জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শিখর নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করে মাঠে ব্যাপক নির্বাচনী তৎপরতা চালালেও খালেদার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সিঁথি রয়েছেন অন্তরালে। তবে তাদেরকে ঘিরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা বেশ উজ্জীবিত।
এ দুই হেভিওয়েটের বাইরেও এ আসনে দু’দলেই রয়েছেন হাফ ডজন করে মনোনয়ন প্রত্যাশী, যাদের অনেকেও হেভিওয়েট নেতা। নেতাকর্মী ও ভোটারদের কাছে টানার চেষ্টা করছেন তারাও। কেন্দ্রে তদবির চালানোর পাশাপাশি নির্বাচনী এলাকায় নানা তৎপরতা চালাচ্ছেন।
সাইফুজ্জামান শিখরের বাবা প্রয়াত আছাদুজ্জামান মাগুরা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন দীর্ঘদিন। অন্যদিকে সিঁথির মামাবাড়ি মাগুরা-১ নির্বাচনী এলাকার লক্ষিকান্দর গ্রামে ও মামা সৈয়দ মোকাদ্দেস আলী জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক। তার জন্ম এবং ছোটবেলায় বেড়ে ওঠাটাও মামার বাড়িতেই।
আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আবদুল ওয়াহহাবও ফের প্রার্থী হতে চান। প্রায় নিয়মিত নির্বাচনী এলাকায় জনসংযোগ করছেন তিনি। মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্য নেতারা হলেন- মাগুরা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক অ্যাডভোকেট সৈয়দ শরিফুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি সাবেক সদর উপজেলা পরিষেদের চেয়ারম্যান আবু নাসির বাবলু এবং শ্রীপুরের শ্রীকোল ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান কুতুব উল্লাহ হোসেন মিয়া কুটি।
অন্যদিকে সিঁথির মামা সৈয়দ মোকাদ্দেস আলী নিজেও বিএনপির মনোনয়ন চেয়ে মাঠে তৎপর রয়েছেন। আরও মনোনয়ন চাইছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জিয়া পরিষদের চেয়ারম্যান কবীর মুরাদ, মাগুরা পৌরসভার সাবেক মেয়র ইকবাল আকতার খান কাফুর, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আহসান হাবিব কিশোর ও সাবেক সহ সভাপতি মনোয়ার হোসেন খান।
মাগুরা-১ আসনে আওয়ামী লীগের অবস্থান বেশ মজবুত। ১৯৯৬ সালের পর থেকে গত চারটি সংসদ নির্বাচনে অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সিরাজুল আকবর এ আসনে নির্বাচিত হয়েছেন। তার মৃত্যুর পর সংসদ সদস্য হয়েছেন মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আবদুল ওয়াহহাব। তবে এক সময় নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপির মেজর জেনারেল (অব.) মজিদ-উল হকও।
আসনটি তাই আওয়ামী লীগের জন্য মর্যাদার আর বিএনপির জন্য পুনরুদ্ধারের।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী অ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর নিয়মিতই মাগুরায় এসে সভা-সমাবেশ করছেন, পাড়া-মহল্লার বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন। জেলার বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডেও রয়েছে তার বিশেষ অবদান।
শিখর বাংলানিউজকে বলেন, ‘মাগুরার মানুষ আমার বাবা আছাদুজ্জামানকে দফায় দফায় এমপি নির্বাচিত করেছিলেন। ফলে তাদের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই মাগুরার উন্নয়নে শামিল হয়েছি। আগামী দিনেও মানুষের কল্যাণ শতভাগ নিশ্চিত করতে নৌকার প্রার্থী হতে চাইছি। দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরাও ব্যাপক সহযোগিতা করছেন’।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তানজেল হোসেন খান ও সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ কুমার কুণ্ডু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তরুণদের নেতৃত্বের পুরোভাগে নিয়ে আসছেন। শিখরও তরুণ। এলাকায় তার জনপ্রিয়তা রয়েছে, সকল স্তরের নেতাকর্মীরাও তার সঙ্গে রয়েছেন। তিনি মনোনয়ন পেলে মাগুরা-১ আসনে সহজেই নির্বাচনী বৈতরণী পেরোবে আওয়ামী লীগ’।
অন্যদিকে সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথিকে ঘিরে উচ্ছ্বসিত স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের দাবি, তিনিই আওয়ামী লীগকে মোকাবেলায় বিএনপির যোগ্য প্রার্থী।
মামা সৈয়দ মোকাদ্দেস আলীও দাবি করেন, সিঁথির প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি দলীয় ও পারিবারিকভাবে অনেক দূর এগিয়েছে। প্রার্থী হলে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্যরা তাকেই সমর্থন দেবেন। ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামবেন। ফলে এ আসনে বিএনপির বিজয় সুনিশ্চিত হবে।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ আলী করীমও সিঁথির প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি।
তবে সিঁথির এক স্বজন বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রার্থিতার বিষয়টি নিয়ে আমার সঙ্গে সিঁথির কথা হয়েছে। সিঁথি জানিয়েছেন, রাজনীতি তার অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে। এখন আগে দুই সন্তানকে মানুষ করতে চান। সন্তানরা বড় হলে এবং তারা চাইলে রাজনীতিতে আসবেন’।
ফলে শিখর ও সিঁথির মনোনয়ন এখনও নিশ্চিত না হলেও তাদেরকে সম্ভাব্য প্রার্থী ধরে নিয়েই মাঠে নেমেছেন দু’দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী-সমর্থকরা।
আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি ওয়াহহাব বলেন, ‘রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করেছি। আগামীতেও বড় বড় কাজ শুরু করতে যাচ্ছি। আর এলাকার উন্নয়ন কাজ আদায় করে আনার ক্ষমতাও রয়েছে আমার। এ কারণে আমার প্রত্যাশা, আমিই দলের মনোনয়ন পাবো’।
দলের অনেকের সঙ্গে তার দূরত্ব রয়েছে- এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে কারোর কোনো দূরত্ব নেই। আমি অভিনয়ে বিশ্বাসী নই, কাজে বিশ্বাসী’।
বিএনপির মনোনায়ন প্রত্যাশী কবীর মুরাদ বলেন, ‘দলের চরম দুঃসময়ে আট বছর মাগুরা জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। আন্দোলন করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছি। এখনও আমি দেড় ডজনেরও বেশি মামলার আসামি। এসব কারণে দল আমাকে মূল্যায়ন করবে’।
সৈয়দ মোকাদ্দেস আলী বলেন, ‘দলের জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে দলের দুঃসময়েও নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছি। বর্তমানে ক্ষমতাসীনদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে মাঠ পর্যায়ে দল গোছাচ্ছি। নিশ্চয়ই মনোনয়নের ক্ষেত্রে দল তা বিবেচনায় আনবে’।
ইকবাল আকতার খান কাফুর বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি ভোটারদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক থাকায় আমিই দলের মনোনয়নের দাবিদার’।
আহসান হাবিব কিশোর বলেন, ‘কর্পোরেট রাজনৈতিক নেতারা বিএনপিতে এসে দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। অথচ আমার মতো অনেকেই শত বাধার পরও মাঠে-ময়দানে বিএনপির রাজনীতি করছেন। এ কারণে মাঠের কর্মী হিসেবে আমি দলের মনোনয়নের দাবিদার। বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্নের একজন কর্মী হিসেবে দল অবশ্যই আমাকে মূল্যায়ন করবে’।
বিএনপির হরতাল-অবরোধ চলাকালে ২০১৫ সালে মাগুরার মঘির ঢালে পেট্রোল বোমা হামলায় পাঁচ শ্রমিক হত্যা মামলার আসামি মনোয়ার হোসেন খান সিঙ্গাপুর থেকে মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমি প্রতিহিংসার রাজনীতির শিকার। হয়েছেন। প্রতিহিংসার রাজনীতির কারণে আজ আমার পুরো পরিবার মামলায় জর্জরিত। তাই দল আমাকেই মূল্যায়ন করবে’।
তার দাবি, ‘মাঠ পর্যায়ে অসংখ্যা নেতাকর্মী-সমর্থক রয়েছেন- যারা আমার মনোনয়নের জন্য মুখিয়ে রয়েছেন। মনোনয়ন পেলে আমি এ আসনটি পুনরুদ্ধার করতে পারবো’।
অন্য দলগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাসান সিরাজ সুজা, জেলা জাসদের (বাদল-আম্বিয়া) সভাপতি এ টি এম মহব্বত আলী, জেলা গণফোরামের সভাপতি ডা. মিজানুর রহমান ও জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি অধ্যক্ষ কাজী ফিরোজের নাম শোনা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৭
এএসআর