ঢাকা, বুধবার, ৩ পৌষ ১৪৩১, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

জীবনানন্দের আকাশলীনায় ঘুরে বেড়ায় সুরঞ্জনারা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৬
জীবনানন্দের আকাশলীনায় ঘুরে বেড়ায় সুরঞ্জনারা সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ইকোট্যুরিজম স্পট

‘সুরঞ্জনা, ওইখানে যেও নাকো তুমি, বোলো নাকো কথা ওই যুবকের সাথে; ফিরে এসো সুরঞ্জনা, নক্ষত্রের রুপালি আগুন ভরা রাতে; ... সুরঞ্জনা, তোমার হৃদয় আজ ঘাস, বাতাসের ওপারে বাতাস-আকাশের ওপারে আকাশ।’

সুরঞ্জনাকে ভালোবাসার অনুশাসনে বাঁধতে জীবননান্দ দাশ লিখেছিলেন আকাশলীনা কবিতা। তার সেই বিখ্যাত কবিতার প্রেক্ষাপটকে বাস্তবে রূপ দিতে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে তৈরি হয়েছে ইকোট্যুরিজম স্পট।

যেখান থেকে দেখা যায় সুন্দরবনের একাংশ। উপভোগ করা যায় নদী, আকাশ আর বনভূমির মায়াবী লীলা।

প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিন শতশত দর্শনার্থী আসেন। যাদের বেশিরভাগই তরুণী। কবির ভাষায় যারা হলেন সুরঞ্জনা। সেইসব সুরঞ্জনার একজন হয়ে ইকোট্যুরিজম স্পটটি দেখার সৌভাগ্য হলো। সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ইকোট্যুরিজম স্পটশ্যামনগরে বুড়িগোয়লিনী ইউনিয়নের কলবাড়ি এলাকার বাজার সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত এই ট্যুরিজম স্পটটি। সুন্দরবনের খুব কাছে চুনা ও মালঞ্চ নদীর এপার ঘেঁষে এটি তৈরি করা হয়েছে। বনকে খুব কাছ থেকে দেখতে নদীর পাড় পর্যন্ত ভূপৃষ্ঠ থেকে একটু উপরে তৈরি করা হয়েছে বাঁশের সড়ক। মাঝখানে গোলচত্বর থেকে বিভিন্ন অংশে ভাগ হয়ে গেছে সড়কগুলো। যেগুলোর প্রতিটির মাথায় রয়েছে বসার আলাদা স্থান।

এখানে বসে কেউ একলা বসে আনমনে ভাবছেন, কেউ আত্মীয় স্বজন নিয়ে ঘুরছেন, কেউ আবার মনোরম দৃশ্যকে ফ্রেমে বন্দি করতে নদী-বনের সঙ্গে তুলছেন মোবাইল সেলফি। বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে সরেজমিনে আকাশলীনায় দেখা গেলো এসব চিত্র।

বাঁশের সড়কটি ধরে হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়ে নিচের অংশে জন্ম নেওয়া গেওয়া, গরান, কেওড়া, বাইন, পশুর, গোলপাতাসহ বিভিন্ন গাছ। মাঝখান দিয়ে উঁকি দিচ্ছিল সুন্দরবনের প্রধান গাছ সুন্দরী। সড়ক ধরে স্পটটির শেষমাথায় অর্থাৎ স্পটটির একেবারে দক্ষিণে গেলে চোখে পড়ে চাকতি আকৃতির ম্যানগ্রোভবনের একাংশ। বনের পাশ দিয়ে পূর্বদিকে বয়ে গেলে চুনা নদী। এর সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে মিলেছে মালঞ্চ নদী।

বিকেলের শেষ আলো তখন নিভু নিভু। সুর্য ডুবে যাচ্ছিল প্রতিদিনকার নিয়মে। সুর্যের হলদে রঙে ছেয়ে গেলো পুরো আকাশলীনা। এই দৃশ্যকে নিজের ফ্রেমবন্দি করছেন আকলিমা নামে এক তরুণী। সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ইকোট্যুরিজম স্পটতিনি বললেন, সাতক্ষীরার একটি অন্যতম সুন্দর স্পট এটি। সুন্দরবনের সৌন্দর্য দেখতে ছোটভাইকে নিয়ে বেড়াতে এসেছি। খুব ভালো লাগছে।

এক ব্যবসায়ী রনি জানান, প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে আসা। স্ত্রীকে সঙ্গে করে সুন্দরবন দেখেছি। এক কথায় অসাধারণ। মনখারাপ থাকলে যেকোনো ভ্রমণপিয়াসী মানুষকে এখানে ঘুরতে আসার পরামর্শও দেন স্থানীয় এ পর্যটক।

ঘুরতে ঘুরতে দেখা মিললো স্পট দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানালেন, মাত্র একছর আগে কাজ শুরু হয়েছিল এই ইকোট্যুরিজম নির্মাণের। সর্বশেষ খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আবদুস সামাদ চলতি বছরের ১৯ নভেম্বর এটি উদ্বোধন করেন।

তিনি আরও জানান, জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত কবিতার সঙ্গে মিলিয়ে এই স্পটের নাম দেওয়া হয়েছে আকাশলীনা। আরও উন্নয়নের লক্ষ্যে, কটেজ, ফিশ মিউজিয়াম, বোট সার্ভিসসহ নানাবিধ কার্যক্রম বাস্তবায়নে কাজ চলছে। সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ইকোট্যুরিজম স্পটসাইফুল ইসলাম ঘুরে ঘুরে দেখালেন বিশাল এ প্রকল্পটির নির্মাণধিীন কাজগুলো। স্পট থেকে বেরিয়ে আসতেই মূল গেটের বামপাশে চোখে পড়লো বেতের তৈরি ছোট একটি রেস্টুরেন্ট। নাম বাঁদা বনের হেসেল। সেটিও নির্মাণাধীন।

সেখানে চা খাচ্ছিলেন জোয়ার নামে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুর রহমান আকাশ। আকাশলীনা সম্পর্কে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রকল্পটি যৌথভাবে জোয়ার, উপজেলা প্রশাসন, সিএনআরএস ক্রেল প্রজেক্ট,  জেলা পরিষদ মিলে বাস্তবায়ন করছে।

তিনি আরও জানান, এই প্রজেক্টে ইকোট্যুরিজমকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এর ফলে এলাকার স্থানীয় জনগণের কর্মস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সুন্দরবনকে বাঁচানোর জন্য ইকোট্যুরিজম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আকাশলীনা নিয়ে আমরা আশাবাদী।

** আমি টোকাই না!

সহযোগিতায় বাংলাদেশ সময়: ১১২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৬
জেডএফ/এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ