এ আসনে প্রার্থী রয়েছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা মাহমুদুর রহমান। আর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে রয়েছেন জেলা জাতীয় পার্টির (জাপা) সভাপতি বর্তমান এমপি শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক এমপি জামায়াত নেতা মাওলানা শাহাদাতুজ্জামান, ইসলামী আন্দোলনের জামাল উদ্দিন, মুসলিম লীগের শফিকুল ইসলাম।
তবে স্থানীয় ভোটারদের ভাষ্য, মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মান্নার ধানের শীষ ও শরিফুল ইসলাম জিন্নাহর লাঙল প্রতীকের মধ্যে। এলাকায় চাউর হচ্ছে, জোটের সঙ্গে সমঝোতায় শেষ পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবেন তিনি। নইলে মান্নার গলার কাটা হতে পারেন যুদ্ধাপরাধের অভিযুক্ত সদ্য নিবন্ধন হারানো জামায়াতের এই নেতা।
শিবগঞ্জের বিভিন্ন স্টলে চায়ের আড্ডা, হাটাবাজারসহ নানা এলাকা ঘুরে স্থানীয় নেতাকর্মী ও ভোটারদের সঙ্গে কথা হলে এমনটাই জানা গেছে।
ভোটের আলাপচারিতায় স্থানীয় ভোটার নঈমুদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, শরিফুল ইসলাম জিন্নাহর ক্যাপাসিটি আছে। ক্যাপাসিটি করে ২০১৪ সালে তিনি পার্টির মনোনয়ন নেন। এমপিও নির্বাচিত হন। তবে এবার ভোটে জিততে কি ক্যাপাসিটি করবেন সেটা বলা মুশকিল। কারণ ২০১৪ সালের আগে নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি ভোটে জিততে পারেননি। এছাড়া জামায়াত প্রার্থী সরে দাঁড়ালে জিন্নাহর ভোটে জয়লাভ করা অত্যন্ত কঠিন পড়বে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীর সঙ্গে লড়াই করে জামায়াতের মাওলানা শাহাদাতুজ্জমান এমপি নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ সালে এ আসনে এমপি হন বিএনপির একেএম হাফিজুর রহমান। ২০০১ সালে বিএনপির মরহুম রেজাউল বারি ডিনা ও ২০০৮ সাল একেএম হাফিজুর রহমান বিএনপি থেকে ফের এমপি হন। ২০১৪ সালে এমপি নির্বাচিত হন জাপা নেতা শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ।
অবশ্য এর আগে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ থেকে এ আসন ছেড়ে দেওয়া হলে বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে হেরে যান শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ।
অপরদিকে মাহমুদুর রহমান মান্না ১৯৯১ সালে এ আসনে জনতা মুক্তি পার্টি থেকে কাস্তে প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে ২ হাজার ১৮০ ভোট পান। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে ভোট করে পান ১৯ হাজার ৮৭১ ভোট। ফের ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচন করে ৪৭ হাজার ৮১৮ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থান করে নেন।
তবে এবারের নির্বাচনে জামায়াত প্রার্থী সরে দাঁড়ালে বিএনপির ‘ঘাটিখ্যাত’ এ আসন থেকে অত্যন্ত সহজেই মান্না জিতে আসতে পারবেন বলে মনে করেন স্থানীয় ভোটাররা।
সিরাজুল ইসলাম জনি বাংলানিউজকে বলেন, এ আসনে ভোটের হিসেব অত্যন্ত সহজ। আসনটি বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘ সময় এ আসন থেকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী জয়যুক্ত হয়েছেন। জোটের কারণে জামায়াতের প্রার্থী সরে যাবেন বলে শুনেছি। এ হিসেবে বিএনপি ও জামায়াতের মিলিত ভোট পাবেন ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী মাহমুদুর রহমান মান্না।
প্রায় একই কথা বলেন স্থানীয় ভোটার সাইফুল ইসলামও। তার সঙ্গে আলাপচারিতায় যোগ দিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিএনপির হুইপ মরহুম রেজাউল বারী ডিনারের সময় শিবগঞ্জে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। এ কারণে ধানের শীষ প্রতীক পাওয়া ঐক্যফ্রন্ট নেতা মাহমুদুর মান্নার এবারের নির্বাচনে জয়লাভ করার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
এদিক থেকে জাপা প্রার্থী বর্তমান এমপি শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ বেশ খানিকটা পিছিয়ে রয়েছেন বলেও মত দেন ভোটাররা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, এ আসনে সাংগঠনিকভাবে জাতীয় পার্টি তুলনামূলক তেমন অবস্থান গড়ে তুলতে পারেনি। আর তিনি মহাজোটের প্রার্থী হলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার পক্ষে মাঠে কি ধরনের ভূমিকা রাখবেন সেটাও বলা মুশকিল।
অবশ্য এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বগুড়া-২ অর্থাৎ শিবগঞ্জে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৯৬ হাজার ৪৮৩ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৭৬৫ জন পুরুষ ও ১ লাখ ৪৮ হাজার ৭১৮ জন নারী।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৮
এমবিএইচ/এমএ