সাতক্ষীরা থেকে ফিরে: বড়শি বা জাল দিয়ে মাছ শিকার করে রান্না করার মজা সত্যিই অনন্য। আর সঙ্গে যদি থাকে বাগানের টাটকা সবজি, তাহলে তো পোয়াবারো।
বিষয়গুলো স্বপ্নের মতো হলেও বাস্তবে রূপ দিয়েছে সাতক্ষীরা জেলার মুন্সিগঞ্জের বরসা রিসোর্ট। চারদিকে নারিকেল, গেওয়া, সুন্দরী, পাইন, কেওড়াসহ বিভিন্ন গাছ লাগিয়ে সুন্দরবনের আবহ সৃষ্টির চেষ্টা করেছে কর্তৃপক্ষ।
বরসার রিসোর্টের খাবারের মেনুতেও রয়েছে ভিন্নতা। প্রায় ৫০ বিঘা জমির উপর ২০০৯ সালে এটি গড়েছেন পর্যটনবান্ধব ব্যক্তিত্ব এ কে এম আনিছুর রহমান।
নিয়মিত মেনুর পাশাপাশি কেউ যদি বরসার পুকুরের মাছ খেতে পছন্দ করেন, সেই ব্যবস্থাও রয়েছে। এমনকি বরসার ভেতরেই সবজি বাগান; সেখানে লালশাক, পালংশাকসহ বিভিন্ন শাকসবজি লাগিয়েছেন তারা।
রিসোর্টের ম্যনেজার তাসকিন আব্দুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের নিয়মিত মেনুর পাশাপাশি কেউ চাইলে পুকুরের তেলাপিয়া, রুই, কাতলা বা অন্য যে মাছ রয়েছে সেগুলো খেতে পারবেন। এছাড়া আমাদের এখানে সিজনাল কিছু সবজি করা হয়, অর্ডার দিলে টাটকা সবজির ব্যবস্থা করে দিতে পারবো।
কাস্টমারের রুচি ও চাহিদা অনুযায়ী বরসা বিভিন্ন আইটের খাবার সরবরাহ করে থাকে, দামও ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই। বরসা রিসোর্টের খাবারের মেনুতে রয়েছে- সকালের নাস্তায় সবজি খিচুড়ি, লটপটি ও চা। এর প্যাকেজ মূল্য মাত্র ১২০ টাকা। একই ভাবে সবজি খিচুড়ি, ডিম ও চায়ের প্যাকেজ ৬০ টাকা এবং রুটি, ডাল লটপটি ও চা ১২০ টাকা।
বরসায় সাদা ভাত ৩০ টাকা, পোলাও ৬০ টাকা, আলু, বেগুন, করলা, বরবটি ও ডাল ভর্তা প্রতি আইটেম ১৫ টাকা। এছাড়া চিংড়ি মাছ ভর্তা ৩৫ টাকা, সবজি ২০ টাকা ও ঘন ডাল ২০ টাকায় মিলবে।
মাছের আইটেমে রয়েছে- ছোট মাছ (আমদানি করা) প্রতি প্লেট ৪৫-৫০ টাকা, প্রতি প্লেট মাছ (আমদানি) ফ্রাই ৪০ টাকা, পারসে মাছ প্রতি পিস ১২০-১৪০ টাকা, টেংরা মাছ ১২০-১৪০ টাকা, দাতিনা মাছ, পায়রা মাছ প্রতি পিস ১০০-১২০ টাকা, কাইন মাছ প্রতি পিস ১২০ টাকা, ভেটকি মাছ প্রতি পিস ১২০-১৪০ টাকা, ভাঙ্গান মাছ প্রতি পিস ১২০-১৪০ টাকা, জরিনা চিংড়ি প্রতি প্লেট ৭০ টাকা, চাকা চিংড়ি প্রতি প্লেট ৭০ টাকা, কাঁকড়া প্রতি প্লেট ১২০ টাকা।
মাংসের তালিকায় রয়েছে- দেশি মুরগির মাংস প্রতি প্লেট ১৪০ টাকা, হাঁসের মাংস প্রতি প্লেট ১৫০ টাকা, খাসির মাংস ১০০ টাকা, গরুর মাংস ৮০ টাকা ও পোল্ট্রি মুরগির মাংস প্রতি প্লেট ৮০ টাকা। এছাড়া বিকেলে নাস্তায় চিকেন স্যুপ ১৫০ টাকা, থাই চিকেন স্যুপ ১৫০ টাকা ও হট অ্যান্ড সাওয়ার স্যুপ ১৫০ টাকা। চিকেন ফ্রাই পাঁচ পিস ১৭৫ টাকা, ১০ পিস ৩৫০ টাকা, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই প্রতি প্লেট ১২০ টাকা, চিকেন স্টিক চার পিস ১৪০ টাকা, চিকেন বারবিকিউ প্রতি পিস ১০০ টাকা, সল্ট কাঁকড়া ফ্রাই প্রতি পিস ১০০ টাকা এবং ফিস বারবিকিউ ফ্রাই (এক কেজি ভেটকি) এক হাজার টাকা। মিলবে ভেজিটেবল চাউমিন, এগ চাউমিন ও চিকেন চাউমিন। এর বাইরেও কেউ অর্ডার করলে সেই অনুযায়ী সরবরাহ করা হয়।
কীভাবে যাবেন বরসা রিসোর্টে
সড়কপথে ঢাকা থেকে রিসোর্টের দূরত্ব প্রায় ৪২৫ কিমি। ঢাকা থেকে মুন্সীগঞ্জ আসার পর সরাসরি মোটরসাইকেল, ইঞ্জিনভ্যানে বা ইজিবাইকে কলবাড়ি বাজার থেকে একটু গেলেই বরসা রিসোর্ট। একইভাবে দেশের যেকোনো জেলা থেকে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের মুন্সীগঞ্জ এসে বরসা রিসোর্টে যাওয়া যায়।
এখানে রুম রয়েছে ২০টি ও বেড ৩০টি। রিসোর্টের মধ্যে আরও একটি তিন তলা ভবনের কাজ প্রায় শেষ। এটি চালু হলে দ্বিগুণ পর্যটক একসঙ্গে রিসোর্টে থাকতে পারবেন। বরসায় ডিলাক্স এসি রুমের ভাড়া প্রতি রাতের জন্য ১৭২৫ টাকা ও ডিলাক্স নন এসি রুমের ভাড়া ১১৫০ টাকা।
বরসার প্যাকেজ অফার
রিসোর্টের হিসাবরক্ষক আশিকুজ্জামান পলাশ বাংলানিউজকে জানান, তিন ধরনের প্যাকেজ রয়েছে এখানে। ১নং প্যাকেজ- সাতক্ষীরার মুন্সীগঞ্জ থেকে কলাগাছিয়া, কটকা, দুবলার চর, হিরণ পয়েন্ট হয়ে মুন্সীগঞ্জ। তিন দিন চার রাত জনপ্রতি সাড়ে সাত হাজার টাকা।
২নং প্যাকেজ- ঢাকা থেকে সাতক্ষীরার মুন্সীগঞ্জ, কলাগাছিয়া, দোবেকি, হিরণ পয়েন্ট, পুতনী, মান্দারবাড়িয়া, পুষ্পকাটি, নটাবেকি, মুন্সীগঞ্জ হয়ে ঢাকা তিন দিন চার রাত জনপ্রতি সাড়ে নয় হাজার টাকা।
আর ৩নং প্যাকেজ- ঢাকা থেকে সাতক্ষীরার মুন্সীগঞ্জ, কলাগাছিয়া, দোবেকি, কদমতলা, মুন্সীগঞ্জ হয়ে ঢাকা। এক দিন দুই রাত জনপ্রতি সাড়ে চার হাজার টাকা।
এজন্য যোগাযোগ করা যাবে ০১৭৬৫ ০১২৪৩৮ ও ০১৭১৭ ৪৫৪৫৯৬ নম্বরে। ইমেইল করতে পারেন [email protected] ঠিকানায়। এছাড়া ঢুঁ মারতে পারেন www. Barsaresortandtourism.com ওয়েবসাইটেও।
** দেড়শো বছরের পুরনো তেঁতুলিয়া শাহী মসজিদ
** বিলীনের পথে জমিদার বাড়ি
** দুবলার চরের ‘ওসি’
** কটকার সুখ-দুঃখ
**‘মংলায় ভালো হোটেল দরকার’
** রাতের দুবলার চর
** সরু হয়ে যাচ্ছে বুড়িগঙ্গা
** হাড়বাড়িয়ায় লাল শাপলার মিষ্টি পুকুর
** মধুমতিতে আয়েশি ভ্রমণ
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৬
এসএম/এসএনএস