মুন্সিগঞ্জ, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা ঘুরে: শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জ বাজারে এক চক্কর দিচ্ছিছিলাম। শীতের বেলা, তাই সন্ধ্যা নামতে দেরি নেই। সন্ধ্যার ঠিক আগে আগেই বাজারের মূল রাস্তা ধরে হাঁটছিলাম। দু’পাশে সারিসারি দোকান। দোকানের সামনে আবার অস্থায়ী ও ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা পশরা সাজিয়ে বসে আছে। কেউবা লাউ-কলা-সবজি, কেউবা গুড়-মুড়ি-বাতাসা বিক্রি করতে বসে পড়েছে। কেজি দরে কলা অথবা শীতের পোশাক বিক্রেতাও কম না।
একটু সামনে এগুতোই দেখি লাল গেঞ্জি পরে একজন দোকানি বসে আছে। তার চার পাশে ঘিরে রয়েছে কয়েকটি শিশু, আরো দু’তিনজন ক্রেতা।
সোনালি রঙের একটি বাটিতে ছোট একটি আংটি রেখে বাটির চার পাশে একটি লৌহদণ্ড বারবার ঘোরাচ্ছে আর তাতেই বাটির ভেতরে থাকা আংটিটি নাচানাচি করছে। কৌতুহলি শিশুরা আংটির নাচন দেখতেই ভিড় করছে দোকানের সামনে। আর দু’একজন আগ্রহী ক্রেতাও ওই আংটির মাহাত্ম দর্শনে মত্ত। কেউ কেউ দাম-দরও করছে। ‘অষ্টধাতুর আংটি’, ‘অষ্টধাতুর আংটি’ -কিছুক্ষণ পরপর হাঁকছেন ওই আংটি বিক্রেতা। আরেকটু এগুতেই বললেন, ‘অষ্টধাতুর আংটি নেন, অষ্টধাতুর আংটি’। আংটি ভাগ্য বদল করবে কীভাবে জিজ্ঞেস করলে বললেন, ১০-১৫ দিন ব্যবহার করেই দেখেন, ভাগ্য বদল হয় কি-না। তার আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরাতে চাইনি, তাই আলোচনা আর সামনের দিকে এগিয়ে নিলাম না। বরং জিজ্ঞেস করলাম, কি কি ধাতু আছে এই আংটিতে? সোনা, রুপা, পিতল, লোহা, সিসা, তামা- আর কি যেনো বলেছিলো। এতো ধাতু পেলেন কোথায়? বললেন জোগাড় করছি আরকি। আর মিশিয়েছেন কিভাবে, জিজ্ঞেস করলে বললেন, ‘একবার গলাই তারপর মিশাই। ঘইসা মাইজা, গুঁড়া-গুঁড়া কইরা মিশাই। ঝামেলা আছে ভাইজান’।
আরো নানা কথা বলছি। কিন্তু মনের মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে, আংটি কেমনে ভাগ্য বদল করতে পারে সেই কথা। আসলে তা সম্ভবও না। মানুষের ভাগ্য কোনো ধাতুর ওপর নির্ভর করতে পারে না। যদিও মানুষের শরীরের মধ্যেই আছে অনেক ধাতু। তারপর খাবারের সাথে প্রতিদিন কত ধাতুই না শরীরে প্রবেশ করে- তার হিসাব নাই। কিন্তু তাই বলে ভাগ্য পরিবর্তনের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। নাম তার আবুল হোসেন। বাজারের দিন এখানে বসেন। বাড়ি শ্যামনগরেই। বললেন, ‘এই আংটিতে খালি ভাগ্যই বদলায় না, রোগ-বালাইও সারায়। ডায়রিয়া, কালাজ্বর, আমাশা, খিঁচুনি, বদ-নজর’। আরো নানা রোগের কথা বলে চললেন। একেকটি আংটির দাম ৩০, ৫০, ৮০ টাকা। আবার এর চেয়ে বেশি দামেরও আছে, যেমন-১০০, ১২০, ১৫০ টাকা। ‘মাল বুইঝা দাম। ধাতু বুইঝা কাম’- বললেন আবুল হোসেন। দিনে ১০ থেকে ২০টা পর্যন্ত আংটি বিক্রি করতে পারেন। ভাগ্য ভালো হলে বেশিও হতে পারে।
আংটিতে ভাগ্য বদল হয় কি-না, অথবা রোগ-বালাই সারে কি-না সে প্রশ্ন ভিন্ন। এ নিয়ে বিজ্ঞান ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের যুক্তি-তর্ক চলতে পারে। কিন্তু দেশজুড়ে এ রকম হাজারো আংটি-মাদুলি বিক্রেতারা নিজেদের ভাগ্য বদলের জন্য যে অবিরাম জীবন সংগ্রামেরত তা কি চলতেই থাকবে? আংটির বৃত্তেই কি বন্দি থেকে যাবে ওদের ভাগ্যচক্র?
বাংলাদেশ সময়: ০১৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০১৭ এটি
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।