চেরাগপুরের মেম্বার হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন একবার। এরপর পরপর তিনবার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচনে জয় পান সলিম।
২০১৩ সালে আব্দুল জলিলের মৃত্যুর পরও তার ছায়া নিয়ে রাজনীতিতে বিচরণ করতে থাকেন সলিম। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার টিকিট চান। কিন্তু আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ড. আকরাম হোসেনকেই মনোনয়ন দেয়। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আবির্ভূত হন সেলিমউদ্দিন তরফদার ছলিম। তৎকালীন প্রধান বিরোধীদল বিএনপি ভোটে না এলেও, কলস মার্কা নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন ছলিম। দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন তিনি।
নওগাঁর একমাত্র আসন বদলগাছি ও মহাদেবপুরে মানুষ যান ভোট দিতে। একদিকে আব্দুল জলিলের আস্থাভাজন এক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, অন্যদিকে হেভিওয়েট প্রার্থী ড. আকরাম হোসেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী হারুণ বলেন, আকরামের বিপক্ষে একটা জনমত গড়ে উঠেছিল। বিশেষ করে তার নাম ভাঙ্গিয়ে স্ত্রী মায়া চৌধুরীর ঘুষ এবং নিয়োগ বাণিজ্য এবং প্রভাব মানুষের চক্ষুশূল হয়ে ওঠে। তিনি বিন্দু মাসী হিসেবে এলাকায় পরিচিত হয়ে ওঠেন। তিনি সাধারণ মানুষের মতামত ছাড়াই এলাকা চালিয়েছেন। ধীরে ধীরে নেতানেত্রী শূন্য হয়ে পড়েন আকরাম।
আকরামের এই স্বৈরাচারী আচরণের বিরুদ্ধেই ভোট দেন মানুষ। নৌকার বিরুদ্ধে ব্যালটের সুযোগ পেয়ে ধানের শীষের লোকেরাও গিয়ে সীল মেরে আসেন কলস মার্কায়। এক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে প্রায় ৬৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজয় ঘটে আকরাম হোসেনের।
বদলগাছি বাজারের ব্যবসায়ী আরিফ বলেন, আকরাম ভোটে হেরে যাওয়ার পর নিজ নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলা করান। বাড়ি ঘর পুড়ে দেন। সলিমের কাছে তিনি হার মেনে নিতে পারছিলেন না।
এখন সলিম সংসদ সদস্য হিসেবে কতটুকু সফল? সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বদলগাছি বাজারের মানুষের সঙ্গে কথা বললে ইতিবাচক ফলাফলই মেলে। এলাকায় সড়কের সংস্কারে যেমন সুনাম রয়েছে, তেমনি স্কুল কলেজের নিয়োগেও দুর্নীতির খোঁজ পাওয়া যায়নি। অবশ্য স্থানীয় দোকানদার জুয়েল বলেন, হয়তো এখন কোনো দোষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। ক্ষমতা ছাড়লে সব বেরিয়ে আসবে!
এরইমধ্যে আওয়ামী লীগেও নিজের অবস্থান অটুট করেছেন তিনি। ২০১৪ সালের নভেম্বরে দল থেকে বহিষ্কারাদেশ তুলে দেয়া হলেও এলাকার নেতৃবৃন্দ অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। তবে ধীরে ধীরে নিজের মুন্সিয়ানা দিয়ে সকলকে নিজের দলে ভেড়াচ্ছেন তিনি। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিবও এ কথা স্বীকার করেছেন।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমরা এখন একসঙ্গে পথ চলতে চাচ্ছি। যেহেতু সলিম এমপি নির্বাচিত হয়েছেন এবং তার যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন, আমরা তার সঙ্গে আছি।
তবে কি আগামী নির্বাচনে ১৪ দলের প্রধান আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচনে যাওয়া নিশ্চিত সলিমের? উত্তরটা কিন্তু সহজ নয়। কারণ একসময় এখানে জাতীয় পার্টির মাহবুব জামানের বেশ প্রভাব ছিল। সেদিকে থেকে জাতীয় পার্টির সমর্থকও রয়েছে অনেক। আর তাই জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন ২০১৯ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বদলগাছি উপজেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ওয়াজেদ আলীও জাসদের পক্ষ থেকে চাইছেন ১৪ দলের মনোনয়ন।
সলিম বর্তমানে ঢাকায় রয়েছেন বাজেট অধিবেশন সামনে রেখে। তিনি ফোনে বাংলানিউজকে বলেন, আমি চেষ্টা করেছি মানুষের সঙ্গে থাকার। মানুষ গতবার ব্যক্তি হিসেবে আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। আগামীতে প্রতীক, দল এবং ব্যক্তি হিসেবেই পাশে থাকবেন বলে আশা করি।
বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৭
এমএন/জেডএম