রাতে জুড়ীতে নেমে রিকশায় চেপেই শোনা গেলো তার প্রশংসা। চালক রমজানের কাছে এলাকার উন্নয়নের সুর তুলতেই তিনি বলা শুরু করলেন শাহাব উদ্দিনের কথা।
জুড়ী উপজেলা হয়েছে ২০০৪ সালে। এরপর থেকে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন করেছেন প্রয়াত ইউপি চেয়ারম্যান আসুক মিয়া। তবে শাহাব উদ্দিন রাস্তাঘাট ও কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করেছেন বলে জানান এলাকাবাসী।
মাঠে ঘাটে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর বিলবোর্ড চোখে পড়লেও জুড়ীতে শাহাব উদ্দিনের কোনো পোস্টার, বিলবোর্ড দেখা যায়নি। সিএনজি অটোরিকশা চালক জনি আহমেদ বলেন, ওনার প্রচার লাগে না। শাহাব উদ্দিনের জনপ্রিয়তা আছে এলাকায়। সবচেয়ে বড় কথা, উনি এলাকায় আসেন।
বড়লেখা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি সিরাজ উদ্দিন বলেন, এখানে সে অর্থে শাহাব উদ্দিনের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। ওনার ব্যক্তি ইমেজেই অনেক এগিয়ে। কারও কাছে তার নামে খারাপ কিছু পাবেন না। আটাব সভাপতি মোহাইমিন সালেহ চেষ্টা চালালেও তার কাছে টিকবে না।
বড়লেখা উপজেলা ছাত্রলীগের অর্থ সম্পাদক ফয়সল আহমেদ বলেন, শাহাব উদ্দিন নিয়মিত এলাকায় আসেন, থাকেন। যে কোনো অনুষ্ঠানে ডাকলে ওনাকে পাওয়া যায়। বিপদে আপদে আমরা সবসময় তাকে পাশে পাই। অনেক জুনিয়র হলেও ছাত্রলীগ, যুবলীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের উনি খুব মূল্যায়ন করেন। আমি মনে করি, প্রার্থী হিসেবে তার কোনো বিকল্প নেই। আমরা তাকেই চাই।
বিরোধী দল হওয়া সত্ত্বেও কাঁঠালতলীর যুবদল নেতা মুজিবুল হক খোকন, বড়লেখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাক আজিজ মান্নাও শাহাব উদ্দিনকে ভালো মানুষ অভিধা দেন। তবে তারা কিছু অভিযোগ তোলেন তার বিরুদ্ধে। তাদের মন্তব্য, উনি কাজও করেছেন এলাকায়, তবে দলীয়করণ একেবারে তৃণমূলের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পৌঁছে গেছে। এটা আমাদের জন্য মঙ্গলজনক নয়।
সম্প্রতি হাকালুকি হাওরে মাছ ও হাঁস মরে যে ক্ষতি হয়, সেই ক্ষতিগ্রস্ত হাওরের হাল্লা অংশের চাষি ইসহাক বাংলানিউজকে বলেন, এতো ক্ষতির পরও আমরা এমপির দেখা পেলাম না। সরকার থেকেও সাহায্য পাইনি।
এছাড়া এমপির বাড়ির সামনের প্রাচীর ঘেঁষে যাওয়া পাখিয়ালী-ডিমাই ও পাশের পাখিয়ালী-কানোনগো পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশায় তার উপর নাখোশ এলাকার লোকজন। যদিও সেখানেও সবাই ব্যক্তি হিসেবে এমপিকে ভালো মানুষ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
১৯৯৬ সালের আগে পরপর দুবার জাতীয় পার্টি থেকে এ আসনে এমপি ছিলেন অ্যাডভোকেট এবাদুর রহমান। পরে বিএনপিতে যোগ দিয়ে জিতে প্রতিমন্ত্রী হন তিনি। তাকেও মানুষ ভালো বললেও এলাকার সঙ্গে সম্পৃক্ততা কম বলে জানান সবাই।
বড়লেখা পৌর বিএনপির সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, শাহাব উদ্দিন ভালো মানুষ। কিন্তু এলাকার উন্নয়ন বেশি করেননি। বিএনপি থেকে তরুণ নেতৃত্ব এলেই ভালো হবে।
শাহাব উদ্দিন তার ইউপি চেয়ারম্যান ভাগনেকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ‘ভালো মানুষ’ ইমেজ ধরে রেখেছেন বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি।
বিএনপি থেকে এবার মনোনয়ন প্রত্যাশী জুড়ী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন মিঠু বাংলানিউজকে বলেন, শাহাব উদ্দিনের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কও আমার ভালো। উনি ভালো মানুষ। আমাদের খোঁজখবর নেন। আমাদের মধ্যে দলীয় কোনো কোন্দল নেই। তবে উনি অনেক উন্নয়ন করেছে এটা তৃণমূলের সাধারণ মানুষ বলছে। কিন্তু আমি বলবো উনি যে কাজগুলো করেছেন সেটা সরকারের রুটিন ওয়ার্ক ছাড়া কিছুই নয়।
শাহবাজপুর ইউপির আওয়ামী লীগ সমর্থিত ইউপি চেয়ারম্যান আহমেদ জুবায়ের লিটন বলেন, গোটা মৌলভীবাজারেই মানুষ হিসেবে হুইপ শাহাব উদ্দিনের জনপ্রিয়তা আপনি নিজে ঘুরলেই বুঝবেন। আমার এলাকায় উনি কয়েক কোটি টাকার কাজ করেছেন। চা শ্রমিকরাও অনেক খুশি তার কাজে। তাদের ভোট ৯৫ শতাংশ তিনিই পাবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩২ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৭
এএ/জেডএম