সুশীলন (মুন্সীগঞ্জ, সাতক্ষীরা) থেকে: ফুড়ুৎ করে উড়ে গেলো ঘুঘুটা। এই সামনে ছিলো, মুহূর্তের মধ্যে কোথায় যে লুকালো! সদ্য ফোটা গাঁদার গন্ধ নাকে আসে।
হাত ধরে রঙ্গনের সারিবদ্ধ ঝোপ প্রবেশদ্বার পর্যন্ত এগিয়ে দেয়। ভবনটির নাম পড়ে ভ্রু কোঁচকায়। লেখা, ব্যাঘ্রতট। অর্থ হয়, বাঘের তট বা সৈকত।
তার মানে বাঘ আসে? ‘না, ঠিক বাঘ আসে না। সুন্দরবনের খুব কাছে বলে নামটি দেওয়া। সুশীলন এ জায়গাটির নাম দিয়েছে টাইগার পয়েন্ট। ’
প্রশ্ন আসতে পারে সুশীলন কী! এটি একটি বেসরকারি সংগঠন। এরই রেস্টহাউজ ব্যাঘ্রতট।
সুশীলনের প্রধান নির্বাহী মোস্তফা নুরুজ্জামান এক কথায় ব্যাঘ্রতটকে তুলে ধরলেন এভাবে, খুব কাছ থেকে সুন্দরবন দেখা, আইলার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আশ্রয় ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে একটি জায়গা তৈরির উদ্দেশ্যেই ব্যাঘ্রতট প্রতিষ্ঠা।
তিনতলা ব্যাঘ্রতটের ছাদে উঠলে যেনো সুন্দরবন কাছে চলে আসে। দূর থেকে হাতছানি দেয়। চিলতে ব্যালকনির রেলিংজুড়ে ফুলের টব, চেয়ার-টেবিল পাতা। সেইসঙ্গে পৌষের মিঠে রোদ নিমেষেই দূর করে দেবে নাগরিক কায়ক্লেশ। ডানে-বায়ে অসংখ্য বৃক্ষরাজি দোল খায় উত্তুরে হাওয়ায়।
নিচতলায় নামলেই পাখিদের অর্কেস্ট্রা। একসঙ্গে এতো পাখি কোথা থেকে এলো! ইতিউতি চেয়ে দেখা গেলো অভ্যর্থনা কক্ষের ঠিক পেছনে পাখিদের রাজ্য। সারি সারি মাটির পাতিল, পাখিরা চাইলে বাঁধতে পারে সুখের নীড়। কেউ কিচ্ছুটি বলবে না!
নিচতলায় বেরোনোর মুখে দাঁড়ালে চোখ জুড়িয়ে আসে। বাগান ভর্তি ফোটা ফুল। ডান দিকে মোড় নিলে বসার ছোট্ট বারান্দা। সামনে কাগজী ফুলের ঝাড় হাত নেড়ে ডেকে নেয়। বলে, একটু বসে যাও। মাটির বাড়ি, ছনের চালা- সামনে কাঠের চেয়ার। ডানদিকে লাল শাপলাভর্তি ডোবায় অনাবিল প্রশান্তি ফুটে থাকে।
হাঁসের ডাকে সম্বিত ফেরে। ঢোকার রাস্তার ডানদিকে পায়রা, তিতির আর খরগোশের ছোটাছুটি। পাশে শান বাঁধানো ঘাটের পুকুর। পাড় ধরে হেঁটে গেলে মিলবে সুন্দরবনের ‘মিনি ভার্সন’। ফুল ভার্সন দেখতে পথ চলতে হবে আরেকটু বেশি।
মোস্তফা নুরুজ্জামান বলছিলেন, এদিকে সুন্দরবনের একাংশ পড়েছে। কিন্তু কোনো থাকার জায়গা ছিলো না। দূর থেকে এসে কেউ সুন্দরবন দেখবেন, সে উপায় ছিলো না। সেটি মাথায় রেখে ২০১১ সালের ২ মার্চ ব্যাঘ্রতটের যাত্রা শুরু হয়।
অন্য উদ্দেশ্য তো আগেই বলা হয়েছে। ব্যাঘ্রতটে মোট রুম রয়েছে ২৬টি। এর মধ্যে তিনটি সিঙ্গেল- ভিআইপি, কুইন ও ডিলাক্স। ভাড়া প্রতিরাত যথাক্রমে- ১৮শ, ২২শ ও ২৬শ। ডবল রুম সাতটি, প্রতিরাত ১৫শ। তিন বেডের রুম রয়েছে তিনটি, ১২শ টাকা ভাড়া পড়বে। এছাড়া চার ও আট বেডের রুমভাড়া ১১শ ৫০ টাকা। এর সঙ্গে যুক্ত হবে ভ্যাট ও ১০ শতাংশ সার্ভিস চার্জ।
রুমগুলোর নামগুলোও উল্লেখ করার মতো। সুন্দরবনের বিভিন্ন গাছ, পাখি, নদী, মাছ, দেবতা প্রভৃতির নামে রাখা।
সিঙ্গেল তিনটি রুমের সঙ্গে দেওয়া হয় কম্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট। ব্যাঘ্রতটের রয়েছে নিজস্ব রেস্টুরেন্ট। সকাল, দুপুর ও রাতের খাবার মিলবে এখানে। রেগুলার মেনুর সঙ্গে রয়েছে সাতটি প্যাকেজ।
৭৬ থেকে ১২১ টাকার মধ্যে রয়েছে তিনটি প্যাকেজ ব্রেকফাস্ট। প্যাকেজভেদে থাকবে- রুটি, সবজি, ডাল, ডিম, খিচুড়ি, লটপটি, বসনিয়া পরোটা, লুচি, জুস, ফ্রেশ মিল্ক, চা, কফি প্রভৃতি।
১৭৭ থেকে ৬৪৫ টাকার মধ্যে লাঞ্চ ও ডিনারের প্যাকেজ রয়েছে সাতটি। প্যাকেজভেদে থাকবে- ভাত, ডাল, সবজি, বিভিন্ন ধরনের মাছ, মাংস, বিরিয়ানি, পোলাও, চাইনিজ ফুড, স্যুপ, তেহারি, বারবিকিউ প্রভৃতি।
সবজি, মাছ ও মাংস নিজেদের ক্ষেত-খামার ও স্থানীয় বাজার থেকে আসে। শতভাগ তাজা ও কেমিক্যাল মুক্ত রাখা হয়।
এর বাইরে ব্যাঘ্রতটে রয়েছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন ১শ সিটের একটি কনফারেন্স রুম। এর ভাড়া দিনপ্রতি সাড়ে আট হাজার টাকা। যেকোনো সভা, সমিতি, সেমিনার এখানে করা যাবে।
শীতের সময় অতিথিরা বেশি আসেন। বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠানের কর্মী, উন্নয়ন কর্মীরা ছাড়াও অনেক পর্যটক ব্যাঘ্রতটে থেকে সুন্দরবন দেখে ঘুরে যান। ঢাকা থেকে সরাসরি শ্যামনগরের বাস রয়েছে। সেখান থেকে বাস বা ইজিবাইকযোগে আসা যাবে ব্যাঘ্রতট। শ্যামনগর থেকে মুন্সীগঞ্জের দূরত্ব ২০ কিমি।
সুন্দরবন ছাড়াও খুব কাছের মধ্যে ঘুরে আসা যাবে শ্যামনগরের শাহী মসজিদ, রাজা প্রতাপাদিত্যের বাড়ি প্রভৃতি।
ব্যাঘ্রতট শুধুই যে রেস্ট হাউজ তা কিন্তু নয়। এটি একটি আশ্রয়কেন্দ্রও। এ অঞ্চল একটু বেশি দূর্যোগপ্রবণ। প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আইলার সময় ৮০ জন সেনাসদস্য এখানে থেকে কাজ করেছেন। আশ্রয় নিয়েছিল ১০টি পরিবার ও দুই হাজার মানুষ, যোগ করেন প্রধান নির্বাহী মোস্তফা।
** সিরিয়াল-তামিল-চাইনিজ ছবির দখলে দুবলার চর
** একটু-আধটু কুমড়া-মুলায় দুবালার চর
** দুবলার চরের জেলেদের জীবনগাথা
** না দেখলেই নয় হাড়বাড়িয়া ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র!
**এইসব দিনরাত্রি রয়ে যাবে গাবখান-বলেশ্বরের বাঁকে
** বুড়িগঙ্গা-মেঘনা ছুঁয়ে পশুর নদীর ডাকে
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৬
এসএনএস/এইচএ/জিপি