ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

রাজশাহী-৩: ‘বহিরাগত’ প্রার্থী চাপে আ’লীগ-বিএনপি

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৮
রাজশাহী-৩: ‘বহিরাগত’ প্রার্থী চাপে আ’লীগ-বিএনপি আসনটি থেকে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান তারা

রাজশাহী: রাজশাহীর পবা ও মোহনপুর উপজেলা নিয়ে রাজশাহী-৩ আসন গঠিত। এ দুই উপজেলায় রয়েছে তিনটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সীমানা পুনঃনির্ধারণে রাজশাহীতে নতুন এই আসটি যুক্ত হয়।
 

পবা উপজেলার মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে বারনই নদী। আর মোহনপুরের সীমান্ত এলাকা হয়ে প্রবাহিত শিব নদ।

দু’টিতেই কেবল বর্ষাকালে পানি থাকে। আর শুষ্ক মৌসুমে শিব নদের বুকজুড়ে দেখা যায় মাঠের পর মাঠ সবুজ ধান। পবা ও মোহনপুরের রাজনীতিও এমনই।

রাজশাহী-৩ আসনটি জাতীয় সংসদের ৫৪ নম্বর আসন। এর আগের সব নির্বাচনে এ আসনের পবা উপজেলাটি যুক্ত ছিল রাজশাহী-২ আসনে। আর মোহনপুর উপজেলা যুক্ত ছিল বর্তমান রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সঙ্গে।  

২০০৮ সালে রাজশাহী সদর আসন থেকে আলাদা হওয়ার পর দুই মেয়াদ ধরেই আসনটি রয়েছে আওয়ামী লীগের দখলে। তবে মজার তথ্য হচ্ছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধান দুই দলের যে ডজন খানেক নেতা এই আসনে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক, তাদের বেশির ভাগই সংসদীয় এলাকায় অবস্থান করেন না! ফলে এই আসনটিকে বহিরাগতদের আসনও বলা হয়।  

আসছে একাদশ সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে তৃতীয় সংসদ সদস্য পাবে রাজশাহী-৩ আসন। সবশেষ ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত ১০ম সংসদ নির্বাচনে দেশে বেশিরভাগ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও রাজশাহী-৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের। এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লার সঙ্গে ভোটের লড়াই হয় বর্তমান সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনের। আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা মেরাজ উদ্দিন মোল্লা দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হলে বিদ্রোহী হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন দল মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে।

কিন্তু ভোটের মাঠে টিকতে না পেরে ধরাশায়ী হন। বিশাল ভোটের ব্যবধানে তাকে সরিয়ে এ আসনটি দখলে নেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আয়েন উদ্দিন। অথচ ২০০৮ সালে এ আসনে বিএনপির কবির হোসেনকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা মেরাজ উদ্দিন মোল্লা।  

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটি থেকে নির্বাচন করার স্বপ্ন দেখছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা। এরইমধ্যে আসনটিতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জাতীয় পার্টিও। তাই অনেক আগে থেকেই এখানে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বিভিন্ন কৌশলে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। পোস্টার, ব্যানার আর ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে পবা ও মোহনপুরের নির্বাচনী এলাকা। রাজনৈতিক বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ কৃষি ও বাণিজ্যিক সম্ভাবনার এই দুই উপজেলাকে ঘিরে সম্ভাব্য প্রার্থীরা ভোটারদের শোনাচ্ছেন নানা উন্নয়ন পরিকল্পনার কথা। ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। চাইছেন সমর্থন। দিচ্ছেন প্রতিশ্রুতিও।  

এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন ও সাবেক সংসদ সদস্য মেরাজ উদ্দিন মোল্লা ছাড়াও রয়েছেন ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান মানজাল, জেলা কৃষক লীগের সভাপতি রবিউল আলম বাবু, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য বেগম আখতার জাহান, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মর্জিনা পারভীন এবং পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা ইয়াছিন আলী।  

তবে সর্বশেষ গত ১৪ সেপ্টেম্বর আয়েনের অনুরোধে সাড়া দিয়েই প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি শেখ হাসিনা পবায় জনসভা করে যান। প্রধানমন্ত্রীর ওই জনসভার পর আয়েনের অবস্থান আরও শক্ত হয়েছে বলেও মনে করছেন অনেকে।

ছাত্রলীগ দিয়ে রাজনৈতিক জীবন শুরু করা সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন বলেন, আওয়ামী লীগ বড় দল এখানে একাধিক প্রার্থী থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আর এখানে যারা মনোনয়ন প্রত্যাশী তারা সবাই যোগ্য। এর মধ্যে দলীয় সভানেত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন আমরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী যারা রয়েছি প্রত্যেকেই তার পক্ষে কাজ করবো।  

অপরদিকে, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বেগম আক্তার জাহান বলেন, আসনটি ২০০৮ সালে নতুন হয়েছে। তখন থেকেই প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চেয়েছি। ২০১৪ সালেও চেয়েছিলাম। আগামী নির্বাচনেও মনোনয়ন চাইবো।

অপরদিকে এ আসনে বিএনপি থেকেও মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন বেশ কয়েকজন নেতা। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় এখন যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকত, রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন, দলের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টু, যুগ্ম-সম্পাদক রায়হানুল আলম রায়হান। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে শফিকুল হক মিলন ও মতিউর রহমান মন্টুর নাম। এ আসনে ২০০৮ সালে নির্বাচন করেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট কবির হোসেন।

দলের নেতাকর্মীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় বিএনপির নেতাদের মধ্যে শক্তিশালী প্রার্থী না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে শফিকুল হক মিলন নিজের জায়গা অনেকটা পাকাপোক্ত করেছেন। আবার হাল ছাড়তে রাজি নন এক সময়ের ছাত্রনেতা মতিউর রহমান মন্টুও। তিনিও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এ আসনে প্রার্থী হওয়ার জন্য।

তবে কর্মী সমর্থকদের দাবি, ২০১৩ সালে রাজশাহী সিটি করেপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে শফিকুল হক মিলন প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সে সময় বিএনপি হাইকমান্ডের নির্দেশে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে যান। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাকে রাজশাহী-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়ন দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। সেই আশ্বাসে তিনি নির্বাচনের জন্য মাঠ গুছিয়ে এনেছেন। তখন থেকেই গণসংযোগ চালাচ্ছেন।

জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছি। রাজশাহীর মানুষদের জন্য রাজনীতি করতে একের পর এক অত্যাচার-জুলুমের মুখে পড়েছি। তবুও জিয়ার আদর্শ ধারণ করে জনগণের সেবা করার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। এ কারণেই নির্বাচনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত রেখেছি। আগামী নির্বাচনে পবা-মোহনপুর আসনে দল তাকে মনোনয়ন দেবে বলেও বিশ্বাস করেন নগর বিএনপির এই নেতা।  

এদিকে, বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ছাড়াও এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির রাজশাহী মহানগর সভাপতি শাহাবুদ্দিন বাচ্চু। তিনি জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি থাকাকালে পবা ও মোহনপুরে সংগঠনকে শক্তিশালী করেছেন। তার পুরস্কার হিসেবে পার্টি প্রধান এইচএম এরশাদ এ আসনে তাকে আগাম মনোনয়নের ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন।  

এদিকে আসনটিতে ঘাপটি মেরে আছে ভোটের রাজনীতিতে বড়  ‘ফ্যাক্টর’ হয়ে দাঁড়ানো জামায়াত। এখানে দলটির অনেক ভোটার রয়েছেন, যা ভোটের ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে। জামায়াত প্রার্থী না দিলেও তাদের ভোটের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হবে বড় দুই দলকে। নবম সংসদ নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশ নিলেও এখানে বিএনপিকে ছাড় দেয়নি জামায়াত। এতে করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মেরাজ উদ্দিন মোল্লার জয় নিশ্চিত হয়। সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পবায় জামায়াতের প্রার্থী জয়লাভ করেন। এছাড়া পবা ও মোহনপুরে দলটি স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে পাঁচটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করেছে। তবে এখানকার উপজেলা চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা মোকবুল হুসাইনের মৃত্যুর পর সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো উপযুক্ত কোন প্রার্থী নেই জামায়াতের।

রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের এবার মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৫৭ হাজার ১৯২। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭৮ হাজার ১৯২ এবং নারী ১ লাখ ৭৯ হাজার। মোট ভোটারের মধ্যে পবা উপজেলার ভোটার ২ লাখ ২৮ হাজার ১ জন এবং মোহনপুর উপজেলায় ১ লাখ ২৯ হাজার ১৯১ জন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৮
এসএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।