ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

ষাট গম্বুজের চৌকোণে এক গম্বুজের চার মসজিদ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৬
ষাট গম্বুজের চৌকোণে এক গম্বুজের চার মসজিদ সিঙ্গাইর মসজিদ/ছবি: আসিফ আজিজ

বাগেরহাট ঘুরে: ইতিহাস ঐতিহ্যের জেলা বাগেরহাট। প্রাচীনতম এই শহরটিতে রয়েছে ঐতিহাসিক সব মসজিদ, মঠ-মন্দির, জমিদার বাড়িসহ নানা স্থাপনা। এসব স্থাপনাকেই বিবেচনা করে ইউনেস্কো ১৯৮৫ সালে মসজিদের শহর বাগেরহাটকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করে।

জনশ্রুতি আছে, সুফিসাধক হজরত খান জাহান (র.) ও তার অনুসারী-ভক্তরা পঞ্চদশ শতকে অর্থাৎ ছয়শ’ বছর আগে খলিফাতাবাদ নগরীতে ষাট গম্বুজ, সিঙ্গাইর, চুনখোলা, দরিয়া খাঁ বা রণবিজয়পুর, নয় গম্বুজ, জিন্দাপীর মসজিদ, মাজার মসজিদসহ ৩৬০টি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন।

গৌড়ের সুলতান নাসিরুদ্দীন মাহমুদ শাহের আমলে ইসলাম প্রচারের জন্য বাগেরহাট অঞ্চলে আসেন হযরত খান জাহান।

এরপর এই অঞ্চলকে খলিফাতাবাদ নামে গড়ে তোলেন তিনি। খলিফাতাবাদ পরিচালনা করতেন ষাট গম্বুজ বসে। তাই ষাট গম্বুজ মসজিদের নিরাপত্তার স্বার্থে আশপাশে গড়ে তুলেন অসংখ্য মসজিদ। চুনখোলা মসজিদএরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-ষাটগম্বুজের অনেকটা চার কোণ বরাবর চারটি মসজিদ। এ চারটি মসজিদের অবস্থান যেন ষাটগম্বুজের ঔজ্জ্বল্য বাড়ানোর স্থাপনা হিসেবে। মসজিদ চারটি হলো- সিঙ্গাইর, বিবি বেগনী, চুনখোলা ও দরিয়া খাঁ বা রণবিজয়পুর মসজিদ।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের অধীন বাগেরহাট যাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মো. গেলাম ফেরদৌস বাংলানিউজকে বলেন, বাগেরহাট হলো মসজিদের শহর। ৬শ বছর আগে এই শহরটি  গড়ে তোলেন খান জাহান। স্থানীয় ও মুঘলীয় স্থাপত্যশৈলীর ওপর  ষাট গম্বুজ নির্মাণ করেন তিনি। এর অভ্যন্তরণীন নকশায় পবিত্র মদীনা শরিফের মসজিদে নববীর ছাপও চোখে পড়ে।

গোলাম ফেরদৌস বলেন, খান জাহান ষাট গম্বুজের নিরাপত্তার জন্য চার পাশে মসজিদ গতে তোলেন। কারণ তিনি খলিফাতাবাদ পরিচালনা করতে ষাট গম্বুজ মসজিদে বসে। তাই শহরটির আশপাশে অনেকটা পাহারাদার হিসেবে বেশ কিছু মসজিদ গড়ে তোলেন তিনি। চুনখোলা মসজিদষাট গম্বুজ মসজিদ দেখার উদ্দেশ্যে বাগেরহাট থেকে ইজিবাইকে যাত্রা। বাগেরহাট থেকে খুলনা সড়কে ৭ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করার পর ষাট গম্বুজ মসজিদ পৌঁছায়। প্রায় দুই ঘণ্টা ষাট গম্বুজ মসজিদ ও ঘোড়াদীঘিতে অবস্থান করি। এখানে আসা মানুষের সঙ্গে কথা বলার পর জানা গেল, ষাট গম্বুজের চার পাশে আকর্ষণীয়ভাবে এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ করা হয়েছে। যা অনেক সুন্দুর।

দেখার জন্য মনস্থির করে ষাট গম্বুজ মসজিদের গেইটির সামনে পৌঁছাতেই চোখে পড়ে ছোট আর একটি মসজিদ। নামফলক দেখে জানা গেলো মসজিদের নাম সিঙ্গাইর মসজিদ। এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটিও নির্মাণ করেছেন তিনি।

বর্গাকার এই মসজিদটি ১২.০৪ বর্গ মিটার এবং দেয়ালগুলোর পুরুত্ব গড়ে ২.১০মিটার। মসজিদের চার দিকে চারটি অলংকৃত বুরুজ রয়েছে। মসজিদের চারদিকের কার্ণিশ গুলো বক্রাকার। দরিয়া খাঁ মসজিদ
মসজিদটির পূর্ব দেয়ালে ৩টি এবং উত্তর ও দক্ষিণের দেয়ালে একটি করে মোট ৫টি খিলান দরজা রয়েছে। পূর্ব দিকের মাঝের দরজাটির আকার সবচেয়ে বড়। মসজিদের ভেতরে পশ্চিম দেওয়ালের মাঝামাঝি অংশে একটি অলংকৃত মেহরাব।

এরপর যাত্রা করলাম বিবি বেগনী মসজিদের পথে। ষাটগম্বুজ মসজিদ সড়ক ধরে পশ্চিম দিকে আরও কিছু দূর যেতে বারাকপুরের কাছে মগড়া গ্রামে অবস্থিত এই মসজিদ। খান জাহান তার স্ত্রীর নামে মসজিদটি গড়ে তোলেন।

সিঙ্গাইর মসজিদের অনুরূপ হলেও এর পশ্চিম দেওয়ালে তিনটি মিহরাব। খান জাহানের নিজস্ব শৈলীতে নির্মিত মসজিদের বাইরের প্রতিদিকের মাপ ৪৮’-৬’ এবং ভেতরে ৩৩’-০”। দেওয়ালের পুরুত্ব ৯’-৯’। পোড়া মাটির কারুকাজে সু-সজ্জিত।

তবে তার আগে সন্ধ্যায় বিবি বেগনী মসজিদের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত চুনাখোলা মসজিদে পৌঁছাই। ষাট গম্বুজ মসজিদ থেকে যার দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। মসজিদের যাতায়াতের জন্য একটি নতুন রাস্তা করে দিচ্ছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর। বিবি বেগনী মসজিদ
চুনাখোলা এলাকার বাসিন্দা সেলিম শেখ জানান, বৃষ্টি হলেই মসজিদটিতে হাঁটু সমান পানি জমে। তাই নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামাজ হয় না। সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে মসজিদ সংস্কার করা হচ্ছে।

বর্গাকৃতির এ মসজিদের বাইরের দিকে লম্বায় প্রায় ৪০ ফুট এবং ভেতরের দিকে ২৫ ফুট। মসজিদের পূর্ব দেয়ালে আছে তিনটি প্রবেশপথ। আর পশ্চিম দেয়ালে প্রবেশপথগুলো বরাবর রয়েছে তিনটি মিহরাব। মাঝের মিহরাবটি অপেক্ষাকৃত বড়। প্রতিটি মিহরাবের গায়ে রয়েছে নানারকম ফুল ও লতাপাতার কারুকাজ। মিহরাবগুলোর নিচের অংশ মাটির ভেতরে কিছুটা দেবে গেছে। উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে আছে একটি করে প্রবেশ পথ। সিঙ্গাইর মসজিদ
ষাট গম্বুজের তিন কোণের এলাকায় অবস্থিত অপর তিনটি মসজিদের চেয়ে আকর্ষণীয় মসজিদ হলো পূর্বে অবস্থিত রণবিজয়পুর গ্রামের এক গম্বুজ মসজিদ। চারপাশে বিভিন্ন ধরনের গাছধারা বেষ্টিত এই মসজিদটি হলো দেশের সবচেয়ে বড় এক গম্বুজ মসজিদও।

মসজিদের ইমাম হাফেজ মো. হাবিবুর রহমান বলেন, পাকিস্তান আমলে এই মসজিদটিতে কেউ আসতো না। শিয়াল-কুকুরের বাসস্থান ছিলো বিখ্যাত এই মসজিদটি। এরপর তিন দফা সংস্কার করে নামাজের উপযোগী করা হয়েছে। মসজিদে ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৬
এমএফআই/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ