খুলনা থেকে: বাংলার মানচিত্রে খুলনা শহর ইতিহাস ও ঐতিহ্যের দিক থেকে খুবই গুরুত্বের। শহরটি রুপসা নদীর তীরে অবস্থিত।
১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর পাকিস্থানিদের হাত থেকে বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে রূপসার খুলনা শিপইয়ার্ডের সামনে নিজের জীবনকে বিলিয়ে দেন তিনি। এরপর রুপসা নদীর পূর্বপাশে বাঘমারা গ্রামে নদীর পাশে তাকে দাফন করা হয়। দেড় একর জমির ওপর রুহুল আমিন ও বীরবিক্রম মহিবুল্লাহের সমাধিসৌধ অবস্থিত।
এলাকাবাসীর জানান, স্বাধীনতার পর থেকে প্রায় অরক্ষিত থাকা মহান দুই ব্যক্তির কবরস্থানকে কমপ্লেক্স হিসেবে গড়ে তুলা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে জায়গাটির সুরক্ষা দিতে পশ্চিমে নদীর পারে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ২০১৫ সালে মাজারটির পূর্বপাশে রাস্তায় লোহার বেড়া দিয়ে বেষ্টনী দেওয়া হয়েছে। উত্তর-দক্ষিণে মাছের ডিলারদের দোকান দ্বারা বেষ্টিত হয়েছে।
সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বেশ পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন। আরও সুন্দর ও আধুনিক করতে এর পাশে অবস্থিত জায়গায় বালি ও মাটি ফেলা হয়েছে। নতুন মাটিতে মাজারটির দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে তিনটি নারিকেল গাছ লাগানো হয়েছে। গাছের পাশাপাশি মাজারটিজুড়ে তিন ধরনের ফুলের গাছও লাগানো আছে।
এগুলো ছাড়াও মাজারটির উত্তর পশ্চিমে জন্মিয়েছে দুটি কুল গাছ। গাছ দুটিতে কুল ধরেছে। শুধু তাই নয়, মুক্তিযোদ্ধের সাক্ষী হিসেবে একটি খেজুর গাছও রয়েছে। মাজারটির সার্বক্ষণিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আব্দুল ওয়াহাবকে। তিনিই দেখভাল করবেন। তবে সার্বিক তত্ত্বাবধানে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এক বছর আগেও মাজারটি দক্ষিণ পাশে ছিল পানির খাল। এখানে মানুষজন মলমূত্র ত্যাগ করতো। আর সন্ধ্যার পর বসতো গাঁজার আখড়া।
স্থানীয় দোকানদার মোম্মদ নাইম বাংলানিউজকে বলেন, আগে কবরের মাঝখানে নদীতে যাওয়ার জন্য একটি রাস্তা ছিল। পশ্চিম পাশেই ফাঁকা মাঠ ছিল। ফাঁকা এই মাঠে আমরা ক্রিকেট খেলতাম।
মাজারটির দক্ষিণ-পশ্চিমে সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা নারিকেল গাছের একটি অংশ মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকারদের গুলিতে ফুটো হয়ে যায়। যা আজ পর্যন্ত ভরাট হয়নি বলে গল্প বলেন ২০ বছর বয়সী এই তরুণ।
এদিকে রুপসা বাসস্ট্যান্ড থেকে মাজারটির পাশদিয়ে রুসপা সেতুর সঙ্গে যুক্ত হওয়া দেড় থেকে ২ কিলোমিটার বাইপাস রাস্তা। মাছ ব্যবসায়ীদের চলাচলের এই রাস্তাটির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। রাস্তাটিতে নিয়মিত ট্রাক চলাচল করায় হাজার হাজার বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে মাজারে আসা মানুষদের কষ্ট করত হয়। তাই দ্রুত রাস্তাটি সংস্কার করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
মা এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় শহীদ রুহুল আমীনের কবরটি অবহেলার পাত্র ছিল। কেউ এখানে আসেনি। তবে এই সরকার তাকে মূল্যায়ন করছে। তার মাজারটি সংরক্ষণ করা হয়েছে।
বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন নৌবাহীনীর কর্মকর্তা হওয়ায় তার পাশাপাশি শহীদ মহিবুল্লাহ বীর বিক্রমের কবর সংরক্ষণের দায়িত্ব নেয় বাংলাদেশ নৌপরিবহন। তাদের উদ্যোগের ফলে এখন প্রতিদিন দূরদুরান্ত থেকে মাজার দুটি দেখার জন্য মানুষ আসেন।
বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে খুলনার রূপসা নদীতে একটি যুদ্ধজাহাজে থাকাকালে শত্রুপক্ষের বিমান হামলায় শহীদ হন। এই বীর ১৯৩৫ সালে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার বাঘপাচড়া গ্রামে (বর্তমান শহীদ রুহুল আমিন নগর) জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আজহার পাটোয়ারী ও মাতা জুলেখা খাতুন। অপরদিকে দিকে বীরবিক্রম মহিবুল্লাহও একই দিনে শহীদ হন।
আরও পড়ুন
***আড়াইশ বছর আগের ভূমিকম্প প্রতিরোধক জমিদার বাড়ি
**খান জাহান-সুন্দরবনের বাগেরহাটে আসবেন যেভাবে
** পাটুরিয়া ঘাটের অপেক্ষা-বিরতিতে খাবার-দাবার
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৬
এমএফআই/আইএ