আওয়ামী লীগ এবার নিজ দলীয় প্রার্থী চাইছে। কিন্তু বর্তমান সংসদ সংসদ সদস্যের দল ওয়ার্কার্স পার্টি ফের জোটগত ছাড় চায়, আসনটি চায় মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি ও জাসদও (ইনু)।
এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলের মনোনয়নে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হয়েছিলেন তিনি। এবারও প্রার্থী হতে চান।
আবার মনোনয়ন চেয়ে মাঠে কাজ করছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাতজন হেভিওয়েট নেতা। তারা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান, সাবেক প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য শহীদ স ম আলাউদ্দিনের মেয়ে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লায়লা পারভিন সেঁজুতি, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ কামাল শুভ্র, তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নূরুল হক, কলারোয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ স্বপন, জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক সরদার মুজিব ও কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম।
মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চান দলীয় চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের তথ্য উপদেষ্টা ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ দিদার বখত।
মাঠে রয়েছেন জাসদের (ইনু) কেন্দ্রীয় নেতা ওবায়দুস সুলতান বাবলুও।
বিএনপির একক প্রার্থী জেলার সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব সাংগঠনিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। যদিও একাধিক মামলার আসামি হওয়ায় তার নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে কিছুটা সংশয় রয়েছে।
ছাড় দিতে চায় না জামায়াতও। দলটির পক্ষে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ ইজ্জতউল্যাহ ২০ দলীয় জোটের প্রার্থিতা চান। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন না থাকায় এক্ষেত্রে জোট প্রধান বিএনপির ওপর নির্ভরশীল অথবা স্বতন্ত্র নির্বাচনের দিকে এগোতে হবে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা চান, শরিক কাউকে নয়, সাতক্ষীরা-১ আসনে দলের কাউকেই মনোনয়ন দেওয়া হোক। যদিও সেক্ষেত্রে বিপত্তি রয়েছে। কারণ, জোটগত নির্বাচনে এবারও ওয়ার্কার্স পার্টি যে ক’টি আসন ভাগে পাবে- সেগুলোর মধ্যে প্রার্থী মনোনয়নে দলটিতে এগিয়ে আছেন বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ। জাতীয় পার্টির সৈয়দ দিদার বখতও দলীয়ভাবে শক্ত প্রার্থী।
তাই সাতক্ষীরা-১ আসনে প্রার্থী মনোনয়নে অস্বস্তিতে রয়েছে আওয়ামী লীগ।
অন্যদিকে, বিএনপির একক প্রার্থী থাকলেও কোনোমতেই ছাড় দিতে চায় না জামায়াত। কারণ, এ আসনে শক্ত ঘাঁটি রয়েছে জামায়াতের। তাই বিএনপিও প্রার্থী মনোনয়নে রয়েছে চাপে।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘১৯৬২ সাল থেকেই আমি জনগণের রাজনীতি করছি। সংসদ সদস্য থাকাকালে তালা-কলারোয়ার পাশাপাশি সমগ্র সাতক্ষীরার উন্নয়নে আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। যার সুফল মানুষ এখনও ভোগ করছেন। এজন্য মনোনয়নের ব্যাপারে আমি বেশ আশাবাদী’।
জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক লায়লা পারভিন সেঁজুতি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার বাবা শহীদ স ম আলাউদ্দিন মৃত্যুর দিন পর্যন্ত জনগণের জন্য কাজ করেছেন। বাবার মতো আমিও কাজ করতে মনোনয়ন চাইছি’।
মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, ‘এমপি হওয়ার পর থেকে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করছি। এজন্য এবারও আমি মনোনয়ন পেতে আশাবাদী’।
সৈয়দ দিদার বখত বলেন, ‘জাতীয় পার্টি আমাকেই মনোনয়ন দেবে। কারণ, আমি ছাড়া দলের কোনো বিকল্প প্রার্থী নেই’।
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হাবিবুল ইসলাম হাবিব বলেন, ‘খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিলে আমি নিশ্চিত মনোনয়ন পাবো এবং এ আসনে নির্বাচনে অংশ নেবো। আর তিনি নির্বাচনে অংশ না নিলে আমিও নির্বাচন করবো না’।
জেলা জামায়াতের দফতর সম্পাদক মাওলানা আজিজুর রহমান জানান, দলীয় প্রার্থী হিসেবে অধ্যক্ষ ইজ্জতউল্লাহ মোটামুটি চূড়ান্ত।
সব মিলিয়ে সাতক্ষীরা-১ আসনে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া ১৪ দল বা মহাজোটের জন্য যেমন কঠিন হবে, তেমনি জামায়াতের কারণে চাপে পড়তে হবে বিএনপিকেও।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৭
এএসআর