রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মনিরুজ্জামান মনি বলেন, রাজশাহী অঞ্চলটি অবহেলিত। এই অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতিকল্পে ইশতেহারে নতুন পলিসি চাই।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আমজাদ হোসেন বলেন, ইশতেহার যেন কেবল ‘মুখের বুলি’ না হয়। এ দেশের সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সমন্বয় রেখে ইশতেহার দিতে হবে। এটা যেন শুধু কাগজে-কলমে থেকে না যায়। এর যেন যথাযথ প্রয়োগ হয়। দেশ চলে সাধারণ জনগণের করের টাকায়। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার সঙ্গে মিল রেখে যেন ইশতেহার ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি গণতান্ত্রিক পরিবেশে সাধারণ মানুষ যেন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, সে নিশ্চয়তা থাকতে হবে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বরেন্দ্র উন্নয়ন প্রচেষ্টার নির্বাহী পরিচালক ফয়জুল্লাহ চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অর্থাৎ গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সুশাসন-এসবের প্রতি প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার থাকতে হবে। আমাদের দেশে বিগত বছরগুলোতে যে উন্নয়ন হয়েছে তার ফলে এক ধরনের ধনী-গরিব এবং শহর-নগর বৈষম্য লক্ষ করা যাচ্ছে। এই বৈষম্যগুলো দূরীকরণে রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি অবশ্যই থাকতে হবে। উন্নয়নের সুবিধা যেন মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে না চলে যায় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং তারা যেন স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করতে পারে সেদিকেও নজর দিতে হবে।
রাজশাহী শহর রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, সংবিধান প্রদত্ত মানুষের মৌলিক অধিকার অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার সঠিক বাস্তবায়ন হলে জনগণের জন্য তা অনেক বড় পাওয়া। মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতের বিষয়টি যেন রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে গুরুত্ব পায়।
রাজশাহী মহিলা পরিষদের সভাপতি কল্পনা রায় বলেন, বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নে উন্নতি সাধনের পাশাপাশি নতুন নতুন সমস্যারও সৃষ্টি হয়েছে। এসব সমস্যা সমাধান করে নারীর ক্ষমতায়ন আরও ত্বরান্বিত করতে নির্বাচনী ইশতেহারে নিশ্চয়তা থাকতে হবে। রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে নারী-পুরুষের সমঅধিকারসহ সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র ও সমাজ গড়ে তোলার অঙ্গীকার থাকতে হবে।
বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়ক কামার উল্লাহ সরকার বলেন, একজন সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে আমি চাইবো, রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে যেন বাঙালি ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। ইশতেহার হতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উপর ভিত্তি করে। এর পাশাপাশি সর্বজনীন শিক্ষা, মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, কর্মসংস্থান বিষয়গুলোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। তাহলে আমরা একটি গ্রহণযোগ্য ইশতেহার পাবো।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যাশা গড়ে উঠেছে তরুণ সমাজের। স্বল্প কথায় বলতে গেলে, দেশ চলছে ঠিকই, কিন্তু কোথায় সেই ছন্দময় গতি? দেশটা কেন্দ্রীভূত হয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও সম্পদের সুষম বন্টন দরকার। দেশ যেকোন প্রয়োজনেই ঢাকামুখী। দেশের একদিকে উন্নয়ন ত্বরান্বিত হচ্ছে কিন্তু অন্যদিক অন্ধকারেই থেকে যাচ্ছে। এই বিপুল জনশক্তিকে অন্ধকারে রেখে উন্নয়ন সম্ভব না।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রাশেদ রিমন বলেন, একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি চাইবো প্রতিটি রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় রাষ্ট্র পরিচালনার অঙ্গীকার থাকবে। মৌলবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের অঙ্গীকার থাকবে। শিক্ষাখাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি আশা করছি। দ্রুত শিল্পায়নের মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থানের নিশ্চিয়তা থাকবে। মত প্রকাশের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকবে। এছাড়া সন্ত্রাস-খুন-গুম-মাদকের বিরুদ্ধে শক্তিশালী পদক্ষেপের অঙ্গীকার থাকবে।
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মমুখী শিক্ষার দিকে নজর দেওয়া জরুরি। কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে অল্প সময়েই দক্ষ এবং স্বাবলম্বী জনসম্পদ গড়ে উঠবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরিতে তরুণদের কথা মাথায় রাখতে হবে। তাদের যথাযথ কর্মের নিশ্চয়তার ব্যবস্থার বিষয়ে ভাবতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৮
এসএস/আরআর