ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

কাঁকড়া যাদের জীবন-জীবিকা

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৬
কাঁকড়া যাদের জীবন-জীবিকা ছবি- কাঁকড়া-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পানির ওপর জীবন সংগ্রামে ঠিক কখন জড়িয়েছিলেন, তা মনে নেই আব্দুল্লাহ আল হারুন রনি ও শামীম শেখের। দুজনেই তাদের বাবার হাত ধরে এসেছিলেন কাঁকড়া ধরার পেশায়। শৈশব-কৈশর পেরিয়ে তারা এখন সংসারী। আজো এই পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন তারা।

সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার নদীগুলোতে কাঁকড়া ধরে বিক্রি করেই চলে তাদের জীবন জীবিকা। তাদের ন্যায় চলে শত শত জেলেদের জীবন সংসার।

এখানে আসা পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে তাদের কাঁকড়া শিকার।

ছবি- কাঁকড়া-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
এক ধরনের লম্বা রশির মাথায় ইট ও বড়শি বেঁধে নদীতে ফেলে ধরা হয় কাঁকড়া। এছাড়াও এক প্রকার বিশেষ জালও ব্যবহার করা হয়। উপরে তোলার পর কাঁকড়াগুলোর হিংস্র চিমটি দু’খানি বে‍ঁধে রাখা হয়।

তবে জীবিকার তাগিদে কয়েকবার বিপদের সম্মুখীনও হন জেলেরা। ডাকাতরা ধরে নেয়। সপ্তাহ দিন রাখার পর মুক্তিপণ দিয়ে ছুটে আসেন। আবারও নিয়মিত হন পেশায়।

আব্দুল্লাহ আল হারুন রনি বাংলানিউজকে বলেন, তাদের গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়ি গোয়ালিনী গ্রামে। কাঁকড়া ধরে বিক্রি করে চলে সংসার। এখনও তার সঙ্গে তার বাবা এই পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন।

আব্দুল্লাহ আল হারুন রণি
তিনি বলেন, নৌকার ওপর খেয়ে দেয়ে মাসে ২০/২৫ হাজার টাকা আয় করতে পারি। তবে জলদস্যুর ভয়ে তটস্থ থাকতে হয়। সুন্দরবন কেন্দ্রীয় জলদস্যুরা ২০১৫ সালে তাকে ধরে নেয়। ছাড়ে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে।

একই অবস্থা হয়েছিল ওই উপজেলার নীলডুমুর ইউনিয়নের দাতিনা খালির হান্নান শেখের ছেলে শামীম শেখ এর বেলায়। ডাকাতরা ৬ নৌকায় ১২ জনকে ধরে নিয়েছিল বলেন শামীম শেখ।

ছয়দিন পর এক লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে ডাকাতদের হাত থেকে ছাড়া পেয়েছিলাম, বলেন শামীম। তিনি বলেন, কুঁচিয়া দিয়ে বড়শি পেতে কাঁকড়া মারেন। তবে কাঁকড়ার দাম নির্ধারণ হয় আকার-আকৃতি ভেদে।

জেলেরা জানান, দুই শ’ থেকে ৫শ’ হাজার টাকা বিকোয় কাঁকড়ার কেজি। পুরুষ-নারীসহ কাঁকড়ারও রয়েছে তিনটি ধরন। এই তিন ধরনের কাঁকড়ার বিক্রির ক্ষেত্রেও দাম আলাদা নির্ধারণ করা হয়।

ছবি- কাঁকড়া-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
এরমধ্যে একশ’ গ্রাম পুরুষ কাঁকড়ার কেজি ৪শ’ টাকা, ২শ’গ্রামের (এল সাইজ) কাঁকড়া কেজি ৩ থেকে ৫শ’ টাকা, ৫শ’ গ্রাম পুরুষ কাঁকড়া ৬ থেকে ৭শ’ টাকা। এছাড়া ছোট সাইজের এক কেজি পুরুষ কাঁকড়া ১ হাজার টাকা বিক্রি হয়, জানিয়েছেন জেলেরা।

এক্ষেত্রে মহিলা কাঁকড়ার দাম একটু চড়া। ডিম ওয়ালা মহিলা কাঁকড়া ৫শ’, ডিমছাড়া সাড়ে ৩শ’, ২শ’ গ্রাম ওজনের নারী কাকড়া ৮-১৫শ’ টাকা এবং হিজড়া কাকড়া ২১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়।

সরেজমিন দেখা গেছে, দৌবেকি এলাকায় চুনা নদীতে মালঞ্চ নদীতে ট্রলার ও ছোট নৌকা দিয়ে কাঁকড়া ধরা চলছে। জেলেরা কুচিয়া কেটে বড়শিতে লাগানোর প্রক্রিয়া করছিলেন।

আকরাম আলীনোয়াপাট গ্রামের জেলে আকরাম আলী বাংলানিউজকে বলেন, কাঁকড়া ধরার জন্য কুঁচিয়া মাছ কেটে টুকরো করে আহার হিসেবে বড়শিতে লাগানো হয়।

তিনি বলেন, বড়শিতে মাছ ধরতে গেলেও বিপ্তত্তিতে পড়তে হয়। কিন্তু ডাকাতরা তাদের ধরে নিয়ে মুক্তিপণ আদায় করে নেয়। সাতক্ষীরা পাশ্ববর্তী সুন্দরবন এলাকায় এখনও ৫টি ডাকাত গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করে। তারা হলো- জনাবপার্টি, মিন্টু, জাহাঙ্গীর, সামসুর রহমান।

logoবাংলাদেশ সময়: ০৮২৬ ঘন্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৬
এনইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ