ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

ভাঙন আর বিদ্যুৎ সমস্যা থেকে মুক্তি চান হাতিয়ার ভোটাররা

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৮
ভাঙন আর বিদ্যুৎ সমস্যা থেকে মুক্তি চান হাতিয়ার ভোটাররা হাতিয়ার ওছখালী এলাকা

হাতিয়া (নোয়াখালী) থেকে: নোয়াখালীর দক্ষিণে মেঘনার মোহনায় বঙ্গোপসাগরে কয়েকটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত হাতিয়া উপজেলা।প্রাকৃতিকভাবে নয়নাভিরাম হলেও নানা সমস্যায় জর্জরিত ২ হাজার ১০০ বর্গ কিলোমিটারের উপজেলাটি। এখানকার বাসিন্দাদের বড় আক্ষেপ ভাঙন ও বিদ্যুৎ সমস্যা। তাদের মতে, সারাদেশের উন্নয়ন-অর্জন থেকে পিছিয়ে দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া। শিক্ষা, যোগাযোগ, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও কর্মসংস্থানেও পিছিয়ে এখানকার বাসিন্দারা। বঙ্গোপসাগরের দ্বীপটিকে পর্যটন এলাকা বলা হলেও কোনো উদ্যোগ নেই পর্যটন করপোরেশনের। বিশেষ করে বিদ্যুতের সমস্যার কারণে সর্বক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকতে হচ্ছে ৭ লাখ হাতিয়াবাসীকে।

সারাদেশের মতো এবারের নির্বাচনে হাতিয়াবাসীর দ্বারে দ্বারেও ঘুরে যাচ্ছেন আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীরা। ভোট চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বরাবরের মতোই দিয়ে যাচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি অঙ্গীকার।

ভোটাররাও কোনো কোনো প্রার্থীর সঙ্গে নিজেদের চাওয়া-পাওয়ার কথা বলে নিচ্ছেন। বিশেষ করে বলছেন বিদ্যুতের সমস্যার স্থায়ী সমাধান ও ভাঙন রোধের কথা। ভোটাররা বলছেন, যে প্রার্থী প্রধানত এ দুই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে সক্ষম হবেন বলে মনে হবে, তাকেই ভোট দেবেন তারা।

আলাপ হচ্ছিলো হাতিয়ার ওছখালী এলাকার বাসিন্দা ফরহাদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের মেইন সমস্যা ভাঙ্গন। বিদ্যুৎ থাকে না। বিদ্যুৎ সকালে দেয়, ১২টায় চলে যায়। এরপর গ্যাপ নেয়। আবার রাতে ৩ ঘণ্টা থাকে। আবার চলে যায়। ’

হাতিয়ার প্রধান ভাঙনকবলিত এলাকার মধ্যে ফন্নি, চানন্দী, সুখ চর, নল ছিড়া, স্বরেশ্বর, ক্যারিং চর, কাজীর বাজার, বয়ার চর, নিজাম দ্বীপ ও বুড়ির চর উল্লেখযোগ্য। হাতিয়া পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবুল বাসার এ বিষয়ে বলেন, ‘হাতিয়ার চারদিকে ভাঙ্গে। বাড়ি-ঘর ভাঙ্গি যায়, পানিত্তে চলি যায়। যে প্রার্থী ব্লক দিবো চারিপাশে, দ্যাশে (হাতিয়া) সবসুময় বিদ্যুৎ দিবো, তারেই ভোট দিমু। ’
হাতিয়ার ওছখালী এলাকা
হাতিয়া এ এম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শরিফুল ইসলামের সঙ্গে কথা হচ্ছিলো উপজেলার সমস্যা নিয়ে। তিনি বলেন, ‘হাতিয়ায় নানা সমস্যা। ভাঙন গিলে খাচ্ছে বাপ-দাদার ভিটে-মাটি। অন্য দিকে বিদ্যুতের অভাবে বিনিয়োগ হচ্ছে না। ফলে কর্মসংস্থানের কোনো ব্যবস্থা নেই। প্রতিবছর সাগরের নোনা জ্বলে ফসলি জমি তলিয়ে যায়। এর ফলে অনাবাদি থেকে যাচ্ছে ফসলি জমি। আর যেগুলোতে ফলন হচ্ছে তাও চাহিদার তুলনায় অনেক কম। বিদ্যুৎ না থাকায় বাড়তি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। ফলে মানুষ হাতিয়া ছেড়ে পাড়ি দিচ্ছে অন্যত্র। বিদ্যুতের অভাবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য,  কৃষি, পরিবহন, ব্যাংকিং ও ব্যবসা সর্বক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েছে হাতিয়াবাসী। এছাড়া মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে পারাপারের সমস্যা, সু-চিকিৎসার অভাব, পরিবহন সমস্যাতো রয়েছেই। ’

শরিফুলের মতে, এসব সমস্যার সমাধান হলে নিঝুম দ্বীপসহ পুরো হাতিয়াকে পর্যটন এলাকা হিসেবে দেশ ও বিশ্বদরবারে পরিচিত করানো যাবে। এমনকি পর্যটন দিয়েই হাতিয়ার বেকার সমস্যা নিরসনে ভূমিকা রাখা যাবে।

৭ সাত নং ওয়ার্ডের ভোটার মহব্বত আলী বলেন, ‘পর্যটন খাত ও সড়কের উন্নয়ন করা দরকার। বেকার যুবকেরা যেন কাজ কর্ম করতে পারি। লাইট চার্জ দিতে পাঁচ টাকা লাগে। বিদ্যুৎ দিলে আমাদের সব সমস্যার সমাধান হবে। আমরা দল বুঝি না, দ্যাশের উন্নয়ন বুঝি। ’

হাতিয়া বা নোয়াখালী-৬ আসনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে রয়েছেন নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদৌস ও ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ ফজলুল আজিম। তারা বিদ্যুৎ সমস্যা, ভাঙন রোধ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ হাতিয়ার সার্বিক উন্নয়নে প্রতিশ্রুতি দিয়ে চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী মাঠ।

বাংলাদেশ সময়: ০০২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৮
এমআইএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।