিডিও)
** গাইড থেকে ট্যুর অপারেটর
 

সহযোগিতায়

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৬
এমআই/এটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ